মামলার নথি ৩০ বছর সংরক্ষণ চায় পিবিআই

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৫০

ফৌজদারি মামলার নথি বা কেস ডকেট (সিডি) ৩০ বছর সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি বলেছে, কোনো মামলা দীর্ঘদিন পর পুনরুজ্জীবিত হলে তার কেস ডকেট খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটে এবং সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

সূত্র বলেছে, পিবিআই এই প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। সদর দপ্তর প্রস্তাবটি পর্যালোচনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বর্তমানে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার নথি (কেস ডকেট) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ড রুমে জমা হওয়ার পর ১৪ বছর সংরক্ষণ করা হয়।  

কেস ডকেট ৩০ বছর সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না—এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কেস ডকেটে পুরো বিষয় থাকে। নতুন করে মামলার প্রয়োজনেও ডকেট লাগতে পারে। তখন যদি কেস ডকেট না পাওয়া যায়, সে জন্য সংরক্ষণ করা দরকার। প্রয়োজনে ৩০ বছর সংরক্ষণ করতেই পারে। 

পিবিআই সূত্র জানায়, প্রমাণিত না হওয়া হত্যা মামলা বা যেসব ফৌজদারি অপরাধের সাজা ১৪ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড, তেমন অনুদ্‌ঘাটিত মামলার ডকেট ১৪ বছরের পরিবর্তে ৩০ বছর পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণের জন্য গত জুলাইতে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রস্তাব পাঠায় পিবিআই। এ জন্য পুলিশ রেগুলেশনস, বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩-এর এ-সংক্রান্ত প্রবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, পিআরবির প্রবিধানে এটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ড রুমে ১৪ বছর সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবের বিষয়গুলো পুলিশ সদর দপ্তর যাচাই-বাছাই করছে। এরপর পুলিশ সদর দপ্তর প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। 

প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মোস্তফা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলার প্রয়োজনে কেস ডকেট সংরক্ষণের সময় বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, কেস ডকেটে মামলার বিস্তারিত থাকে। নতুন করে মামলার তদন্ত করতে গেলে কেস ডকেট থাকা জরুরি।

জানা যায়, ইতিমধ্যে আলোচিত দুটি মামলার কেস ডকেট গায়েব হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। এর একটি সাবেক এমপি শামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিমা খান মজলিশ হত্যা মামলা এবং অন্যটি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা। প্রয়াত শামসুদ্দোহা খান মজলিশ আওয়ামী লীগের ঢাকার সাভারের এমপি ছিলেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, সেলিমা খান মজলিশ (৬৩) সাভারের নিজ বাড়িতে খুন হন ২০১১ সালের জুনে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় করা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের অক্টোবরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পিবিআই মামলাটি পুনঃ তদন্ত করতে গিয়ে কোথাও কেস ডকেট খুঁজে পায়নি। এতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটে। 

নায়ক সোহেল চৌধুরীকে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলার ডকেট খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই নথি গায়েব নিয়ে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। নথি খুঁজে বের করার দাবিতে রিট আবেদন হয়। পরে নথি পাওয়া যায়। কেস ডকেট ছাড়াই সাক্ষ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আদালত। ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পর চলতি বছরের ৯ মে আদালত এই মামলার রায় দেন। 

মামলার নথি সংরক্ষণের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো কোনো মামলার ডকেট খুঁজে পাওয়া যায় না। ৩০-৩২ বছর পরও যেহেতু মামলার অভিযোগ প্রমাণের নজির আছে, তাই ডকেট সংরক্ষিত থাকলে ভবিষ্যতে মামলার অভিযোগ প্রমাণ হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণের এই সুযোগ অন্তত থাকা দরকার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত