পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গত ছয় মাসের ব্যবসায় বেশির ভাগের মুনাফায় ভাটা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ৪৭টি কোম্পানি চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ছয় মাসের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২০টি বা প্রায় ৪৩ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। ১৪টি বা প্রায় ৩০ শতাংশ কোম্পানির লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি কোম্পানি মুনাফা থেকে লোকসানে নেমেছে। আগে থেকেই লোকসানি কোম্পানির মধ্যে চারটির লোকসান আরও বেড়েছে, বিপরীতে তিনটির কিছুটা কমেছে।
ব্যবসায় ভালো করতে না পারার কারণ হিসেবে বিক্রি কম, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানামুখী সংকটের কথা জানিয়েছে কোম্পানিগুলো। এমনকি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কথায়ও সংকটের বিষয়টি উঠে আসে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাপ্লাই চেইন ও এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে বেশির ভাগ কোম্পানিই এখন কোনো রকমে টিকে রয়েছে। তাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুধু এক্সচেঞ্জ লসই হচ্ছে। মুনাফা করাই কঠিন হয়ে গেছে।
তারল্যসংকটও আছে বাজারে। সব মিলিয়ে কোম্পানিগুলো সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ছয় মাস খুবই খারাপ ছিল।
৪৭টি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির। কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬২৮ শতাংশ কম।
এ বিষয়ে আইসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার বিক্রি থেকে কম মুনাফা, সুদের ব্যয় বৃদ্ধি এবং অনেক বেশি সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করার কারণে নিট মুনাফা এবং ইপিএস হ্রাস পেয়েছে।
এরপরই ৫০০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ঋণাত্মক ২০ পয়সা ইপিএস হয়েছে জাহিন স্পিনিংয়ের। আর ৩৫৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১ টাকা ৯২ পয়সা লোকসান হয়েছে ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের। এ ছাড়াও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং ও সিলভা ফার্মা আয় থেকে লোকসানে নেমেছে।
লোকসান এড়াতে পারলেও আয় কমেছে বেক্সিমকো, শাইনপুকুর সিরামিক, মতিন স্পিনিং, ভিএফএস থ্রেড, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, এডিএন টেলিকম, জেনেক্স ইনফোসিস, বিডি থাই ফুড, লাভেলো, সিনোবাংলা, জেডিএস অ্যাক্সেসরিজ, দেশবন্ধু পলিমার ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের।
অন্যদিকে লোকসানে থাকা গোল্ডেন হার্ভেস্ট, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, সাভার রিফ্যাক্টরিজ ও আজিজ পাইপসের লোকসান আরও বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় লোকসান কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছে পাওয়ার গ্রিড, জুট স্পিনার্স ও বিডি সার্ভিসেস।
সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে বিএসআরএম স্টিলের। আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৬১৩ শতাংশ বেড়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা। ৬৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ৪ টাকা ৭৬ পয়সা আয় নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট। আর ৪ টাকা ৬ পয়সা আয় বা ৫০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আয় বৃদ্ধির তৃতীয় অবস্থানে মালেক স্পিনিং।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলোর মুনাফা মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে পারছে না। যাদের নেতিবাচক, তাদের কথা তো বলাই যায় না। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে না পারার কারণে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ, এটা তারই প্রতিফলন। পরবর্তী ৬ মাসে কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।