অনলাইন ডেস্ক
২০২১ সালের জুন মাস। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন ভারতের তিরুপ্পুর-ভিত্তিক টেকনো স্পোর্টসওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল ঝুঞ্জুনওয়ালা। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন, পোন্ডিচেরির খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কোম্পানিটির ‘রাউন্ড-নেক ফুল-স্লিভ’ পলিয়েস্টার টি-শার্টের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তিনি সরবরাহ বাড়ালেন, সেগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেল। এরপর তিনি বুঝতে পারলেন, এই টি-শার্টগুলো বিশেষ একধরনের ক্রেতার কাছেই বেশি চাহিদাসম্পন্ন— আর তাঁরা হলেন মৎস্যজীবী।
মহামারির সময় তুলার পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা পলিয়েস্টারের দিকে ঝোঁকেন। পলিয়েস্টার শুধু সস্তাই নয়, দ্রুত শুকিয়ে যায়। টেকনো স্পোর্টসওয়্যারের টি-শার্টগুলো অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও সুরক্ষা দেয় এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল হওয়ায় সমুদ্রে কয়েক দিন থাকলেও দুর্গন্ধ ছড়ায় না। ফলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই টি-শার্টগুলো।
অ্যাক্টিভউয়্যার বা খেলাধুলার পোশাক তৈরিতে ভারতের বৃহত্তম ঘরোয়া ব্র্যান্ডের পরিচালক ঝুঞ্জুনওয়ালা দাবি করেন, ‘আজকের দিনে কন্যাকুমারী থেকে চেন্নাই পর্যন্ত তিনজন মৎস্যজীবীর মধ্যে একজন আমাদের ব্র্যান্ডের পোশাক ব্যবহার করে।’
বিশ্বজুড়ে পলিয়েস্টার টি-শার্ট, ভিসকোস বা অন্যান্য সিনথেটিক ফাইবারের মিশ্রণে তৈরি পোশাকগুলো ‘ম্যান-মেড ফাইবার’ বা এমএমএফ নামে পরিচিত। এসব পোশাক ভারতে চল পেতে সময় লেগেছে। ভারত এখনো তুলার বাজারের ওপর নির্ভরশীল। দেশটিতে তুলার পোশাকের চাহিদা এখনো ৬০ শতাংশের বেশি। তবে বৈশ্বিক চিত্র ভিন্ন।
আন্তর্জাতিক তুলা উপদেষ্টা কমিটির (আইসিএসি) মতে, ১৯৬০ সালে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল ফাইবারের চাহিদায় তুলার পরিমাণ ছিল ৬৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটি মাত্র ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বে এখন এমএমএফ ফাইবারের চাহিদার পরিমাণ এখন ৭৪ শতাংশ।
ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, বিশ্বের ক্রেতারা ফাংশনাল পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন। তুলা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। সেখানে এমএমএফ ক্রেতাদের বহুমুখী চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তাঁর মতে, তুলার তৈরি পোশাকের চাহিদা ক্রমশ কমতে থাকবে।
ফাংশনাল পোশাক বলতে বিশেষ ব্যবহারের জন্য তৈরি পোশাক বোঝানো হয়, যেমন জিম বা অফিসে পরার পোশাক।
এদিকে ভারতের রপ্তানি বাজারে তুলাভিত্তিক পোশাকের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির মধ্যে এমএমএফ টেক্সটাইলের পোশাক মাত্র ১৪ শতাংশ। ফলে চীন, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের কাছে ভারত দ্রুত-বর্ধনশীল এমএমএফ বাজার হারাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এক সময় বিশ্ব টেক্সটাইল বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানে থাকলেও এখন তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাহলে, ভারত কীভাবে আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারে? প্রথমে বোঝা যাক, ভারত কেন ম্যান-মেড ফাইবার (এমএমএফ) টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে।
উদ্ভাবন বনাম দক্ষতা
গোপীনাথ বালার কেমিস্ট্রির প্রতি মুগ্ধতা ছোটবেলা থেকেই। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর নাসার জন্য ন্যানো ম্যাটেরিয়াল ও মহাকাশ প্রকল্পে তিনটি কাজে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল মঙ্গল গ্রহের প্রকল্প। ২০০৭ সালে ভারত ফিরে এসে কোয়েম্বাটোরের কাছে উদুমালপেট এলাকায় পরিবারের মালিকানাধীন শ্রী ভেঙ্কটলক্ষ্মী স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডে মিলে কাজ শুরু করেন। কোম্পানিটি তুলার সুতা উৎপাদন করত। তবে তুলার সুতা উৎপাদন লাভজনক না হওয়ায় ২০১৬ সালে মিলটি বন্ধ করে বালা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল খাতে প্রবেশ করেন। এ ধরনের টেক্সটাইল প্রতিরক্ষা, অটোমোবাইল, বিমান ও মহাকাশযানে ব্যবহার করা হয়।
বালা দুটি পণ্য তৈরি করেছেন—একটি হলো বায়োডিগ্রেডেবল ফেব্রিক, যা বিজ্ঞাপনী বোর্ডে ব্যবহৃত ফ্লেক্স কাপড়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আরেকটি হলো আউটডোর ছাউনি ও ত্রাণ কাঠামো তৈরির জন্য কাপড়, যা ধাতু বা পাতের পরিবর্তে ছাদের জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতে বালা গাড়ির জন্য এয়ারব্যাগ তৈরি করতে চান। তবে তা তখনই সম্ভব হবে যখন তাঁর প্রথম দুটি পণ্য থেকে পর্যাপ্ত আয় আসবে।
বালা বলেন, ‘এই দুটি পণ্য তৈরি করতে আমার তিন বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। তুলা টেক্সটাইলের তুলনায় ম্যান-মেড ফাইবার (এমএমএফ) কাপড় বা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কারণ এটাতে হাতে-কলমে কাজ করতে হয়।’
কাঙ্ক্ষিত গুণমান অর্জন করতে পণ্যের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করতে হয়, তার জন্য বড় অঙ্কের প্রাথমিক বিনিয়োগও প্রয়োজন। তিনি আশা করেন, এয়ারব্যাগ প্রকল্পটি বাজারে আসতে আরও চার বছর লাগবে।
বালা আরও বলেন, এমএমএফ ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল তৈরি সুতির চেয়ে ভিন্ন। উন্নত টেক্সটাইল ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এখানে উদ্ভাবনী হতে হয়। অন্যদিকে প্রচলিত তুলার পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া টেক্সটাইল উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা।
এ বিষয়ে মেনকা মিলস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও বিশ্বের বৃহত্তম স্পোর্টস পণ্যসামগ্রীর খুচরা বিক্রেতা ডেকাথলনের সরবরাহকারী আর.এম. লক্ষ্মণ নারায়ণ বলেন, উদাহরণ হিসেবে কাঁচামালের বিষয়টি ধরা যাক। তুলার বিপরীতে পলিয়েস্টার সুতা তৈরির ক্ষেত্রে এর গঠন জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলে। পলিয়েস্টারের শত শত প্রকার রয়েছে এবং প্রতিটি প্রকারের আরও বিভিন্ন উপভাগ আছে। সঠিক ধরনের সুতা বাছাই করতে প্রায় ২০টি বৈশিষ্ট্যের জন্য এই সুতাগুলোর পরীক্ষা করতে হয়, যেমন সংকোচন, প্রসারণ যোগ্যতা, সংকোচন ক্ষমতা বা কার্ল স্থিতিশীলতা।
তাই বেশির ভাগ তুলার কাপড়ের উদ্যোক্তা এমএমএফ বা টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের বাজারে প্রবেশ করতে চান না। বালার মতে, টেক্সটাইল শিল্পের ১৫ শতাংশ উদ্যোক্তা টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের জগতে প্রবেশ করতে পারেন। আর প্রায় ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা এমএমএফ টেক্সটাইলকে উন্নত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল পণ্য তৈরি করতে তুলনামূলকভাবে আরও বেশি কারিগরি দক্ষতা, উচ্চতর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
কাঁচামালের সংকট
সমস্যার শেষ নেই। ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পলিয়েস্টার ও ভিসকোজ উৎপাদনকারী হলেও মানসম্পন্ন কাঁচামালের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার। ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, ‘ভারতে যে পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতা পাওয়া যায়— তা গুণগত দিক থেকে চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের চেয়ে নিম্নমানের।’
ভারতীয় কাঁচামাল সরবরাহকারীরা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় নতুনত্ব আনেনি। এর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। এসভিজি ফ্যাশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজকুমার আগরওয়াল বলেন, ভারতের পলিয়েস্টার শিল্প অধিকাংশ সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোযোগী ও এর দাম খুব কম। পলিয়েস্টার সুতা প্রস্তুতকারকদের জন্য নতুনত্বে বিনিয়োগের কোনো প্রণোদনা নেই। তবে এমএমএফ টেক্সটাইল রপ্তানি একবার বাড়তে শুরু করলে কাঁচামালের গুণগত মান উন্নত হবে।
ঝুঞ্জুনওয়ালার টেকনোস্পোর্টসওয়ার প্রায় সব পলিয়েস্টার সুতা চীন থেকে আমদানি করে। কোম্পানিটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০০ কোটি রুপি আয়ের আশা করছে এবং সম্প্রতি তারা এ৯১ পার্টনার্স থেকে ১৭৫ কোটি রুপি তহবিল পেয়েছে।
আমদানি করাও সহজ নয়। ভারত সরকার নির্দিষ্ট পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার ক্ষেত্রে কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার (কিউসিও) আরোপ করেছে, যার ফলে আমদানির জন্য ভারতীয় মান সংস্থার (বিআইএস) শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। এর ফলে চীন থেকে আমদানি সীমিত হচ্ছে।
আগরওয়াল বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো বিএআইএস সার্টিফিকেশন নিবন্ধন করতে পারে না, ফলে চীন থেকে আমদানি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
টেকনোস্পোর্টসওয়ার চীনা ‘ফুললি ড্রন ইয়র্ন’ দিয়ে পোশাক তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা ‘ড্রন টেক্সচারাইজড ইয়র্ন’ নামে আরেকটি ভিন্ন ধরনের সুতা ব্যবহার করছে। এই সুতার ওপরও কিউসি প্রযোজ্য হলে কোম্পানিটির কপাল পুড়বে।
ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, ‘ভারত এমএমএফ পোশাকের বাজারে জায়গা করে নিতে চাইলে কাঁচামাল আমদানির ব্যাপারে খোলামেলা নীতি প্রণয়ন করতে হবে। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে চীনকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমাদের তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, আগে তাঁদের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে এবং এরপর পেছনে ফেলতে হবে। আমরা কেন নিজেদের সবচেয়ে কার্যকরী সাপ্লাই চেইন থেকে আলাদা রাখব?’
ঝুনঝুনওয়ালা আরও প্রশ্ন করেন, ‘কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দিলে ভারতীয় এমএমএফ টেক্সটাইল শিল্প উন্নত হবে, বাজারে পৌঁছাবে ও রপ্তানি বাড়বে। একবার এটি ঘটলে দেশীয় কাঁচামালের মান উন্নত হবে। তখন আমদানি কমে যাবে। ভারত সরকার মোবাইল ফোন তৈরির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। বেশির ভাগ পলিয়েস্টার উপাদান চীন থেকে আসে। সেখানে টেক্সটাইল খাতকে কেন আলাদা ভাবতে হবে?’
‘মেইক-ইন-চায়না’ পলিসি
একটি বড় সমস্যা হলো, পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার মতো যেসব কাঁচামালের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা রয়েছে, সেই মানগুলো ফেব্রিকসের মতো ডাউনস্ট্রিম পণ্যের বেলায় প্রযোজ্য নয়। প্রতিদিন চীন থেকে ৮ লক্ষ কেজি এমএমএফ ফেব্রিক আসে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এগুলো কেজিপ্রতি ১ ডলারে আমদানি হতো, যা ভারতীয় সুতার খরচের থেকেও কম।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর মার্চে পাঁচ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানিতে কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন মূল্য ৩ দশমিক ৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ছয় মাসের জন্য। এরপর আমদানিকারকরা অন্য ক্যাটাগরির অধীনে আমদানি করতে শুরু করেন। এমএমএফ ফেব্রিকসের ৫০টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সরকার এখন ১৩ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানিতে সর্বনিম্ন মূল্য আরোপ করেছে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ভারত বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত পোশাক রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আগরওয়াল বলেন, ‘এখানে সমস্যা হলো বাংলাদেশ চীন থেকে এমএমএফ ফেব্রিক বিনা শুল্কে আমদানি করে, সেগুলো দিয়ে পোশাক তৈরি করে আবার বিনা শুল্কে ভারতে রপ্তানি করে। বাস্তবে আমরা বিনা শুল্কে চীনা ফেব্রিক আমদানি করতে দিচ্ছি।’
ভারতের এমএমএফ শিল্প শক্তিশালী করতে এই নীতিটি সংশোধন করা প্রয়োজন। আগরওয়াল আরও বলেন, ‘আপনি কাঁচামালের আমদানিকে সীমাবদ্ধ করতে পারেন না এবং ডাউন স্ট্রিম পণ্যের অবাধ প্রবাহকে অনুমতি দিতে পারেন না। এটা হচ্ছে ‘মেক-ইন-চায়না’ নীতি।’
মিসিং লিংক
গুণগত মানের সমস্যা সত্ত্বেও ভারত এমএমএফ সুতা উৎপাদন করতে সক্ষম। ভারত যথেষ্ট পরিমাণে নিটিং ও উইভিং সক্ষমতা অর্জন করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রক্রিয়াজাতকরণ অবকাঠামোর অভাব, বিশেষত ডাইং (রঙ করা)। কঠোর দূষণ নীতিমালা ও অভ্যন্তরীণ বাজারে কম দামের কারণে দেশীয় শিল্প যথেষ্ট সুবিধা করতে পারছে না। আরও কিছু কারণও রয়েছে।
মেনাকা মিলসের নারায়ণ বলেন, এমএমএফ ডাইং সুতি ডাইংয়ের চেয়ে আলাদা। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও প্রক্রিয়া ভিন্ন। এতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াও প্রয়োজন। ডাইং প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ করতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগে।
শিল্পটি এগিয়ে নিতে সরকার এ ক্ষেত্রে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শিল্প কারখানার দূষিত পানি পরিশোধনাগার) স্থাপন করতে পারে। আগরওয়াল বলেন, এগুলো পিএম-এমআইটিআরএ প্রকল্পের আওতায় করা যেতে পারে। কেননা প্রকল্পটি টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরির জন্য গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি তাইওয়ান সফরের সময় নারায়ণ হতবাক হন যে, সেখানে শিল্পটি প্রতিকেজি ফেব্রিক ডাইং করতে ৭০ লিটার পানি ব্যবহার করে। মেনাকা মিলসে ছয় বছর ধরে কাজ করার পর তিনি পানি ব্যবহারের পরিমাণ মাত্র ২৬ লিটারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে, আমরা এমএমএফের বাজারে পৃথিবীর সেরা হতে পারি। শুধু আমাদের সুষম প্রতিযোগিতার মাঠ দিন।’
উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা
ভারত সরকার খাতটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে কাজ করছে। সম্প্রতি তারা এমএমএফ টেক্সটাইল এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এমএমএফ ফেব্রিক, এমএমএফ পোশাক এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের জন্য ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপির প্রোডাকশন-লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৪টি আবেদন স্কিমটির আওতায় অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট বিনিয়োগ ১৯ হাজার ৭৯৮ কোটি।
সরকার একটি জাতীয় টেকনিক্যাল টেক্সটাইল মিশনও ঘোষণা করেছে এবং এখন পর্যন্ত ১৬৮টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
এমএমএফ এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভারত এসব পদক্ষেপ অনেক দেরিতে নিয়েছে। সামনে পথ এখনো বন্ধুর। ভারতের টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তাদের মানসিকতা এখনো তুলাকে ঘিরে। যারা সাহস করে এমএমএফ শুরু করেছে তাঁরা নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সঠিক ইকোসিস্টেমের অভাব, কাঁচামাল সরবরাহে নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিবন্ধকতা ও চড়া আমদানি মূল্য। ভারতে পলিয়েস্টারের চাহিদা এখনো ধীরে বাড়ছে ও বৈশ্বিক ক্রেতারা এখনো ভারতের এমএমএফ পণ্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। শিল্পটি আশা করছে, অন্তত তাদের ক্ষতিকর আমদানি নীতিগুলো সংশোধন করা হোক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিন্ট’ থেকে ভাষান্তর করেছেন আবদুল বাছেদ
২০২১ সালের জুন মাস। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন ভারতের তিরুপ্পুর-ভিত্তিক টেকনো স্পোর্টসওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল ঝুঞ্জুনওয়ালা। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন, পোন্ডিচেরির খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কোম্পানিটির ‘রাউন্ড-নেক ফুল-স্লিভ’ পলিয়েস্টার টি-শার্টের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তিনি সরবরাহ বাড়ালেন, সেগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেল। এরপর তিনি বুঝতে পারলেন, এই টি-শার্টগুলো বিশেষ একধরনের ক্রেতার কাছেই বেশি চাহিদাসম্পন্ন— আর তাঁরা হলেন মৎস্যজীবী।
মহামারির সময় তুলার পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা পলিয়েস্টারের দিকে ঝোঁকেন। পলিয়েস্টার শুধু সস্তাই নয়, দ্রুত শুকিয়ে যায়। টেকনো স্পোর্টসওয়্যারের টি-শার্টগুলো অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও সুরক্ষা দেয় এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল হওয়ায় সমুদ্রে কয়েক দিন থাকলেও দুর্গন্ধ ছড়ায় না। ফলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই টি-শার্টগুলো।
অ্যাক্টিভউয়্যার বা খেলাধুলার পোশাক তৈরিতে ভারতের বৃহত্তম ঘরোয়া ব্র্যান্ডের পরিচালক ঝুঞ্জুনওয়ালা দাবি করেন, ‘আজকের দিনে কন্যাকুমারী থেকে চেন্নাই পর্যন্ত তিনজন মৎস্যজীবীর মধ্যে একজন আমাদের ব্র্যান্ডের পোশাক ব্যবহার করে।’
বিশ্বজুড়ে পলিয়েস্টার টি-শার্ট, ভিসকোস বা অন্যান্য সিনথেটিক ফাইবারের মিশ্রণে তৈরি পোশাকগুলো ‘ম্যান-মেড ফাইবার’ বা এমএমএফ নামে পরিচিত। এসব পোশাক ভারতে চল পেতে সময় লেগেছে। ভারত এখনো তুলার বাজারের ওপর নির্ভরশীল। দেশটিতে তুলার পোশাকের চাহিদা এখনো ৬০ শতাংশের বেশি। তবে বৈশ্বিক চিত্র ভিন্ন।
আন্তর্জাতিক তুলা উপদেষ্টা কমিটির (আইসিএসি) মতে, ১৯৬০ সালে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল ফাইবারের চাহিদায় তুলার পরিমাণ ছিল ৬৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটি মাত্র ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বে এখন এমএমএফ ফাইবারের চাহিদার পরিমাণ এখন ৭৪ শতাংশ।
ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, বিশ্বের ক্রেতারা ফাংশনাল পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন। তুলা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। সেখানে এমএমএফ ক্রেতাদের বহুমুখী চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তাঁর মতে, তুলার তৈরি পোশাকের চাহিদা ক্রমশ কমতে থাকবে।
ফাংশনাল পোশাক বলতে বিশেষ ব্যবহারের জন্য তৈরি পোশাক বোঝানো হয়, যেমন জিম বা অফিসে পরার পোশাক।
এদিকে ভারতের রপ্তানি বাজারে তুলাভিত্তিক পোশাকের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির মধ্যে এমএমএফ টেক্সটাইলের পোশাক মাত্র ১৪ শতাংশ। ফলে চীন, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের কাছে ভারত দ্রুত-বর্ধনশীল এমএমএফ বাজার হারাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এক সময় বিশ্ব টেক্সটাইল বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানে থাকলেও এখন তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাহলে, ভারত কীভাবে আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারে? প্রথমে বোঝা যাক, ভারত কেন ম্যান-মেড ফাইবার (এমএমএফ) টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে।
উদ্ভাবন বনাম দক্ষতা
গোপীনাথ বালার কেমিস্ট্রির প্রতি মুগ্ধতা ছোটবেলা থেকেই। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর নাসার জন্য ন্যানো ম্যাটেরিয়াল ও মহাকাশ প্রকল্পে তিনটি কাজে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল মঙ্গল গ্রহের প্রকল্প। ২০০৭ সালে ভারত ফিরে এসে কোয়েম্বাটোরের কাছে উদুমালপেট এলাকায় পরিবারের মালিকানাধীন শ্রী ভেঙ্কটলক্ষ্মী স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডে মিলে কাজ শুরু করেন। কোম্পানিটি তুলার সুতা উৎপাদন করত। তবে তুলার সুতা উৎপাদন লাভজনক না হওয়ায় ২০১৬ সালে মিলটি বন্ধ করে বালা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল খাতে প্রবেশ করেন। এ ধরনের টেক্সটাইল প্রতিরক্ষা, অটোমোবাইল, বিমান ও মহাকাশযানে ব্যবহার করা হয়।
বালা দুটি পণ্য তৈরি করেছেন—একটি হলো বায়োডিগ্রেডেবল ফেব্রিক, যা বিজ্ঞাপনী বোর্ডে ব্যবহৃত ফ্লেক্স কাপড়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আরেকটি হলো আউটডোর ছাউনি ও ত্রাণ কাঠামো তৈরির জন্য কাপড়, যা ধাতু বা পাতের পরিবর্তে ছাদের জন্য ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতে বালা গাড়ির জন্য এয়ারব্যাগ তৈরি করতে চান। তবে তা তখনই সম্ভব হবে যখন তাঁর প্রথম দুটি পণ্য থেকে পর্যাপ্ত আয় আসবে।
বালা বলেন, ‘এই দুটি পণ্য তৈরি করতে আমার তিন বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। তুলা টেক্সটাইলের তুলনায় ম্যান-মেড ফাইবার (এমএমএফ) কাপড় বা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কারণ এটাতে হাতে-কলমে কাজ করতে হয়।’
কাঙ্ক্ষিত গুণমান অর্জন করতে পণ্যের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করতে হয়, তার জন্য বড় অঙ্কের প্রাথমিক বিনিয়োগও প্রয়োজন। তিনি আশা করেন, এয়ারব্যাগ প্রকল্পটি বাজারে আসতে আরও চার বছর লাগবে।
বালা আরও বলেন, এমএমএফ ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল তৈরি সুতির চেয়ে ভিন্ন। উন্নত টেক্সটাইল ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এখানে উদ্ভাবনী হতে হয়। অন্যদিকে প্রচলিত তুলার পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া টেক্সটাইল উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা।
এ বিষয়ে মেনকা মিলস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও বিশ্বের বৃহত্তম স্পোর্টস পণ্যসামগ্রীর খুচরা বিক্রেতা ডেকাথলনের সরবরাহকারী আর.এম. লক্ষ্মণ নারায়ণ বলেন, উদাহরণ হিসেবে কাঁচামালের বিষয়টি ধরা যাক। তুলার বিপরীতে পলিয়েস্টার সুতা তৈরির ক্ষেত্রে এর গঠন জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলে। পলিয়েস্টারের শত শত প্রকার রয়েছে এবং প্রতিটি প্রকারের আরও বিভিন্ন উপভাগ আছে। সঠিক ধরনের সুতা বাছাই করতে প্রায় ২০টি বৈশিষ্ট্যের জন্য এই সুতাগুলোর পরীক্ষা করতে হয়, যেমন সংকোচন, প্রসারণ যোগ্যতা, সংকোচন ক্ষমতা বা কার্ল স্থিতিশীলতা।
তাই বেশির ভাগ তুলার কাপড়ের উদ্যোক্তা এমএমএফ বা টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের বাজারে প্রবেশ করতে চান না। বালার মতে, টেক্সটাইল শিল্পের ১৫ শতাংশ উদ্যোক্তা টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের জগতে প্রবেশ করতে পারেন। আর প্রায় ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা এমএমএফ টেক্সটাইলকে উন্নত ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল পণ্য তৈরি করতে তুলনামূলকভাবে আরও বেশি কারিগরি দক্ষতা, উচ্চতর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
কাঁচামালের সংকট
সমস্যার শেষ নেই। ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পলিয়েস্টার ও ভিসকোজ উৎপাদনকারী হলেও মানসম্পন্ন কাঁচামালের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার। ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, ‘ভারতে যে পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতা পাওয়া যায়— তা গুণগত দিক থেকে চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের চেয়ে নিম্নমানের।’
ভারতীয় কাঁচামাল সরবরাহকারীরা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় নতুনত্ব আনেনি। এর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। এসভিজি ফ্যাশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজকুমার আগরওয়াল বলেন, ভারতের পলিয়েস্টার শিল্প অধিকাংশ সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোযোগী ও এর দাম খুব কম। পলিয়েস্টার সুতা প্রস্তুতকারকদের জন্য নতুনত্বে বিনিয়োগের কোনো প্রণোদনা নেই। তবে এমএমএফ টেক্সটাইল রপ্তানি একবার বাড়তে শুরু করলে কাঁচামালের গুণগত মান উন্নত হবে।
ঝুঞ্জুনওয়ালার টেকনোস্পোর্টসওয়ার প্রায় সব পলিয়েস্টার সুতা চীন থেকে আমদানি করে। কোম্পানিটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০০ কোটি রুপি আয়ের আশা করছে এবং সম্প্রতি তারা এ৯১ পার্টনার্স থেকে ১৭৫ কোটি রুপি তহবিল পেয়েছে।
আমদানি করাও সহজ নয়। ভারত সরকার নির্দিষ্ট পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার ক্ষেত্রে কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার (কিউসিও) আরোপ করেছে, যার ফলে আমদানির জন্য ভারতীয় মান সংস্থার (বিআইএস) শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। এর ফলে চীন থেকে আমদানি সীমিত হচ্ছে।
আগরওয়াল বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো বিএআইএস সার্টিফিকেশন নিবন্ধন করতে পারে না, ফলে চীন থেকে আমদানি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।
টেকনোস্পোর্টসওয়ার চীনা ‘ফুললি ড্রন ইয়র্ন’ দিয়ে পোশাক তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা ‘ড্রন টেক্সচারাইজড ইয়র্ন’ নামে আরেকটি ভিন্ন ধরনের সুতা ব্যবহার করছে। এই সুতার ওপরও কিউসি প্রযোজ্য হলে কোম্পানিটির কপাল পুড়বে।
ঝুঞ্জুনওয়ালা বলেন, ‘ভারত এমএমএফ পোশাকের বাজারে জায়গা করে নিতে চাইলে কাঁচামাল আমদানির ব্যাপারে খোলামেলা নীতি প্রণয়ন করতে হবে। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে চীনকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমাদের তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, আগে তাঁদের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে এবং এরপর পেছনে ফেলতে হবে। আমরা কেন নিজেদের সবচেয়ে কার্যকরী সাপ্লাই চেইন থেকে আলাদা রাখব?’
ঝুনঝুনওয়ালা আরও প্রশ্ন করেন, ‘কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দিলে ভারতীয় এমএমএফ টেক্সটাইল শিল্প উন্নত হবে, বাজারে পৌঁছাবে ও রপ্তানি বাড়বে। একবার এটি ঘটলে দেশীয় কাঁচামালের মান উন্নত হবে। তখন আমদানি কমে যাবে। ভারত সরকার মোবাইল ফোন তৈরির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। বেশির ভাগ পলিয়েস্টার উপাদান চীন থেকে আসে। সেখানে টেক্সটাইল খাতকে কেন আলাদা ভাবতে হবে?’
‘মেইক-ইন-চায়না’ পলিসি
একটি বড় সমস্যা হলো, পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট সুতার মতো যেসব কাঁচামালের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা রয়েছে, সেই মানগুলো ফেব্রিকসের মতো ডাউনস্ট্রিম পণ্যের বেলায় প্রযোজ্য নয়। প্রতিদিন চীন থেকে ৮ লক্ষ কেজি এমএমএফ ফেব্রিক আসে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এগুলো কেজিপ্রতি ১ ডলারে আমদানি হতো, যা ভারতীয় সুতার খরচের থেকেও কম।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর মার্চে পাঁচ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানিতে কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন মূল্য ৩ দশমিক ৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ছয় মাসের জন্য। এরপর আমদানিকারকরা অন্য ক্যাটাগরির অধীনে আমদানি করতে শুরু করেন। এমএমএফ ফেব্রিকসের ৫০টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সরকার এখন ১৩ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানিতে সর্বনিম্ন মূল্য আরোপ করেছে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ভারত বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত পোশাক রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আগরওয়াল বলেন, ‘এখানে সমস্যা হলো বাংলাদেশ চীন থেকে এমএমএফ ফেব্রিক বিনা শুল্কে আমদানি করে, সেগুলো দিয়ে পোশাক তৈরি করে আবার বিনা শুল্কে ভারতে রপ্তানি করে। বাস্তবে আমরা বিনা শুল্কে চীনা ফেব্রিক আমদানি করতে দিচ্ছি।’
ভারতের এমএমএফ শিল্প শক্তিশালী করতে এই নীতিটি সংশোধন করা প্রয়োজন। আগরওয়াল আরও বলেন, ‘আপনি কাঁচামালের আমদানিকে সীমাবদ্ধ করতে পারেন না এবং ডাউন স্ট্রিম পণ্যের অবাধ প্রবাহকে অনুমতি দিতে পারেন না। এটা হচ্ছে ‘মেক-ইন-চায়না’ নীতি।’
মিসিং লিংক
গুণগত মানের সমস্যা সত্ত্বেও ভারত এমএমএফ সুতা উৎপাদন করতে সক্ষম। ভারত যথেষ্ট পরিমাণে নিটিং ও উইভিং সক্ষমতা অর্জন করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রক্রিয়াজাতকরণ অবকাঠামোর অভাব, বিশেষত ডাইং (রঙ করা)। কঠোর দূষণ নীতিমালা ও অভ্যন্তরীণ বাজারে কম দামের কারণে দেশীয় শিল্প যথেষ্ট সুবিধা করতে পারছে না। আরও কিছু কারণও রয়েছে।
মেনাকা মিলসের নারায়ণ বলেন, এমএমএফ ডাইং সুতি ডাইংয়ের চেয়ে আলাদা। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও প্রক্রিয়া ভিন্ন। এতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াও প্রয়োজন। ডাইং প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ করতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগে।
শিল্পটি এগিয়ে নিতে সরকার এ ক্ষেত্রে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শিল্প কারখানার দূষিত পানি পরিশোধনাগার) স্থাপন করতে পারে। আগরওয়াল বলেন, এগুলো পিএম-এমআইটিআরএ প্রকল্পের আওতায় করা যেতে পারে। কেননা প্রকল্পটি টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরির জন্য গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি তাইওয়ান সফরের সময় নারায়ণ হতবাক হন যে, সেখানে শিল্পটি প্রতিকেজি ফেব্রিক ডাইং করতে ৭০ লিটার পানি ব্যবহার করে। মেনাকা মিলসে ছয় বছর ধরে কাজ করার পর তিনি পানি ব্যবহারের পরিমাণ মাত্র ২৬ লিটারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে, আমরা এমএমএফের বাজারে পৃথিবীর সেরা হতে পারি। শুধু আমাদের সুষম প্রতিযোগিতার মাঠ দিন।’
উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা
ভারত সরকার খাতটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে কাজ করছে। সম্প্রতি তারা এমএমএফ টেক্সটাইল এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এমএমএফ ফেব্রিক, এমএমএফ পোশাক এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের জন্য ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি রুপির প্রোডাকশন-লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৪টি আবেদন স্কিমটির আওতায় অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট বিনিয়োগ ১৯ হাজার ৭৯৮ কোটি।
সরকার একটি জাতীয় টেকনিক্যাল টেক্সটাইল মিশনও ঘোষণা করেছে এবং এখন পর্যন্ত ১৬৮টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
এমএমএফ এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভারত এসব পদক্ষেপ অনেক দেরিতে নিয়েছে। সামনে পথ এখনো বন্ধুর। ভারতের টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তাদের মানসিকতা এখনো তুলাকে ঘিরে। যারা সাহস করে এমএমএফ শুরু করেছে তাঁরা নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সঠিক ইকোসিস্টেমের অভাব, কাঁচামাল সরবরাহে নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিবন্ধকতা ও চড়া আমদানি মূল্য। ভারতে পলিয়েস্টারের চাহিদা এখনো ধীরে বাড়ছে ও বৈশ্বিক ক্রেতারা এখনো ভারতের এমএমএফ পণ্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। শিল্পটি আশা করছে, অন্তত তাদের ক্ষতিকর আমদানি নীতিগুলো সংশোধন করা হোক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিন্ট’ থেকে ভাষান্তর করেছেন আবদুল বাছেদ
বাংলাদেশের ঋণমান আরও কমিয়েছে মুডিস। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার রেটিংসে গত ছয় মাসের ব্যবধানে সরকারের ঋণমান ‘বি১’ থেকে নামিয়ে ‘বি২’ করা হয়েছে। এতেই দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ হয়েছে।
৬ মিনিট আগেপ্রতিবছরের মতো এবারও দেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি সহজেই পরিশোধ করা যাচ্ছে বিকাশে। ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী বা তাঁদের অভিভাবকেরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তির ওয়েবসাইটে আবেদন করে বিকাশের মাধ্যমে এই ফি দিতে পারছেন ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর সঙ্গে পাচ্ছেন ৫০ টাকার ডিসকাউন্ট কুপন। পরবর্তী পাঁচ দি
২ ঘণ্টা আগেআসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচন উপলক্ষে সম্মিলিত পরিষদের উদ্যোগে এবং চৈতী গ্রুপের সিইও আবুল কালামের ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি আলোচনা সভা ও মেজবানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি ও বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চৈতী গ্রুপের সিইও ও সম্মিলিত পরিষদের স
২ ঘণ্টা আগেব্ল্যাক ফ্রাইডের ধারণার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার দেশটিতে থ্যাংকস গিভিং ডে উদ্যাপিত হয়। এর পর দিনই ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এ দিনটিতে মূলত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যে ব্যাপক ছাড় দিয়ে থাকেন। এই দিন থেকেই বড়দিনের কেনাকাটা শুরু করেন অনেকে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বেশ জনপ্রিয় এই দিন
৪ ঘণ্টা আগে