হুসাইন আহমদ, ঢাকা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের সঙ্গে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সম্পর্ক কয়েক দশকের পুরোনো। বিমানের বহরে বোয়িংয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য। সব উড়োজাহাজই এই মার্কিন কোম্পানির তৈরি। বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও বহু পুরোনো। তবে লাভের মুখ এখনো দেখেনি বিমান।
গত এক যুগে আকাশপথে পরিবহনের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আকাশপথে বছরে চলাচলকারী যাত্রীসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে। কিন্তু ২০১০ সালের পর মাত্র এক দশকে সেই সংখ্যা একলাফে ৬০ লাখে উন্নীত হয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা বেড়ে ৮০ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার জন্য বাড়তি রুট ও ফ্লাইট দরকার হবে। বর্ধিত চাহিদা পূরণে ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রুট চালু করতে চায় বিমান। দেড় দশক পর ইতালিতে ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান। এর মধ্যে দেড় যুগ আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটেও আবার ফ্লাইট চালুর প্রচেষ্টা চলছে।
এজন্য বিমান নতুন এয়ারক্রাফট কিনবে। এখন বিমানের বহরে এয়ারবাসের কোনো উড়োজাহাজ নেই। সর্বশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ামোস এয়ারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া এয়ারবাসের এ৩৩০-২০০ উড়োজাহাজ চলত। সেটা ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেরত দেওয়া হয়।
বিমানের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজের সবই বোয়িংয়ের তৈরি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০। এসব উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান ৭টি অভ্যন্তরীণ ও ১৬টি আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করে। বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ১০টি উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
সেই সুযোগ নিয়ে এয়ারবাস বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী বছরে এই আলোচনা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরের সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে এয়ারবাস কেনার আশ্বাস দেয় সরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রও বোয়িং বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এয়ারবাস কেনার চুক্তির আশ্বাস দিলেও বোয়িং কেনার কথাও বিবেচনা করতে পারে বিমান।
বিমান কি বোয়িংয়ের সঙ্গেই থাকবে?
চলতি বছরের শুরুতে এয়ারবাসের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত হলেও বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাবও বিবেচনায় রেখেছে বিমান। উভয় নির্মাতাই জোর উদ্যোগে উড়োজাহাজ বিক্রির অর্ডার পেতে জোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি টেবিলে প্রলোভনের নানা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেছেন, উভয়ের (বোয়িং ও এয়ারবাস) প্রস্তাব বিমানের বিবেচনায় আছে। এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে লাভজনক হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে এয়ারক্রাফটের সুবিধাজনক দাম, বাড়তি সহায়তা ও সুবিধা বিবেচনা করবে বিমান।
বিমান বলছে, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে নতুন রুট চালুর লক্ষ্য নিয়ে আগামী বছরগুলোতে বিমান নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে আগ্রহী। মহামারির পর ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওয়াইড-বডি এয়ারক্রাফট বাড়াতে চায় বিমান। ৫১ বছর বয়সী বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা সব উড়োজাহাজ বোয়িং কোম্পানির। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ওয়াইড-বডি এয়ারক্র্যাফট, কিছু আছে ড্যাশ-৮ টার্বোপ্রোস।
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ দুটি এ৩৫০এফ উড়োজাহাজসহ ১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপীয় উড়োজাহাজ কোম্পানির ওপর আস্থা রাখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এয়ারবাসের ১০টি এ৩৫০ উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’
সদ্য সাবেক বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও এয়ারবাস কেনার বিষয়ে বেশ জোর দিয়েই বলে আসছিলেন। গত বছরের মাঝামাঝি রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে দুটি এয়ারবাস উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দেওয়া হতে পারে। কয়েক ধাপে ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হবে; কারিগরি কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব উড়োজাহাজ নতুন এবং পুরোনো রুটে চলাচল করবে। সব দেশের বহরেই বোয়িং এবং এয়ারবাসের উড়োজাহাজ আছে। কিন্তু আমাদের শুধু বোয়িং আছে, এয়ারবাসের একটি উড়োজাহাজও নেই।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে আরও বোয়িং বিক্রির চেষ্টা করছে। গত বছরের শেষ দিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দেন। তখন তিনি বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নিয়ে তার পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের সময় তদ্বিরের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে আবার সরাসরি ফ্লাইট চালুর যে চেষ্টা করছে, যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট না হলে তা সম্ভব নয়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তরের অনুমোদন এবং এর আগে দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) থেকে ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র পেতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচলসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সব মানদণ্ড পূরণ না হলে ওই ছাড়পত্র পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ সোচ্চার ছিল। ভোটের কয়েক মাস আগে দেশটি ভিসা নীতি আরোপ করে। এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলা হয়। তবে এর আওতায় কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এই কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুর বেশ নরম হয়েছে।
এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকেরা। কেউ কেউ মনে করছেন, বাইরে সরকারের তীব্র সমালোচনা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে হয়তো কোনো সমঝোতা হয়েছে। সেটা যা-ই হোক, বেসামরিক বিমান চলাচল খাতকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক উন্নত করার একটা সম্ভাবনা দৃশ্যমান হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বোয়িংকে একেবারে ছেড়ে দিয়ে এয়ারবাসের কাছে না-ও ভিড়তে পারে সরকার। তা ছাড়া বোয়িংয়ের আরও কিছু সুবিধা আছে।
বোয়িং বনাম এয়ারবাস: কার কী প্রস্তাব
এখন বিমানের বহরে চারটি ৭৮৭-৮ ও দুটি ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যেই আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে বোয়িং আরও একটি ৭৮৭ কার্গোবাহী ড্রিমলাইনার বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এখন বিমানের কোনো কার্গোবাহী উড়োজাহাজ নেই। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে এবং দখল বাড়াতে বিমানের পণ্যবাহী উড়োজাহাজও লাগবে।
এ ছাড়া বোয়িং-নির্ভর বহরের উচ্চ সাশ্রয় সক্ষমতার কথা তুলে ধরে বিমানকে বোঝানোর চেষ্টা করছে মার্কিন কোম্পানিটি। বোয়িং বলছে, এয়ারবাস থেকে নতুন উড়োজাহাজ কিনলে বিমানকে নতুন প্রযুক্তিগত দল, পাইলট ও সিমুলেটরের জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে। এর ফলে বিমানের পরিচালন খরচ বাড়বে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এয়ারবাস। এয়ারবাস পরিচালনায় সক্ষম জনবল তৈরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির (বিএসএমআরএএউ) সঙ্গে এরই মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। শিক্ষাক্রম, উপকরণ এবং পাঠ্যক্রম সাজাতে সহায়তা করবে এয়ারবাস। লালমনিরহাটের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এয়ারবাসের প্রশিক্ষকদের দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাইলট ও প্রকৌশলীদের ক্লাসরুম প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায়ও সহায়তার পরিকল্পনা আছে তাদের।
গত বছর মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিটে বিমানের সঙ্গে দেনদরবার করেছে এয়ারবাস। এমনকি বিমানকে রাজি করাতে একটি উড়োজাহাজ প্রদর্শনীর জন্য এনে দেখানোও হয়। এর পরে বিমানকে এয়ারবাস কেনায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণসহায়তা দিতে যুক্তরাজ্যের ইউকে এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স স্কিমের সঙ্গে বিশেষ চুক্তিও হয়।
তবে বাংলাদেশে নির্বাচন এবং বোয়িং ও মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবারের মধ্যে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা নিয়ে বিমানের নতুন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে আপাতত যে এয়ারবাস কেনা হচ্ছে না, তা সরকার এরই মধ্যে ফ্রান্সকে জানিয়ে দিয়েছে। এর জন্য অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উপযোগী হলেই কেবল ফ্রান্স থেকে এয়ারবাস কেনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘এয়ারবাস কেনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে (ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে)। এটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরেও আলোচনা হয়েছে। আমাদের ইকোনমি যখন পারমিট করবে তখন আমরা পারব।’
যখনই হোক না কেন, আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় বিমানকে লাভজনক করতে হলে আরও উড়োজাহাজ কিনতেই হবে। এখন বিমান বোয়িংয়ের সঙ্গেই থাকবে নাকি এয়ারবাসকেও সঙ্গে নেবে। শেষ হাসি হাসবে কে—এয়ারবাস না বোয়িং, নাকি উভয়ে—তাই দেখার অপেক্ষা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের সঙ্গে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সম্পর্ক কয়েক দশকের পুরোনো। বিমানের বহরে বোয়িংয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য। সব উড়োজাহাজই এই মার্কিন কোম্পানির তৈরি। বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও বহু পুরোনো। তবে লাভের মুখ এখনো দেখেনি বিমান।
গত এক যুগে আকাশপথে পরিবহনের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আকাশপথে বছরে চলাচলকারী যাত্রীসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে। কিন্তু ২০১০ সালের পর মাত্র এক দশকে সেই সংখ্যা একলাফে ৬০ লাখে উন্নীত হয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা বেড়ে ৮০ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার জন্য বাড়তি রুট ও ফ্লাইট দরকার হবে। বর্ধিত চাহিদা পূরণে ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রুট চালু করতে চায় বিমান। দেড় দশক পর ইতালিতে ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বিমান। এর মধ্যে দেড় যুগ আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটেও আবার ফ্লাইট চালুর প্রচেষ্টা চলছে।
এজন্য বিমান নতুন এয়ারক্রাফট কিনবে। এখন বিমানের বহরে এয়ারবাসের কোনো উড়োজাহাজ নেই। সর্বশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ামোস এয়ারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া এয়ারবাসের এ৩৩০-২০০ উড়োজাহাজ চলত। সেটা ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেরত দেওয়া হয়।
বিমানের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজের সবই বোয়িংয়ের তৈরি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০। এসব উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান ৭টি অভ্যন্তরীণ ও ১৬টি আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করে। বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ১০টি উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
সেই সুযোগ নিয়ে এয়ারবাস বিমানের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী বছরে এই আলোচনা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরের সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে এয়ারবাস কেনার আশ্বাস দেয় সরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রও বোয়িং বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এয়ারবাস কেনার চুক্তির আশ্বাস দিলেও বোয়িং কেনার কথাও বিবেচনা করতে পারে বিমান।
বিমান কি বোয়িংয়ের সঙ্গেই থাকবে?
চলতি বছরের শুরুতে এয়ারবাসের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চিত হলেও বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাবও বিবেচনায় রেখেছে বিমান। উভয় নির্মাতাই জোর উদ্যোগে উড়োজাহাজ বিক্রির অর্ডার পেতে জোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি টেবিলে প্রলোভনের নানা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেছেন, উভয়ের (বোয়িং ও এয়ারবাস) প্রস্তাব বিমানের বিবেচনায় আছে। এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে লাভজনক হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে এয়ারক্রাফটের সুবিধাজনক দাম, বাড়তি সহায়তা ও সুবিধা বিবেচনা করবে বিমান।
বিমান বলছে, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে নতুন রুট চালুর লক্ষ্য নিয়ে আগামী বছরগুলোতে বিমান নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে আগ্রহী। মহামারির পর ভ্রমণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওয়াইড-বডি এয়ারক্রাফট বাড়াতে চায় বিমান। ৫১ বছর বয়সী বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা সব উড়োজাহাজ বোয়িং কোম্পানির। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ওয়াইড-বডি এয়ারক্র্যাফট, কিছু আছে ড্যাশ-৮ টার্বোপ্রোস।
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ দুটি এ৩৫০এফ উড়োজাহাজসহ ১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপীয় উড়োজাহাজ কোম্পানির ওপর আস্থা রাখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এয়ারবাসের ১০টি এ৩৫০ উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’
সদ্য সাবেক বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও এয়ারবাস কেনার বিষয়ে বেশ জোর দিয়েই বলে আসছিলেন। গত বছরের মাঝামাঝি রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে দুটি এয়ারবাস উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দেওয়া হতে পারে। কয়েক ধাপে ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হবে; কারিগরি কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব উড়োজাহাজ নতুন এবং পুরোনো রুটে চলাচল করবে। সব দেশের বহরেই বোয়িং এবং এয়ারবাসের উড়োজাহাজ আছে। কিন্তু আমাদের শুধু বোয়িং আছে, এয়ারবাসের একটি উড়োজাহাজও নেই।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে আরও বোয়িং বিক্রির চেষ্টা করছে। গত বছরের শেষ দিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দেন। তখন তিনি বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নিয়ে তার পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের সময় তদ্বিরের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে আবার সরাসরি ফ্লাইট চালুর যে চেষ্টা করছে, যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট না হলে তা সম্ভব নয়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তরের অনুমোদন এবং এর আগে দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) থেকে ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র পেতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচলসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সব মানদণ্ড পূরণ না হলে ওই ছাড়পত্র পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ সোচ্চার ছিল। ভোটের কয়েক মাস আগে দেশটি ভিসা নীতি আরোপ করে। এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলা হয়। তবে এর আওতায় কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এই কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুর বেশ নরম হয়েছে।
এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকেরা। কেউ কেউ মনে করছেন, বাইরে সরকারের তীব্র সমালোচনা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে হয়তো কোনো সমঝোতা হয়েছে। সেটা যা-ই হোক, বেসামরিক বিমান চলাচল খাতকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক উন্নত করার একটা সম্ভাবনা দৃশ্যমান হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বোয়িংকে একেবারে ছেড়ে দিয়ে এয়ারবাসের কাছে না-ও ভিড়তে পারে সরকার। তা ছাড়া বোয়িংয়ের আরও কিছু সুবিধা আছে।
বোয়িং বনাম এয়ারবাস: কার কী প্রস্তাব
এখন বিমানের বহরে চারটি ৭৮৭-৮ ও দুটি ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যেই আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে বোয়িং আরও একটি ৭৮৭ কার্গোবাহী ড্রিমলাইনার বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এখন বিমানের কোনো কার্গোবাহী উড়োজাহাজ নেই। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে এবং দখল বাড়াতে বিমানের পণ্যবাহী উড়োজাহাজও লাগবে।
এ ছাড়া বোয়িং-নির্ভর বহরের উচ্চ সাশ্রয় সক্ষমতার কথা তুলে ধরে বিমানকে বোঝানোর চেষ্টা করছে মার্কিন কোম্পানিটি। বোয়িং বলছে, এয়ারবাস থেকে নতুন উড়োজাহাজ কিনলে বিমানকে নতুন প্রযুক্তিগত দল, পাইলট ও সিমুলেটরের জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে। এর ফলে বিমানের পরিচালন খরচ বাড়বে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এয়ারবাস। এয়ারবাস পরিচালনায় সক্ষম জনবল তৈরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির (বিএসএমআরএএউ) সঙ্গে এরই মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। শিক্ষাক্রম, উপকরণ এবং পাঠ্যক্রম সাজাতে সহায়তা করবে এয়ারবাস। লালমনিরহাটের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এয়ারবাসের প্রশিক্ষকদের দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাইলট ও প্রকৌশলীদের ক্লাসরুম প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায়ও সহায়তার পরিকল্পনা আছে তাদের।
গত বছর মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিটে বিমানের সঙ্গে দেনদরবার করেছে এয়ারবাস। এমনকি বিমানকে রাজি করাতে একটি উড়োজাহাজ প্রদর্শনীর জন্য এনে দেখানোও হয়। এর পরে বিমানকে এয়ারবাস কেনায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণসহায়তা দিতে যুক্তরাজ্যের ইউকে এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স স্কিমের সঙ্গে বিশেষ চুক্তিও হয়।
তবে বাংলাদেশে নির্বাচন এবং বোয়িং ও মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবারের মধ্যে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা নিয়ে বিমানের নতুন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে আপাতত যে এয়ারবাস কেনা হচ্ছে না, তা সরকার এরই মধ্যে ফ্রান্সকে জানিয়ে দিয়েছে। এর জন্য অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উপযোগী হলেই কেবল ফ্রান্স থেকে এয়ারবাস কেনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘এয়ারবাস কেনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে (ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে)। এটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরেও আলোচনা হয়েছে। আমাদের ইকোনমি যখন পারমিট করবে তখন আমরা পারব।’
যখনই হোক না কেন, আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় বিমানকে লাভজনক করতে হলে আরও উড়োজাহাজ কিনতেই হবে। এখন বিমান বোয়িংয়ের সঙ্গেই থাকবে নাকি এয়ারবাসকেও সঙ্গে নেবে। শেষ হাসি হাসবে কে—এয়ারবাস না বোয়িং, নাকি উভয়ে—তাই দেখার অপেক্ষা।
দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের অস্থিরতা ও সংকটে ভুগছিল দেশ। সেটি এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে, প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় পর এখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৫২১ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত ১৪ নভেম্বর এই সভার আয়োজন করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেএসিআই পাওয়ার সলিউশন ২৬ তম পাওয়ার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে। এটি ১৪-১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। এসিআই পাওয়ার সলিউশনের এক্সপোতে অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য সব নতুন পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো। যার মধ্যে রেইকেম কেবল এক্সেসরিজ, স্নেইডার সার্কিট ব্র
১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (তৃতীয়) প্রান্তিকে দেশের ১৭টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একই সময়ে ২৩ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। এ তথ্য ৪০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির ১ জুলাই থেকে ৩০ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
২ ঘণ্টা আগে