পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আটকে আছে ৩ হাজার গ্রাহকের ২ কোটি টাকা

জসিম উদ্দীন, নীলফামারী ও  রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর 
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১০: ০৪

সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের কর্মকর্তারা। সরল বিশ্বাসে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ৩ হাজার দরিদ্র মানুষ প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও একক বিমা করেন। তাঁদের সবার সঞ্চয় ও বিমার মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বেশ আগে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। কোম্পানির স্থানীয় অফিসও হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এজেন্টদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছেন গ্রাহকেরা।

বাধ্য হয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নীলফামারী আদালতে মামলা করেছেন বিমা কোম্পানিটির সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নীলফামারী আদালতে গত ২০ জুলাই কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও হিসাব কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন, বগুড়া অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ এবং রংপুর অঞ্চলের প্রধান মুকসেদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’ 

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সৈয়দপুরে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ৩ হাজার গ্রাহকের বিমা পলিসি রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার। বেশির ভাগেরই মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে অন্তত ৫ বছর আগে। কারও কারও মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কেটে গেছে ৮ বছর। টাকা উদ্ধারে প্রথমে গ্রাহকেরা নীলফামারী জেলা অফিস, এরপর রংপুর বিভাগীয় অফিস এবং সর্বশেষ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ধরনা দেন। কাগজপত্রও জমা দেন। কিন্তু টাকা পাননি। শেষ ভরসা হিসেবে গ্রাহকেরা এখন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দ্বারস্থ হয়েছেন।

নীলফামারী সদরের বাসিন্দা জালাল উদ্দীন নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্সের সৈয়দপুর শাখায় বিমা পলিসি করি। মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু ৬ বছর পার হলেও টাকা পাচ্ছি না। ভেবেছিলাম, ওই টাকা পেলে মেয়ের বিয়ে দেব। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, জমানো টাকাটাই পাচ্ছি না।’ 

সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা রতনা বেগম বলেন, ‘একসঙ্গে মুনাফাসহ আসল পাব—এই আশায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতি মাসে ২০০ টাকার কিস্তিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় বিমা করি পদ্মা লাইফে। ২০১৭ সালে বিমার মেয়াদ শেষ হয়। টাকার জন্য রংপুর, ঢাকা, নীলফামারী—তিন অফিসের স্যারদের পেছনে দৌড়াচ্ছি। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। আশা করেছিলাম, জমানো টাকা দিয়ে বড় ছেলেকে একটা ব্যবসা করে দেব। তাহলে আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবে না। কিন্তু তাঁরা টাকা দিচ্ছেন না।’

প্রতিষ্ঠানটির সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৫ সালের শেষের দিকে কোম্পানির একটি সভা হয় সৈয়দপুরে। সভায় বিমা করলে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যাবে বলে লোভ দেখানো হয়। এজেন্ট হিসেবে কাজ করলে অনেক টাকা উপার্জন করা যাবে, অল্প দিনে বাড়ি-গাড়ি করা যাবে বলেও স্বপ্ন দেখানো হয়। তাঁদের কথায় প্রথমে ১০ বছর মেয়াদি একটি ক্ষুদ্র বিমা করি। এরপর তাঁদের সঙ্গে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করি। প্রায় ৩ হাজার পলিসি করিয়েছি। এখন মেয়াদ শেষ হওয়ায় সবাই আমার কাছে এসে টাকা চান। তাঁদের কারণে বাড়ি থাকতে পারছি না।’ 

মোমেনুল কোম্পানির বগুড়া এবং রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও মুকসেদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা অফিস থেকে এরই মধ্যে ১২ গ্রাহক বিমা দাবির চেক নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই দুজনের কারণে আমরা টাকা পাচ্ছি না। তাঁরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোম্পানিও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ 

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, বগুড়া অঞ্চলের প্রধান ফরিদ আহমেদ ও রংপুর অঞ্চলের প্রধান মোখছেদ আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। 

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে বর্তমান ব্যাংক সুদের চেয়ে বেশি হারে বিমা দাবির সুদ দিতে হয়। 

পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। হতদরিদ্র মানুষের বিমা দাবি যাতে দ্রুত পরিশোধ হয়, সেই ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত