ফারুক মেহেদী
ঢাকা: মধ্য বয়সী হাসিবুল হাসান (হাসিব)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক। মতিঝিলের অফিস থেকে ক্লান্তি নিয়ে মিরপুরের বাসায় ফিরে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভিটা চালু করেন। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট। একের পর এক তথ্য যেন ইঁদুর দৌঁড়ে নেমেছে।
ক্লান্ত শরীরে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না হাসিবুলের। বলা হচ্ছে বিরাট বাজেট। রাজস্ব আয়ের সীমাবদ্ধতায় বাড়েনি লক্ষ্যমাত্রা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা (৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা) অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি। অর্থের সংস্থান করতে না পারায় ঋণ করা হবে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে বেশি খরচ করা হলেও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার ইচ্ছে (৫ দশমিক ৩ শতাংশ)। এ রকম আরও কিছু খটমটে শব্দ তাঁর মাথায় হাতুড়িপেটা করছে!
হিসাব বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি থাকার পরও নিত্য টানাটানির সংসারে ভোগ্যপণ্যের বাড়তি দাম, প্রতিদিনের অফিসে যাওয়া-আসায় অতিরিক্ত খরচের চাপে বাজেটের আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এসব হিসাব করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছে। মাসের শুরুতে চাল, ডাল, তেল, লবণের হিসাব করতেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন! এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে স্ত্রী হাতে এক কাপ চা আর মাসকাবারি ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে গেল।
টিভি দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দিয়ে ঝরঝরে হওয়ার বদলে হাসিবুল ঘামছেন। দেশের বাজেটের মধ্যে সংসারের বাজেট ঢুকে গেছে। মাসে বেতন ৪০ হাজার টাকা। খরচ ৫৫ হাজার টাকা। এ জন্য প্রতি মাসে এদিক–ওদিক করে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা আনতে হয়। টানাটানির সংসারে সরকারের বাজেট ঘোষণা তাঁর মতো লোকেদের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা। এখন গিন্নির তালিকা নিয়ে বাজারে গেলেই দেখা যাবে, সব জিনিসের দাম বাড়তি। বললেই শুনতে হবে এই পণ্যে শুল্ক বসেছে, ওই পণ্যে ভ্যাট বসেছে, আরেক পণ্যে কর বসেছে। অথচ তিনি টিভিতে স্পষ্ট শুনলেন ক্ষেত্র বিশেষে কর প্রত্যাহারও করা হয়েছে। অথচ বিক্রেতারা এসবের ধার-ধারেন না।
তাই বাজারে যাবে কিনা সেটাই ভাবছেন হাসিব। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, বাজেটের পর বাজারে যাওয়া মানেই কোনো কারণ ছাড়া অনেকগুলো বাড়তি টাকা খসানো। অফিসের হিসাব মেলাতে তাঁর দক্ষতা থাকলেও, এখনো সংসারের হিসাব মেলাতে পারেন না। ভাবছেন, মোটা অঙ্কের বাজেটে সরকার তুষ্ট, বিরোধী দল রুষ্ট। আর তাদের মাঝে পড়ে তাঁর মতো মধ্যবিত্তরা প্রায় পিষ্ট।
করোনার কারণে হাসিবের চাকরিটা চলে যেতে যেতেও টিকে আছে। বেতন বাড়ার তো প্রশ্নই নেই। অথচ সব খরচ বাড়ছে। বাচ্চার স্কুলের বেতন, অনলাইন খরচ, গ্রামের বাড়িতে বাবার জন্য টাকা পাঠানো, প্রয়োজনীয় জামাকাপড়-জুতা, ওষুধপত্র—এসবতো আছেই। তাঁর ধারণা, দেশের তাঁর মতো চাকরিজীবীদের গল্পটা একই।
করোনার কারণে ব্যবসা নাই, চাকরি নাই, কাজ নাই, উদ্যোগ-বিনিয়োগে স্থবির, রাজস্বে ঘাটতির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতেও বেশি খরচের উচ্চাশা সরকারের। হাসিব ভাবছেন, এ টাকা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ হলে কিছু মানুষের কাজের সুযোগ হবে, আয়ও হয়তো বাড়বে। তবে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়বে জিনিসপত্রের দাম। সরকার যদিও ৫ দশমিক ৩ শতাংশে তা ঠেকিয়ে রাখতে চায়। হাসিবুলের ধারণা তা সম্ভব নয়। কারণ বাজারে টাকা বেশি আসলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে-এটাই চিরায়ত রীতি। সরকার তা কখনই ঠেকাতে পারেনি। সামনে পারবে এ ভরসা কোথায়।
হাসিবুল ভয়ে আছেন এই ভেবে যে, সরকার বাজেটের প্রায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি পূরণে মরিয়া হবে। এ যাবৎকালের রেকর্ড ঘাটতি বাজেট এটি। এ টাকা জোগাড়ে সরকার হন্যে হয়ে ব্যাংক থেকে বা বেশি সুদে সঞ্চয়পত্র কিনে টাকা নিয়ে নেবে। এর ফলে তাঁদের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা বাড়াতে বা যারা নতুন ব্যবসা গড়তে ঋণ পেতে সমস্যা হবে। ফলে নতুন চাকরির সুযোগ কমে যেতে পারে। এর ফলে কোম্পানি, ব্যক্তি বা সরকারের আয়ও কমে যেতে পারে।
হাসিবুলের চোখ টিভির পর্দায়। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল স্বপ্নের রঙিন স্কেচে আঁকা বাজেট বক্তৃতায় এগিয়ে যাওয়ার আশাজাগানিয়া বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরছেন। শুনতে বেশ লাগছে। করোনাকালেও ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন। তাঁর চিন্তা, এ জিডিপি হার পড়াশোনা শেষ করে বের হওয়া কী পরিমাণ বেকারের চাকরি দেবে, কত শতাংশ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বৃত্ত থেকে বের করে আনবে—তার স্পষ্ট চিত্র তিনি দেখেননি। বাজেট বক্তৃতা চলছে, হাসিবুল উসখুস করছেন। কখনো চেয়ারে বসছেন, কখনো বিছানায়। কোথাও যেন স্বস্তি নেই। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের কথা ভেবে মনটা ভার হয়ে আছে।
হাসিবুল এবার একটু স্থির হয়ে বসে গোটা বিষয়টি তাঁর মতো করে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেন। তাঁর মতো মধ্যবিত্তের জীবনে বাজেটের সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমনটা তিনি দেখেননি। তারপরও রীতি মেনে বাজেট করে সরকার। বাস্তবায়ন না হলেও বরাদ্দ আর অঙ্কের বড় বড় হিসাব ঠিকই মিলিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এবাব ঠিক করেছে নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশ চালানোর ব্যয় মেটাবে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠে মানুষের চাকরি দেবে, দারিদ্র্য কমাবে, নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট, সেতু, অবকাঠামো বানাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাবে, সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের কাজ শেষ করে মানুষকে উন্নত জীবনের স্বাদ দেবে। এ সময় তাঁর মনে পড়ে, বাসার কাছ দিয়ে যাওয়া নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কথা। আহা…কী যে ভালো লাগছে এটি দেখে… গেল কয়েক বছর ধরেই দেখে আসছেন। আর সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন একরাশ ভোগান্তি। তারপরও আশায় আছেন, এটি শেষ হলে অন্তত আরামে অফিসে যাওয়া যাবে। তিনি মনে করেন, এবারের বাজেটে যে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে, তাতে কতটুকু স্বচ্ছতা থাকবে, কতটুকু কৃচ্ছ্র সাধন করা হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ হবে কিনা—এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান তিনি।
তাঁর ভালো লাগছে, বাজেটে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। বহু পণ্যের শুল্ক-কর-ভ্যাট কমানো হয়েছে। কখনো প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখা হয়েছে। হাসপাতাল নির্মাণে ১০ বছরের অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে গাড়ি সংযোজন করলে ১০ বছরের কর অবকাশসহ আরও নানান খাতে কর সুবিধার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর আরও ভালো লাগছে এটা জেনে যে, রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষকে চাকরি দিলে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া হবে।
হাসিবুল দেখছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করলে কর সুবিধা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে শুল্ক-কর ছাড়সহ আরও সুবিধা মিলবে। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। সবমিলিয়ে তার মনে হচ্ছে, ব্যবসায় সুবিধা হলেও হতে পারে। কারণ ব্যাংক যদি কর ছাড় পায় তবে ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সুবিধা পাবেন। তবে অভিজ্ঞতা বলে, এটা হয় না। ব্যাংকগুলো সুবিধা পায় ঠিকই, কিন্তু এর ইতিবাচক প্রতিফলন গ্রাহক সেবায় খুব একটা দেখা যায় না।
বাজেট নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে হাসিবুলের চা জুড়িয়ে গেল! এদিকে গিন্নির চিৎকার, চায়ের বারোটা বাজানোর পর এবার হাসিব সংসারটাকেও ডোবাবেন, যেমনটা রোজ শোনেন আরকি! গিন্নির ধারণা, এরপরে গেলে জিনিসের দাম আরও বাড়বে। এতকিছুর পরেও হাসিবুল বাজারে যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছেন না।
এর মধ্যে গিন্নির চোখ টিভিতে: বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই খাতে উৎসাহ দিতে বাজেটে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করমুক্ত করা হয়েছে। খুশি হয়ে স্বামীকে ইচ্ছের কথা মুখ ফুটে বললেন। হাসিবুল উৎসাহ দিতে পারলে খুশিই হতেন। কিন্তু এসএমইর জন্য পুঁজি আসবে কোত্থেকে, তা তো গিন্নিকে জিজ্ঞেস করা যাবে না। নতুন উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক সত্যিকার অর্থে ঋণ দিতে চায় না। আর কর সুবিধা তো পরের ব্যাপার। তারপরও মনে হয়, ব্যাংক উদার হলে গিন্নির বিনিয়োগের স্বপ্ন হয়তো পূরণ হতে পারে!
তবে স্ত্রীর জন্য তাৎক্ষণিক খুশির খবর না দিতে পারলেও এবার স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট ও আগাম করে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তার সুফলের কথা জানালেন। বিশেষ করে আসছে বাজেটে ফ্রিজ, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সচার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, প্রেশার কুকারসহ বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদনে কর ছাড় থাকছে। ফলে এসবের দাম কমলে লাভ হতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, এর সুবিধা ভোক্তারা ঠিকমতো পায় না।
ধনীদের সারচার্জ বাড়ানোর ঘোষণাটি হাসিবুলের ভালো লেগেছে। তাঁর মতে, মধ্যবিত্ত সৎ করদাতারা যেটুকু আয় করে তা থেকে কর দেয়। সে তুলনায় ধনীরা তাদের সম্পদের তুলনায় কম দেন। এতে কিছুটা হলেও ন্যায্যতা আসবে। তবে মোটাদাগে করদাতার সংখ্যা না বাড়লে নিয়মিত যারা কর দেয়, শুধু তাদের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে লাভ নেই। সরকারের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো উচিত। যদিও অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরে এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে কর বিভাগের। তাতে অবশ্য খুব একটা আশাবাদী হতে পারেনি তিনি। কারণ প্রতিবছরই এ ঘোষণা থাকে, বাস্তবায়ন হয় না।
টিভি চলছে, বাজেট বিশ্লেষণ করছেন অর্থনীতিবিদরা। নানান জন নানা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন বিশাল বাজেটের অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ হবে। কারও মতে, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে তা পূরণ হবে না। কেউ বলছেন, ভালো বাজেট। ব্যবসায়ীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। সরকারের লোকজন জানান, বাজেটে শিল্প চাঙা হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।
নানান প্রতিক্রিয়া আর বিশ্লেষণ দেখে হাসিবুল খেই হারিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আসে, চা আগেই ঠান্ডা হয়েছে। ক্লান্ত হাসিবুলের টিভি বন্ধ করার ইচ্ছেটাও চলে গেছে। রিমোট চাপ দিতে যাবেন…তখনই কানে আসে অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটের মূল শিরোনামটি। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি। সত্য হোক কথাটি, বলতে বলতে সামনের দিকে এগোলেন হাসিবুল। ওদিক দিয়ে কানে আসছে এশার আজান।
ঢাকা: মধ্য বয়সী হাসিবুল হাসান (হাসিব)। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক। মতিঝিলের অফিস থেকে ক্লান্তি নিয়ে মিরপুরের বাসায় ফিরে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভিটা চালু করেন। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট। একের পর এক তথ্য যেন ইঁদুর দৌঁড়ে নেমেছে।
ক্লান্ত শরীরে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না হাসিবুলের। বলা হচ্ছে বিরাট বাজেট। রাজস্ব আয়ের সীমাবদ্ধতায় বাড়েনি লক্ষ্যমাত্রা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা (৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা) অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি। অর্থের সংস্থান করতে না পারায় ঋণ করা হবে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে বেশি খরচ করা হলেও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার ইচ্ছে (৫ দশমিক ৩ শতাংশ)। এ রকম আরও কিছু খটমটে শব্দ তাঁর মাথায় হাতুড়িপেটা করছে!
হিসাব বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি থাকার পরও নিত্য টানাটানির সংসারে ভোগ্যপণ্যের বাড়তি দাম, প্রতিদিনের অফিসে যাওয়া-আসায় অতিরিক্ত খরচের চাপে বাজেটের আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এসব হিসাব করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছে। মাসের শুরুতে চাল, ডাল, তেল, লবণের হিসাব করতেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন! এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে স্ত্রী হাতে এক কাপ চা আর মাসকাবারি ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে গেল।
টিভি দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দিয়ে ঝরঝরে হওয়ার বদলে হাসিবুল ঘামছেন। দেশের বাজেটের মধ্যে সংসারের বাজেট ঢুকে গেছে। মাসে বেতন ৪০ হাজার টাকা। খরচ ৫৫ হাজার টাকা। এ জন্য প্রতি মাসে এদিক–ওদিক করে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা আনতে হয়। টানাটানির সংসারে সরকারের বাজেট ঘোষণা তাঁর মতো লোকেদের কাছে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা। এখন গিন্নির তালিকা নিয়ে বাজারে গেলেই দেখা যাবে, সব জিনিসের দাম বাড়তি। বললেই শুনতে হবে এই পণ্যে শুল্ক বসেছে, ওই পণ্যে ভ্যাট বসেছে, আরেক পণ্যে কর বসেছে। অথচ তিনি টিভিতে স্পষ্ট শুনলেন ক্ষেত্র বিশেষে কর প্রত্যাহারও করা হয়েছে। অথচ বিক্রেতারা এসবের ধার-ধারেন না।
তাই বাজারে যাবে কিনা সেটাই ভাবছেন হাসিব। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, বাজেটের পর বাজারে যাওয়া মানেই কোনো কারণ ছাড়া অনেকগুলো বাড়তি টাকা খসানো। অফিসের হিসাব মেলাতে তাঁর দক্ষতা থাকলেও, এখনো সংসারের হিসাব মেলাতে পারেন না। ভাবছেন, মোটা অঙ্কের বাজেটে সরকার তুষ্ট, বিরোধী দল রুষ্ট। আর তাদের মাঝে পড়ে তাঁর মতো মধ্যবিত্তরা প্রায় পিষ্ট।
করোনার কারণে হাসিবের চাকরিটা চলে যেতে যেতেও টিকে আছে। বেতন বাড়ার তো প্রশ্নই নেই। অথচ সব খরচ বাড়ছে। বাচ্চার স্কুলের বেতন, অনলাইন খরচ, গ্রামের বাড়িতে বাবার জন্য টাকা পাঠানো, প্রয়োজনীয় জামাকাপড়-জুতা, ওষুধপত্র—এসবতো আছেই। তাঁর ধারণা, দেশের তাঁর মতো চাকরিজীবীদের গল্পটা একই।
করোনার কারণে ব্যবসা নাই, চাকরি নাই, কাজ নাই, উদ্যোগ-বিনিয়োগে স্থবির, রাজস্বে ঘাটতির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতেও বেশি খরচের উচ্চাশা সরকারের। হাসিব ভাবছেন, এ টাকা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ হলে কিছু মানুষের কাজের সুযোগ হবে, আয়ও হয়তো বাড়বে। তবে তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়বে জিনিসপত্রের দাম। সরকার যদিও ৫ দশমিক ৩ শতাংশে তা ঠেকিয়ে রাখতে চায়। হাসিবুলের ধারণা তা সম্ভব নয়। কারণ বাজারে টাকা বেশি আসলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে-এটাই চিরায়ত রীতি। সরকার তা কখনই ঠেকাতে পারেনি। সামনে পারবে এ ভরসা কোথায়।
হাসিবুল ভয়ে আছেন এই ভেবে যে, সরকার বাজেটের প্রায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি পূরণে মরিয়া হবে। এ যাবৎকালের রেকর্ড ঘাটতি বাজেট এটি। এ টাকা জোগাড়ে সরকার হন্যে হয়ে ব্যাংক থেকে বা বেশি সুদে সঞ্চয়পত্র কিনে টাকা নিয়ে নেবে। এর ফলে তাঁদের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা বাড়াতে বা যারা নতুন ব্যবসা গড়তে ঋণ পেতে সমস্যা হবে। ফলে নতুন চাকরির সুযোগ কমে যেতে পারে। এর ফলে কোম্পানি, ব্যক্তি বা সরকারের আয়ও কমে যেতে পারে।
হাসিবুলের চোখ টিভির পর্দায়। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল স্বপ্নের রঙিন স্কেচে আঁকা বাজেট বক্তৃতায় এগিয়ে যাওয়ার আশাজাগানিয়া বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরছেন। শুনতে বেশ লাগছে। করোনাকালেও ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন। তাঁর চিন্তা, এ জিডিপি হার পড়াশোনা শেষ করে বের হওয়া কী পরিমাণ বেকারের চাকরি দেবে, কত শতাংশ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বৃত্ত থেকে বের করে আনবে—তার স্পষ্ট চিত্র তিনি দেখেননি। বাজেট বক্তৃতা চলছে, হাসিবুল উসখুস করছেন। কখনো চেয়ারে বসছেন, কখনো বিছানায়। কোথাও যেন স্বস্তি নেই। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের কথা ভেবে মনটা ভার হয়ে আছে।
হাসিবুল এবার একটু স্থির হয়ে বসে গোটা বিষয়টি তাঁর মতো করে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেন। তাঁর মতো মধ্যবিত্তের জীবনে বাজেটের সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমনটা তিনি দেখেননি। তারপরও রীতি মেনে বাজেট করে সরকার। বাস্তবায়ন না হলেও বরাদ্দ আর অঙ্কের বড় বড় হিসাব ঠিকই মিলিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এবাব ঠিক করেছে নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশ চালানোর ব্যয় মেটাবে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠে মানুষের চাকরি দেবে, দারিদ্র্য কমাবে, নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট, সেতু, অবকাঠামো বানাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাবে, সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের কাজ শেষ করে মানুষকে উন্নত জীবনের স্বাদ দেবে। এ সময় তাঁর মনে পড়ে, বাসার কাছ দিয়ে যাওয়া নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কথা। আহা…কী যে ভালো লাগছে এটি দেখে… গেল কয়েক বছর ধরেই দেখে আসছেন। আর সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন একরাশ ভোগান্তি। তারপরও আশায় আছেন, এটি শেষ হলে অন্তত আরামে অফিসে যাওয়া যাবে। তিনি মনে করেন, এবারের বাজেটে যে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে, তাতে কতটুকু স্বচ্ছতা থাকবে, কতটুকু কৃচ্ছ্র সাধন করা হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ হবে কিনা—এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান তিনি।
তাঁর ভালো লাগছে, বাজেটে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। বহু পণ্যের শুল্ক-কর-ভ্যাট কমানো হয়েছে। কখনো প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখা হয়েছে। হাসপাতাল নির্মাণে ১০ বছরের অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে গাড়ি সংযোজন করলে ১০ বছরের কর অবকাশসহ আরও নানান খাতে কর সুবিধার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর আরও ভালো লাগছে এটা জেনে যে, রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষকে চাকরি দিলে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া হবে।
হাসিবুল দেখছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করলে কর সুবিধা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে শুল্ক-কর ছাড়সহ আরও সুবিধা মিলবে। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। সবমিলিয়ে তার মনে হচ্ছে, ব্যবসায় সুবিধা হলেও হতে পারে। কারণ ব্যাংক যদি কর ছাড় পায় তবে ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সুবিধা পাবেন। তবে অভিজ্ঞতা বলে, এটা হয় না। ব্যাংকগুলো সুবিধা পায় ঠিকই, কিন্তু এর ইতিবাচক প্রতিফলন গ্রাহক সেবায় খুব একটা দেখা যায় না।
বাজেট নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে হাসিবুলের চা জুড়িয়ে গেল! এদিকে গিন্নির চিৎকার, চায়ের বারোটা বাজানোর পর এবার হাসিব সংসারটাকেও ডোবাবেন, যেমনটা রোজ শোনেন আরকি! গিন্নির ধারণা, এরপরে গেলে জিনিসের দাম আরও বাড়বে। এতকিছুর পরেও হাসিবুল বাজারে যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছেন না।
এর মধ্যে গিন্নির চোখ টিভিতে: বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই খাতে উৎসাহ দিতে বাজেটে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করমুক্ত করা হয়েছে। খুশি হয়ে স্বামীকে ইচ্ছের কথা মুখ ফুটে বললেন। হাসিবুল উৎসাহ দিতে পারলে খুশিই হতেন। কিন্তু এসএমইর জন্য পুঁজি আসবে কোত্থেকে, তা তো গিন্নিকে জিজ্ঞেস করা যাবে না। নতুন উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক সত্যিকার অর্থে ঋণ দিতে চায় না। আর কর সুবিধা তো পরের ব্যাপার। তারপরও মনে হয়, ব্যাংক উদার হলে গিন্নির বিনিয়োগের স্বপ্ন হয়তো পূরণ হতে পারে!
তবে স্ত্রীর জন্য তাৎক্ষণিক খুশির খবর না দিতে পারলেও এবার স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট ও আগাম করে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তার সুফলের কথা জানালেন। বিশেষ করে আসছে বাজেটে ফ্রিজ, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সচার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, প্রেশার কুকারসহ বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদনে কর ছাড় থাকছে। ফলে এসবের দাম কমলে লাভ হতে পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, এর সুবিধা ভোক্তারা ঠিকমতো পায় না।
ধনীদের সারচার্জ বাড়ানোর ঘোষণাটি হাসিবুলের ভালো লেগেছে। তাঁর মতে, মধ্যবিত্ত সৎ করদাতারা যেটুকু আয় করে তা থেকে কর দেয়। সে তুলনায় ধনীরা তাদের সম্পদের তুলনায় কম দেন। এতে কিছুটা হলেও ন্যায্যতা আসবে। তবে মোটাদাগে করদাতার সংখ্যা না বাড়লে নিয়মিত যারা কর দেয়, শুধু তাদের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে লাভ নেই। সরকারের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো উচিত। যদিও অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরে এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে কর বিভাগের। তাতে অবশ্য খুব একটা আশাবাদী হতে পারেনি তিনি। কারণ প্রতিবছরই এ ঘোষণা থাকে, বাস্তবায়ন হয় না।
টিভি চলছে, বাজেট বিশ্লেষণ করছেন অর্থনীতিবিদরা। নানান জন নানা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন বিশাল বাজেটের অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ হবে। কারও মতে, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে তা পূরণ হবে না। কেউ বলছেন, ভালো বাজেট। ব্যবসায়ীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। সরকারের লোকজন জানান, বাজেটে শিল্প চাঙা হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।
নানান প্রতিক্রিয়া আর বিশ্লেষণ দেখে হাসিবুল খেই হারিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আসে, চা আগেই ঠান্ডা হয়েছে। ক্লান্ত হাসিবুলের টিভি বন্ধ করার ইচ্ছেটাও চলে গেছে। রিমোট চাপ দিতে যাবেন…তখনই কানে আসে অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটের মূল শিরোনামটি। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি। সত্য হোক কথাটি, বলতে বলতে সামনের দিকে এগোলেন হাসিবুল। ওদিক দিয়ে কানে আসছে এশার আজান।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব কেমন হবে? এটি ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদারীকরণ যুগের অবসান ঘটাবে নাকি...
৩ ঘণ্টা আগেস্বাধীনতার পর জাহাজে করে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল। এতদিন পাকিস্তানি পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে জাহাজে করে বাংলাদেশ আসত। সেসব পণ্যও বন্দরে পৌঁছার পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের দুটি কিডনিই খেয়ে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
৭ ঘণ্টা আগেঅক্টোবরে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ, আর টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশে অস্থিরতা শুরুর পর ভারতে পোশাক রপ্তানির অর্ডার বেড়েছে বলে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
৯ ঘণ্টা আগে