দামে অসন্তুষ্টি নিয়েই লবণ উৎপাদন শুরু উপকূলে

  • এবার চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার টন।
  • মণপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩৫০ টাকা।
  • মণপ্রতি গড় মূল্য বাজারে ৩৩৯ টাকা।
  • লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা।
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ২০
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ২১
চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। লবণচাষে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে সমুদ্র উপকূল এলাকার জমি। ছবিটি টেকনাফের জালিয়াপাড়া থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা

মাঠপর্যায়ে এক মণ লবণের দাম ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। কিন্তু এর উৎপাদন খরচই পড়ছে ৩৫০ টাকার ওপরে। ন্যায্যমূল্য না পেলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। টেকনাফের জালিয়াপাড়ার চাষি আবদুল হকের দেওয়া এমন তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় সরকারিভাবে তৈরি বাজার পর্যবেক্ষণ তথ্যে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আওতাধীন কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণের গড় মূল্য পড়ছে ৩৩৯ টাকা।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছর নভেম্বরে প্রতি মণ লবণ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। লবণচাষি ও মাঠপর্যায়ের সরবরাহকারীদের অভিযোগ, মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এখন লবণের দাম কমিয়ে রেখেছেন। দাম নিয়ে চাষিদের এই অসন্তুষ্টি চলতি মৌসুমে দেশের চাহিদা অনুযায়ী ২৬ লাখ ১০ হাজার টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।

যদিও পেকুয়ার করিয়ারদিয়ার লবণ ব্যবসায়ী সিরাজুল মোস্তফা বলেন, লবণের মোকাম নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি ও খুলনায় প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বস্তাপ্রতি ট্রলারভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ হচ্ছে ১৫০ টাকার ওপরে।

এ রকম শঙ্কার মধ্যেই দেশে শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন; যা চলবে আগামী মে মাস পর্যন্ত। এই সময়ে সাগরের লোনাপানি শুকিয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, সদর ও টেকনাফ এবং পাশের চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপকূলে লবণের চাষ হয়; যা থেকে পূরণ হয় দেশের সার্বিক লবণের চাহিদা। এখন এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন কক্সবাজারের সাত উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখ‍ালী ও পটিয়ার সমুদ্র উপকূলের চাষিরা।

৪ নভেম্বর কুতুবদিয়ায় চলতি মৌসুমে প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এ উপকূলের ৭০ শতাংশ জমিই এখন লবণ চাষে প্রস্তুত। এ ছাড়া পেকুয়ায় ৫০, টেকনাফে ১০ শতাংশ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৪০ শতাংশ মাঠ প্রস্তুত হয়েছে। বাকি উপজেলার চাষিরাও মাঠে নামতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়া ও বাঁশখালী উপজেলা থেকে ৫৫ টন লবণ সংগৃহীত হয়েছে।

কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের সূত্রমতে, গত মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। নতুন উৎপাদন মৌসুমে চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। যদিও আগের উৎপাদন মৌসুমের উদ্বৃত্ত ৪ লাখ ১ হাজার ৭৮৫ টন লবণ দেশে এখনো মজুত রয়েছে। এখন সর্বত্র উৎপাদন শুরু হওয়ায় চলতি মৌসুমের লবণের চাহিদা অর্জনের দৌড়ে প্রতিদিনই যুক্ত হবে মজুত তালিকায়; যা আগামী বছরের মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

দেশে গত বছর ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। সে সময় গা পোড়া দাবদাহে কক্সবাজার উপকূলের লবণ উৎপাদনেও ভেঙেছে গত ৬৩ বছরের রেকর্ড। পাশাপাশি এক দিনে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার টন লবণ উৎপাদনের নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি হয়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া ছিল। ফলে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে চাষিদের সময় লেগে যায়।

এর আংশিক প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমের উৎপাদনে। ৩ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৫৫ টন; যা গত বছর একই সময় উৎপাদিত হয় ৭৩০ টন।

মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, এ বছরও লবণ চাষের জমির আওতা বাড়বে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ছাড়িয়ে যাবে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত