আজিজুর রহমান, চৌগাছা (যশোর)
স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে এমন কোনো জালিয়াতি নেই যা তিনি করেননি। সার্টিফিকেট জালিয়াতি, নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন জাল, রেজুলেশনে ঘষামাজা করে পদের নাম পরিবর্তন, ভুয়া নিয়োগপত্র, তথ্য গোপন করে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারভুক্ত (এমপিওভুক্ত) করানো—আরও যা যা লাগে তিনি করেছেন।
যশোরের চৌগাছায় এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওই প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সকালে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগ তদন্তে উপজেলার জেএইচডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল জালিয়াতি করে স্ত্রী মোছাম্মাৎ খাদিজা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি সুমন মণ্ডল নামেও একজনকে একই কায়দায় নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে বলেছেন—মে ২০২২ সালের এমপিও সিটে তাঁরা খাদিজা খাতুন ও সুমন মণ্ডলের নাম দেখেছেন। এর আগে কখনো তাঁদের বিদ্যালয়ে দেখেননি। শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তাঁদের স্বাক্ষর নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, ‘নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে আমার অগোচরে করা হয়েছে। আমার কাছে মে-২০২২ মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করতে গেলে প্রথম নজরে আসে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনি নিজের স্ত্রী এবং অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং এমপিওভুক্তি করিয়েছেন। আজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তাঁকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া দুই শিক্ষককের নাম বাদ দিয়ে বেতন বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে।’
এর আগে মাঠচাকলা গ্রামের জনৈক মামুন কবীর তথ্যপ্রমাণসহ যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে ওই প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন। আবেদন ও তথ্যপ্রমাণের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী খাদিজা খাতুন ১৯৯২ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২য় বিভাগে দাখিল পাস করেন, ১৯৯৫ সালে যশোর বোর্ড থেকে তিনি ২য় বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পাস কোর্স) করেন ২০০৫ সালে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে করেন বিএড।
অথচ ২০০২ সালের ২৪ ডিসেম্বর এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেন মর্মে যোগদানপত্র রয়েছে। নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্রে খাদিজা খাতুনের বাবার বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার সময়ে খাদিজা খাতুন নামে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমার স্বাক্ষরে যে নিয়োগপত্র দেখানো হয়েছে তা ভুয়া। এ বিষয়ে আমাকে যেখানে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হবে আমি প্রস্তুত আছি।’
২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দেওয়া বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবীর স্বাক্ষরিত শিক্ষক/কর্মচারী তথ্য ছকে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে নন-ইনডেক্সধারী (নন এমপিওভুক্ত) শিক্ষক বলে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে খাদিজা খাতুনকে ২০০১ সালে বিএ পাস দেখিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের তারিখ দেখানো হয় ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি। আরও দেখানো হয়েছে, খাদিজা খাতুন এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯২ সালে।
২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের স্বাক্ষরিত আরেকটি তথ্য ছকে খাদিজা খাতুনকে কোনো বিষয় উল্লেখ না করে শুধু সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর যোগ দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে। এই তথ্য ছকেও খাদিজাকে ২০০১ সালে বিএ পাস এবং ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস হিসেবে দেখানো হয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসের এমপিও সিটে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের নিয়োগ দেখিয়ে খাদিজা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। গত মে এমপিও সিটে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে এমপিও ইনডেক্স দেখানো হয়েছে এন-৫৬৮২১৯৭২। অথচ খাদিজা খাতুন বিদ্যালয়ে কখনো পাঠদান করেননি।
একইভাবে বিদ্যালয়ে কখনো পাঠদান না করা জনৈক সুমন মণ্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর মে মাসের এমপিও সিটে ইনডেক্স দেখানো হয়েছে এন-৫৬৮২১৯৭৩। তাঁকে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক দেখানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এই দুজনের কাউকেই তাঁরা চেনেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাঁদের স্বাক্ষরও নেই। সভাপতির উপস্থিতিতে আজ বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতা দেখে শিক্ষকদের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত হয়েছেন এ প্রতিবেদক।
বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরেক মজার তথ্য। ২০১৫ সালে খাদিজার নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওই নিয়োগ বোর্ডের সভা উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনুষ্ঠিত হয় বলে দেখানো হয়েছে। সেখানে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াহেদুজ্জামান, অভিভাবক সদস্য জমশের আলী এবং প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
সেই রেজুলেশনের প্রথম পাতায় চৌগাছার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হলেও অপর পাতায় স্থান দেখানো হয়েছে যশোর জেলা স্কুল, যশোর। এই পাতায় ঘষামাজা করে লেখা ‘মোছাম্মাৎ খাদিজা খাতুন, স্বামী মো. শাহাজাহান কবীর প্রথম হওয়ায় তাঁকে সহকারী শিক্ষক সামাঃ বিঃ (ঘষামাজা করে লেখা) পদে নিয়োগের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদকে সুপারিশ করা হলো’।
এসব বিষয়ে জানতে খাদিজা খাতুনের মোবাইলে নম্বরে কল করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি প্রথমে বাড়ি কোথায় জানতে চান। ঠিকানা জানিয়ে এবিসিডি স্কুলে ২০০২ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। আপনার কি এমপিওভুক্তি হয়েছে, এ প্রশ্নে বলেন, না। ২০১৫ সালে ফের একই স্কুলে নিয়োগ পেয়েছেন? এ প্রশ্ন করার পরই খাদিজা চুপ হয়ে যান। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খাদিজা খাতুনের স্বামী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের দুটি মোবাইল নম্বরে প্রথমে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দুটি নম্বরেই একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করে তদবির করার চেষ্টা করেন।
ফোনে না পেয়ে এ প্রতিবেদক আজ রোববার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা চলছে। বিদ্যালয় খোলার আগেই প্রধান শিক্ষক তাঁর অফিস খুলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলা হবে। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জালিয়াতি সম্পর্কিত সকল সংবাদ জানতে - এখানে ক্লিক করুন
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। পরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে ৮ম ও দশম শ্রেণির সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।
স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে এমন কোনো জালিয়াতি নেই যা তিনি করেননি। সার্টিফিকেট জালিয়াতি, নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন জাল, রেজুলেশনে ঘষামাজা করে পদের নাম পরিবর্তন, ভুয়া নিয়োগপত্র, তথ্য গোপন করে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারভুক্ত (এমপিওভুক্ত) করানো—আরও যা যা লাগে তিনি করেছেন।
যশোরের চৌগাছায় এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওই প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সকালে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগ তদন্তে উপজেলার জেএইচডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল জালিয়াতি করে স্ত্রী মোছাম্মাৎ খাদিজা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি সুমন মণ্ডল নামেও একজনকে একই কায়দায় নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে বলেছেন—মে ২০২২ সালের এমপিও সিটে তাঁরা খাদিজা খাতুন ও সুমন মণ্ডলের নাম দেখেছেন। এর আগে কখনো তাঁদের বিদ্যালয়ে দেখেননি। শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তাঁদের স্বাক্ষর নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, ‘নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে আমার অগোচরে করা হয়েছে। আমার কাছে মে-২০২২ মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করতে গেলে প্রথম নজরে আসে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনি নিজের স্ত্রী এবং অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং এমপিওভুক্তি করিয়েছেন। আজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তাঁকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া দুই শিক্ষককের নাম বাদ দিয়ে বেতন বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে।’
এর আগে মাঠচাকলা গ্রামের জনৈক মামুন কবীর তথ্যপ্রমাণসহ যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে ওই প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন। আবেদন ও তথ্যপ্রমাণের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী খাদিজা খাতুন ১৯৯২ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২য় বিভাগে দাখিল পাস করেন, ১৯৯৫ সালে যশোর বোর্ড থেকে তিনি ২য় বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পাস কোর্স) করেন ২০০৫ সালে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে করেন বিএড।
অথচ ২০০২ সালের ২৪ ডিসেম্বর এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেন মর্মে যোগদানপত্র রয়েছে। নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্রে খাদিজা খাতুনের বাবার বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার সময়ে খাদিজা খাতুন নামে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমার স্বাক্ষরে যে নিয়োগপত্র দেখানো হয়েছে তা ভুয়া। এ বিষয়ে আমাকে যেখানে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হবে আমি প্রস্তুত আছি।’
২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দেওয়া বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবীর স্বাক্ষরিত শিক্ষক/কর্মচারী তথ্য ছকে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে নন-ইনডেক্সধারী (নন এমপিওভুক্ত) শিক্ষক বলে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে খাদিজা খাতুনকে ২০০১ সালে বিএ পাস দেখিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের তারিখ দেখানো হয় ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি। আরও দেখানো হয়েছে, খাদিজা খাতুন এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯২ সালে।
২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের স্বাক্ষরিত আরেকটি তথ্য ছকে খাদিজা খাতুনকে কোনো বিষয় উল্লেখ না করে শুধু সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর যোগ দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে। এই তথ্য ছকেও খাদিজাকে ২০০১ সালে বিএ পাস এবং ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস হিসেবে দেখানো হয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসের এমপিও সিটে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের নিয়োগ দেখিয়ে খাদিজা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। গত মে এমপিও সিটে খাদিজা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে এমপিও ইনডেক্স দেখানো হয়েছে এন-৫৬৮২১৯৭২। অথচ খাদিজা খাতুন বিদ্যালয়ে কখনো পাঠদান করেননি।
একইভাবে বিদ্যালয়ে কখনো পাঠদান না করা জনৈক সুমন মণ্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর মে মাসের এমপিও সিটে ইনডেক্স দেখানো হয়েছে এন-৫৬৮২১৯৭৩। তাঁকে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক দেখানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এই দুজনের কাউকেই তাঁরা চেনেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাঁদের স্বাক্ষরও নেই। সভাপতির উপস্থিতিতে আজ বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতা দেখে শিক্ষকদের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত হয়েছেন এ প্রতিবেদক।
বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরেক মজার তথ্য। ২০১৫ সালে খাদিজার নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওই নিয়োগ বোর্ডের সভা উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনুষ্ঠিত হয় বলে দেখানো হয়েছে। সেখানে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াহেদুজ্জামান, অভিভাবক সদস্য জমশের আলী এবং প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
সেই রেজুলেশনের প্রথম পাতায় চৌগাছার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হলেও অপর পাতায় স্থান দেখানো হয়েছে যশোর জেলা স্কুল, যশোর। এই পাতায় ঘষামাজা করে লেখা ‘মোছাম্মাৎ খাদিজা খাতুন, স্বামী মো. শাহাজাহান কবীর প্রথম হওয়ায় তাঁকে সহকারী শিক্ষক সামাঃ বিঃ (ঘষামাজা করে লেখা) পদে নিয়োগের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদকে সুপারিশ করা হলো’।
এসব বিষয়ে জানতে খাদিজা খাতুনের মোবাইলে নম্বরে কল করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি প্রথমে বাড়ি কোথায় জানতে চান। ঠিকানা জানিয়ে এবিসিডি স্কুলে ২০০২ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। আপনার কি এমপিওভুক্তি হয়েছে, এ প্রশ্নে বলেন, না। ২০১৫ সালে ফের একই স্কুলে নিয়োগ পেয়েছেন? এ প্রশ্ন করার পরই খাদিজা চুপ হয়ে যান। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খাদিজা খাতুনের স্বামী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের দুটি মোবাইল নম্বরে প্রথমে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দুটি নম্বরেই একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করে তদবির করার চেষ্টা করেন।
ফোনে না পেয়ে এ প্রতিবেদক আজ রোববার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা চলছে। বিদ্যালয় খোলার আগেই প্রধান শিক্ষক তাঁর অফিস খুলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলা হবে। অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জালিয়াতি সম্পর্কিত সকল সংবাদ জানতে - এখানে ক্লিক করুন
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান কবীরের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। পরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে ৮ম ও দশম শ্রেণির সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
৮ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
৮ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
৮ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১২ দিন আগে