২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছি, ইজ্জত পাইনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৩৪
সেখ বশির উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

শিল্পকারখানায় বিনিয়োগ করার পর গ্যাস পেতে নিজের টাকায় ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করার কথা তুলে ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, এই পাইপলাইন নির্মাণে শুধু রোড কাটিংয়ের অনুমোদন নিতেই আমাকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘গ্যাসের জন্য জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বাসার সামনে আমাকে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে অনেক লেকচার ‍শুনতে হয়েছে। মিনিমাম ইজ্জত পর্যন্ত পাইনি। তারপরও জি স্যার, জি স্যার বলতে হয়েছে। কিছু কিছু মানুষের সিটিস্ক্যান করে তাঁদের ব্রেন দেখার ইচ্ছা হচ্ছে আমার। মানুষ কেন এত ক্রিমিনাল হতে পারে!’

অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এজাজ আহমেদ।

ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যাঁরা পাইপলাইন থেকে গ্যাস পাচ্ছেন না, তাঁরা নিজস্ব খরচে এখন পাইপলাইন স্থাপন করে নেন। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এ কাজে আপনাদের কাউকে কোথাও ঘুষ দিতে হবে না।’

বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানির একটি শর্ত শিথিল করার কারণে গত ৬ মাসে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে সেমিনারে জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসিকে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, সরবরাহকারীকে রিফাইনারির মালিক হতে হবে। এ শর্ত শিথিল করে ৬ মাসে ৩৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

ফাওজুল কবির বলেন, ‘পাবলিক সেক্টর প্রকিউরমেন্টে প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে। সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে আগে মন্ত্রীকে চিনতে হতো, ইয়ে করতে হতো। এখন সে পরিবেশ নেই। আপনারা যাঁরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান, তাঁদের আমি উৎসাহিত করি।’

উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের সময় ২৩টি কোম্পানি এলএনজি সরবরাহ করত। এটা আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। গ্যাসকূপ খননও উন্মুক্ত করে দরপত্র দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে অফশোরের বিডিং হবে।

গ্যাস সংকটের কারণে এ মুহূর্তে শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বদলে তা সংকুচিত হচ্ছে উল্লেখ করে এপেক্স গ্রুপের এমডি নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমাদের সাভারের কারখানায় দুটি রুলস রয়েস জেনারেটর পলিথিন দিয়ে তিন বছর ধরে ঢেকে রাখছি, কারণ গ্যাস পাওয়া যায় না। দিনে পাঁচ-সাতবার করে গ্যাস চলে যাচ্ছে। এতে কারখানার মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট দূর না হলে দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ হবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু মুদ্রানীতি ব্যবহার করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ট্রান্সপারেন্সি বলে কিছুই ছিল না। তাই আমাদের এখন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। গাজীপুরের কারখানা গ্যাস পায় না অথচ একই পাইপলাইন দিয়ে ময়মনসিংহে থাকা ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস পাচ্ছে। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে গাজীপুরের কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করার সুপারিশ করেন তিনি।

বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘একটা মেসেজ পরিষ্কার করে বলতে চাই, তা হলো ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। বিশেষ করে যাঁরা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ।’

অধ্যাপক এজাজ আহমেদ মূল প্রবন্ধে বলেন, ২০২০ থেকে তিন বছরে বাংলাদেশে গড়ে গ্যাসের সিস্টেম লস ৯.৮২ শতাংশ, যার বার্ষিক মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। একে সিস্টেম লস না বলে ‘চুরি’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে সিস্টেম লসের এ তথ্য মানতে আপত্তি জানান পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার গড় সিস্টেম লস ৫-৬ শতাংশ। তবে তিতাস ও বাখরাবাদের সিস্টেম লস অনেক বেশি। কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ২০০ শিল্পে অবৈধ লাইন বন্ধ করা হয়েছে। এখন নারায়ণগঞ্জে অভিযান চলবে। অভিযান পরিচালনার সময় অবৈধ সংযোগ নেওয়া ব্যবসায়ীরা পেট্রোবাংলার ম্যাজিস্ট্রেটদের লাঞ্ছিত করছেন। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত