জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
নিজেরা ব্যাংক মালিক ও উদ্যোক্তা। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের বড় গ্রাহকও তাঁরা। সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণ নিচ্ছেন একে অন্যের ব্যাংক থেকে। ছাড়ছেন না নিজ ব্যাংককেও। এভাবে নামে–বেনামে গ্রাহকের আমানত পকেটে পুরতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যাংকের পরিচালকেরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদন বলছে, পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে গত সাত বছরে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন পরিচালকেরা। সবগুলো ব্যাংক থেকে গত মার্চ পর্যন্ত শুধু পরিচালকেরাই নিয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১১ শতাংশ।
পরিচালকদের দেওয়া ঋণের শীর্ষে থাকা ১৬ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। এর বাইরেও প্রথম প্রজন্মের সোনালী ব্যাংক থেকে শুরু করে হালের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকসহ কমবেশি প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালকেরাই ঋণ নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন।
ব্যাংক পরিচালকদের নেওয়া ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার কোটি টাকা। অথচ পরবর্তী সাত বছরেই তা বেড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ বিতরণ ও তার ব্যবহারে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই পরিচালকেরা ব্যবসায়ী, তাঁরাই আবার ব্যাংকের উদ্যোক্তা।
তাঁরা ঋণ নেন ও খেলাপি হন এবং আবার ঋণ নেন। এসব বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। এটা ব্যাংক ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ ও খেলাপির বিষয়ে নজর দিচ্ছে না।
নিজেদের ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আছে আইনে। এ জন্য পরিচালকেরা অন্য ব্যাংককে টার্গেট করে কাঙ্ক্ষিত ঋণ বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হলেও, বাকি টাকা অন্য ব্যাংক থেকে নিয়েছেন তাঁরা। পরিচালকেরা ব্যাংকের টাকা যে হারে নিয়েছেন, সে তুলনায় পরিশোধের চিত্র খুবই হতাশাজনক। তবে তাঁরা সামান্য টাকা ফেরত দিয়ে খেলাপি না দেখানোর জন্য কৌশলে ঋণ পুনঃ তফসিল করে রাখেন। তারপরও পরিচালকদের প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
ব্যাংক পরিচালকদের ভাগাভাগির ঋণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকেরা যোগসাজশে ঋণ ভাগাভাগি করছেন। এতে নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বাধাটা কার্যকর থাকছে না। আইন থাকার পরেও পরিচালকেরা ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিশোধ করছেন না। এতে স্পষ্ট অনুমান করা যায়, দেশের আইনের চেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক পরিচালকেরা। তাঁদের হাতে ঋণ কুক্ষিগত থাকায় অন্যরা ঋণ পাচ্ছেন না। এতে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এর সমাধান হতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।পরিচালকদের ১৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আব্দুল জব্বার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণ যথাযথ নিয়ম মেনে দেওয়া হয়। তাঁদের খেলাপিও একেবারে কম। আমাদের ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের অবস্থা ভালো। সামনে আরও ভালো করতে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করতে সহযোগিতা করেন।’
পরিচালকদের ঋণ দেওয়া ক্ষেত্রে শীর্ষ ১৬-এর মধ্যে আছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালকদের ঋণ ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
পরিচালকদের দেওয়া ঋণের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ খাত আগের থেকে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। পাশাপাশি খেলাপি বেড়েছে। এখানে পরিচালকদের ঋণকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। মূলত ব্যাংকঋণের বর্তমান যে অবস্থা চলমান, সে ক্ষেত্রে শুধু পরিচালকেরা নন, সবকিছুর সঙ্গে অর্থনীতি ও রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে।’
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা করে। আর ৭ হাজার কোটি টাকা করে ঋণ দিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক। পরিচালকদের ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং সাউথইস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া পরিচালকেরা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ইস্টার্ণ ব্যাংক থেকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮১ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে পরিচালকেরা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ঢাকা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। পরিচালকেরা ব্যাংক খাতের উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী চলছে।’
আর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফজাল করিম বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে যাচাই-বাছাই করেই ঋণ বিতরণ করা হয়। সে ক্ষেত্রে পরিচালকদের ক্ষেত্রেও ঋণ পেতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ঋণ পাওয়া তো দোষের কিছু না। ব্যাংক কোম্পানি আইনে নিয়মের বিষয়ে বলা রয়েছে।’
প্রাপ্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অন্য ব্যাংকের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকেরা। তাঁরা নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১৩০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ ৮৯ কোটি টাকা এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ ৬০ কোটি। এ ছাড়া পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালকদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের মোট ঋণ ৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকেরাই নিয়েছেন ৭১৫ কোটি টাকা। আর নিজ ব্যাংকের পরিচালকেরা নিয়েছেন ২২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক পরিচালকদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কোনো বাধা নেই। ঋণ না পেলে তাঁদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। আর দেশের নাগরিক হিসেবে তো ঋণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাঁরা ব্যবসা ভালো চালাতে পারলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে। সরকার রাজস্ব পাবে।’
ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারায় সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতে পারেন না। নিয়ম মেনেই ঋণ নিতে হয়। তবে কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে নিজস্ব ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, তবে আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’
কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিচালকদের ঋণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক, যোগসাজশ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না অধিকাংশ ব্যাংক। আবার কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রহ দেখালেও সংশ্লিষ্ট পরিচালক আদালতে যান। অপরদিকে বেশির ভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় জানার পরেও ঘটছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসহায়ত্ব ছাড়া কিছু থাকে না।
নিজেরা ব্যাংক মালিক ও উদ্যোক্তা। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের বড় গ্রাহকও তাঁরা। সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণ নিচ্ছেন একে অন্যের ব্যাংক থেকে। ছাড়ছেন না নিজ ব্যাংককেও। এভাবে নামে–বেনামে গ্রাহকের আমানত পকেটে পুরতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যাংকের পরিচালকেরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদন বলছে, পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে গত সাত বছরে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন পরিচালকেরা। সবগুলো ব্যাংক থেকে গত মার্চ পর্যন্ত শুধু পরিচালকেরাই নিয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১১ শতাংশ।
পরিচালকদের দেওয়া ঋণের শীর্ষে থাকা ১৬ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। এর বাইরেও প্রথম প্রজন্মের সোনালী ব্যাংক থেকে শুরু করে হালের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকসহ কমবেশি প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালকেরাই ঋণ নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন।
ব্যাংক পরিচালকদের নেওয়া ঋণের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার কোটি টাকা। অথচ পরবর্তী সাত বছরেই তা বেড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ বিতরণ ও তার ব্যবহারে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই পরিচালকেরা ব্যবসায়ী, তাঁরাই আবার ব্যাংকের উদ্যোক্তা।
তাঁরা ঋণ নেন ও খেলাপি হন এবং আবার ঋণ নেন। এসব বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। এটা ব্যাংক ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ ও খেলাপির বিষয়ে নজর দিচ্ছে না।
নিজেদের ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আছে আইনে। এ জন্য পরিচালকেরা অন্য ব্যাংককে টার্গেট করে কাঙ্ক্ষিত ঋণ বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হলেও, বাকি টাকা অন্য ব্যাংক থেকে নিয়েছেন তাঁরা। পরিচালকেরা ব্যাংকের টাকা যে হারে নিয়েছেন, সে তুলনায় পরিশোধের চিত্র খুবই হতাশাজনক। তবে তাঁরা সামান্য টাকা ফেরত দিয়ে খেলাপি না দেখানোর জন্য কৌশলে ঋণ পুনঃ তফসিল করে রাখেন। তারপরও পরিচালকদের প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
ব্যাংক পরিচালকদের ভাগাভাগির ঋণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের পরিচালকেরা যোগসাজশে ঋণ ভাগাভাগি করছেন। এতে নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বাধাটা কার্যকর থাকছে না। আইন থাকার পরেও পরিচালকেরা ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিশোধ করছেন না। এতে স্পষ্ট অনুমান করা যায়, দেশের আইনের চেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক পরিচালকেরা। তাঁদের হাতে ঋণ কুক্ষিগত থাকায় অন্যরা ঋণ পাচ্ছেন না। এতে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এর সমাধান হতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।পরিচালকদের ১৩ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আব্দুল জব্বার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণ যথাযথ নিয়ম মেনে দেওয়া হয়। তাঁদের খেলাপিও একেবারে কম। আমাদের ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের অবস্থা ভালো। সামনে আরও ভালো করতে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করতে সহযোগিতা করেন।’
পরিচালকদের ঋণ দেওয়া ক্ষেত্রে শীর্ষ ১৬-এর মধ্যে আছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালকদের ঋণ ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
পরিচালকদের দেওয়া ঋণের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার স্বতন্ত্র পরিচালক এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ বাকী খলিলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ খাত আগের থেকে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। পাশাপাশি খেলাপি বেড়েছে। এখানে পরিচালকদের ঋণকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। মূলত ব্যাংকঋণের বর্তমান যে অবস্থা চলমান, সে ক্ষেত্রে শুধু পরিচালকেরা নন, সবকিছুর সঙ্গে অর্থনীতি ও রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে।’
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা করে। আর ৭ হাজার কোটি টাকা করে ঋণ দিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক। পরিচালকদের ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং সাউথইস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া পরিচালকেরা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ইস্টার্ণ ব্যাংক থেকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮১ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে পরিচালকেরা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ঢাকা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। পরিচালকেরা ব্যাংক খাতের উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী চলছে।’
আর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফজাল করিম বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে যাচাই-বাছাই করেই ঋণ বিতরণ করা হয়। সে ক্ষেত্রে পরিচালকদের ক্ষেত্রেও ঋণ পেতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ঋণ পাওয়া তো দোষের কিছু না। ব্যাংক কোম্পানি আইনে নিয়মের বিষয়ে বলা রয়েছে।’
প্রাপ্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অন্য ব্যাংকের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকেরা। তাঁরা নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ১৩০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ ৮৯ কোটি টাকা এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ ৬০ কোটি। এ ছাড়া পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালকদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের মোট ঋণ ৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকেরাই নিয়েছেন ৭১৫ কোটি টাকা। আর নিজ ব্যাংকের পরিচালকেরা নিয়েছেন ২২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক পরিচালকদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কোনো বাধা নেই। ঋণ না পেলে তাঁদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। আর দেশের নাগরিক হিসেবে তো ঋণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাঁরা ব্যবসা ভালো চালাতে পারলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে। সরকার রাজস্ব পাবে।’
ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারায় সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতে পারেন না। নিয়ম মেনেই ঋণ নিতে হয়। তবে কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে নিজস্ব ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, তবে আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’
কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিচালকদের ঋণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক, যোগসাজশ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না অধিকাংশ ব্যাংক। আবার কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রহ দেখালেও সংশ্লিষ্ট পরিচালক আদালতে যান। অপরদিকে বেশির ভাগই প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় জানার পরেও ঘটছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসহায়ত্ব ছাড়া কিছু থাকে না।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
৮ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
৮ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
৮ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১২ দিন আগে