দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন

ঘুষকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রে মামলার জেরে বাংলাদেশেও চাপে পড়বে আদানি

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৮
ঘুষের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি আদানিকে বাংলাদেশেও চাপে ফেলতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের গৌতম আদানি ও তাঁর ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগপত্র দাখিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও আদানি গ্রুপের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনটাই ধারণা করছেন ঢাকার জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এমন এক সময়ে উঠল, যখন ঢাকার হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই চুক্তির আওতায় গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আদানি ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে এই জ্বালানি চুক্তি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। কারণ, এটি অন্য অনেক চুক্তির মতো টেন্ডারের মাধ্যমে হয়নি। তবুও অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সংলাপ চালানোর চেষ্টা করেছিল। তবে মার্কিন অভিযোগপত্রের পর সংলাপের সেই সুযোগ সংকুচিত হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ এখন আদানি গ্রুপের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পারে মূল্য সংক্রান্ত সমঝোতার জন্য।’

আদানির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি পর্যায়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি অব্যাহত থাকবে এবং কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।

আদানি পাওয়ার লিমিটেড (এপিএল) ২০২৩ সালের এপ্রিলে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত ৮০০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল ইউনিট (প্রথম) থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এ প্রকল্প বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘প্রথমে আদানির প্রস্তাব আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল, কারণ তারা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা এনে বাংলাদেশের চাহিদা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় বড় পরিসরের কয়লা আমদানি কঠিন ছিল। তবে সমালোচকরা বলছেন, আদানি ভারত সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পেলেও এর সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি।’

মূল্য সংক্রান্ত সমস্যাটি শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও ছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) আদানিকে মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি পাঠায়। আদানি প্রতি মেট্রিক টন কয়লার দাম ৪০০ ডলার দাবি করলেও, বিপিডিবি যুক্তি দেয় যে এটি ২৫০ ডলারের কম হওয়া উচিত। কারণ, অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তারা এই দামেই কয়লা কিনেছে।

চলতি বছরের আগস্টে হাসিনা সরকার পতনের পর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি। হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন জ্বালানি প্রকল্প পর্যালোচনার আওতায় আসে। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ কমিটি এই চুক্তিগুলো খতিয়ে দেখা শুরু করে।

যদিও জনমনে চুক্তিটি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ছিল, তারপরও অন্তর্বর্তী সরকার আদানির সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যায়। আদানি পাওয়ার বকেয়া বিল নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিলে, বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৪৫০ কোটি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগ অর্থ পরিশোধও করে।

যাই হোক, ঢাকার হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশনায় আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি পুনরায় খতিয়ে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আদানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা এখন সরকারের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত