অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর মন্টেরের একটি আর্মচেয়ার ও লেদার সোফা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম মান ওয়াহ। প্রতিষ্ঠানের নাম চীনা হলেও পণ্যের ট্যাগে ঠিকই লেখা হচ্ছে ‘মেড ইন মেক্সিকো’। এই আর্মচেয়ার ও সোফাগুলো খুব শিগগিরই সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় চেইনশপ কস্টকো, ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানির গুদাম–শোরুমে ঢুকে পড়বে।
মেক্সিকোতে চীনের এমন হাজারো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোর অর্থ লগ্নিকারী চীনা ব্যবসায়ীরা। মূলত চীনের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা এড়াতেই চীনা ব্যবসায়ীদের এমন কৌশল। বিনিয়োগস্থল মেক্সিকো হলেও মূলধন মুনাফাসমেত ঠিকই ফিরে আসছে চীনে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর মধ্যকার এই যে ত্রিমুখী বাণিজ্যিক–উৎপাদন সম্পর্ক, এটিকে বলা হয় ‘নিয়ারশোরিং’। মূলত যে দেশের বাজারে পণ্য রপ্তানি করা হবে সেই দেশের কাছাকাছি কোনো একটি দেশে উৎপাদন ব্যবস্থা স্থানান্তরকেই নিয়ারশোরিং বলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনারা এমন হাজারো কোম্পানি মেক্সিকোয় সম্প্রসারিত করেছে। এর ফলে, একই সঙ্গে যেমন পরিবহন খরচ কমেছে, তেমনি ‘মেড ইন মেক্সিকো’ হওয়ায় শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়তে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মান ওয়াহ-এর মহাব্যবস্থাপক উ কেন ওয়েই জানান, চীন থেকে ব্যবসা মেক্সিকোতে স্থানান্তরের বিষয়টি অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সব বিবেচনায়ই ইতিবাচক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে (চীনের তুলনায়) অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি উৎপাদন করতে পারি।’ মজার ব্যাপার হলো, তিনি পুরো আলাপ করেছেন স্প্যানিশে, একেবারে প্রায় স্থানীয়দের মতো উচ্চারণে।
মান ওয়াহ মেক্সিকোর মন্টেরিতে কার্যক্রম শুরু করে ২০২২ সালে। কিন্তু এরই মধ্যে দেশটিতে প্রায় ৪৫০ জনের কর্মসংস্থান করেছে কোম্পানিটি। উ কেন ওয়েই জানান, কয়েক বছরের মধ্যে তাঁদের লক্ষ্য হলো কর্মীসংখ্যা ১ হাজার ২০০-তে উন্নীত করা এবং আরও কয়েকটি কারখানা চালু করা।
মেক্সিকোয় চীনা বাণিজ্যের বেশি সুবিধাও রয়েছে। বিষয়টি উঠে এসেছে মান ওয়াহের মহাব্যবস্থাপকের কথায়। তিনি বলেন, ‘মেক্সিকোর মানুষেরা বেশ পরিশ্রমী এবং তাঁরা দ্রুত সবকিছু শিখে নেন। আমরা খুব ভালো অপারেটর পেয়েছি এবং তাঁদের উৎপাদন দক্ষতাও খুবই উঁচুমানের। তাই আমি মনে করি, শ্রমের দিকটা বিবেচনায় কৌশলগতভাবে মেক্সিকোকে বাছাই করাটা ভালো।’
এই নিয়ারশোরিং যে কেবল চীনকেই সুবিধা দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। গত বছরের জুন পর্যন্ত এর আগের বছরের তুলনায় দেশটির রপ্তানি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ২৯০ কোটি ডলারে। এই প্রবৃদ্ধি শিগগির থেমে যাবে এমন কোনো আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের শেষ দুই মাসেই যে পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে তা ২০২০ সালে সারা বছরের মোট বিনিয়োগের অর্ধেক।
মান ওয়াহ সোফা ফ্যাক্টরিটি মেক্সিকোর হফুসান নামে একটি চীন-মেক্সিকো শিল্প এলাকায় অবস্থিত। কোম্পানিটি অনেক দিন ধরেই নিজস্ব জায়গার জন্য আবেদন করছে। এমনকি উচ্চমূল্য দিয়ে হলেও নিতে রাজি। কিন্তু এলাকাটির সব প্লটই বিক্রি হয়ে গেছে। মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে যেসব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপিত হবে, সেগুলোর প্লটও বিক্রি হয়ে গেছে।
মেক্সিকোর সাবেক বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী হুয়ান কার্লোস বেকার পিনেদা বলেন, ‘মেক্সিকোয় যারা (চীনা ব্যবসায়ীরা) মূলধন আনেন বা বিনিয়োগ করেন তার কাঠামোগত মূল কারণ হলো—এখানে এই দেশে থেকে যাওয়া। আমি এমন কোনো লক্ষণ দেখছি না যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে তা শিগগির থেমে যাবে।’
পিনেদা এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন, ‘তবে মেক্সিকোয় চীনা মূলধনের প্রবেশ হয়তো কিছু দেশের নীতিমালার জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম অনুসারে সেই অর্থ দিয়ে নির্মিত সব পণ্যই যেকোনো বিবেচনায় মেক্সিকান।’
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই নিয়মই চীনকে মেক্সিকোয় পা রাখার সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে চীনকে হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মেক্সিকো। যদিও বিষয়টি একপ্রকার প্রতীকী অগ্রগতি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
মেক্সিকোর এই বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি হতে পেরেছে ‘নিয়ারশোরিং’-এর কারণে। চীন তো আছেই, খোদ মার্কিন কোম্পানিগুলোও মেক্সিকোতে বিনিয়োগ করছে বিপুল পরিমাণে। বিশেষ করে যেসব মার্কিন কোম্পানি এশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে, তারা নতুন উৎপাদন হাব হিসেবে বেছে নিয়েছে মেক্সিকোকে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কও তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন মেক্সিকোতে। তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার ‘গিগাফ্যাক্টরি’ স্থাপন করা হতে পারে মন্টেরির উপকণ্ঠে। এ বছরই সেই ঘোষণা দিতে পারেন মাস্ক। তবে ১ হাজার কোটি ডলারের সেই প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান গতিপথ বিবেচনায় টেসলার এই উদ্যোগ কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।
মেক্সিকোতে চীনা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক যে টানাপোড়েন সেটিকেও উসকে দিতে পারে। এ বিষয়ে মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের এনরিক ডুসেল বলেন, ‘এলাকার খানদানি ধনকুবের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) শহরের নব্য ধনীর (চীন) সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছে। বিপরীতে মেক্সিকোর বর্তমান সরকারের এই সমস্যা নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো কৌশল নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে জো বাইডেন বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন না কেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে খুব একটা উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি আসতে পারে। এনরিক ডুসেল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-চীন ত্রিমুখী সম্পর্ককে ‘নিয়ারশোরিং’ না বলে বরং ‘সিকিউরিটি শোরিং’ বলা ভালো। কারণ, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সবার আগে তার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিই বিবেচনা করবে। ফলে, এই দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্বে মেক্সিকো মাঝপথে ধরা খেয়ে যাবে কি না সে বিষয়ে দেশটিকে সতর্ক থাকতে হবে।
এনরিক ডুসেল বলেন, এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মেক্সিকো চীনকে স্বাগত জানাতে ‘মেক্সিকোয় স্বাগত’ বোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর সম্পর্ক বিবেচনায় মধ্যবর্তী মেয়াদে এই বিষয়টি যে ভালো হবে না সেটি উপলব্ধি করার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার দরকার নেই!
তবে সবাই ডুসেলের মতো হতাশাবাদী নন। অনেকেই চীনের সঙ্গে মেক্সিকোর সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে বেশ ইতিবাচক। হুয়ান কার্লোস বেকার পিনেদার মতে, ‘আমার প্রশ্ন হলো, এই প্রবণতা (মেক্সিকোয় চীনা বিনিয়োগের ধারা) চলবে কি না এবং এই প্রবণতার কতটা সুবিধা আমরা নিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম ও কোস্টারিকাতেও মানুষ একই ধরনের (চীনা বিনিয়োগ নিয়ে) আলোচনা করছে। সুতরাং, যে শর্তগুলো (বিনিয়োগকারীদের) বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসেছে, সেগুলোর সাপেক্ষে করপোরেট ও সরকারি সিদ্ধান্তগুলোকে সমন্বিত করে দীর্ঘমেয়াদে সেই প্রবণতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে মেক্সিকোকে।’
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর মন্টেরের একটি আর্মচেয়ার ও লেদার সোফা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম মান ওয়াহ। প্রতিষ্ঠানের নাম চীনা হলেও পণ্যের ট্যাগে ঠিকই লেখা হচ্ছে ‘মেড ইন মেক্সিকো’। এই আর্মচেয়ার ও সোফাগুলো খুব শিগগিরই সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় চেইনশপ কস্টকো, ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানির গুদাম–শোরুমে ঢুকে পড়বে।
মেক্সিকোতে চীনের এমন হাজারো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোর অর্থ লগ্নিকারী চীনা ব্যবসায়ীরা। মূলত চীনের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা এড়াতেই চীনা ব্যবসায়ীদের এমন কৌশল। বিনিয়োগস্থল মেক্সিকো হলেও মূলধন মুনাফাসমেত ঠিকই ফিরে আসছে চীনে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর মধ্যকার এই যে ত্রিমুখী বাণিজ্যিক–উৎপাদন সম্পর্ক, এটিকে বলা হয় ‘নিয়ারশোরিং’। মূলত যে দেশের বাজারে পণ্য রপ্তানি করা হবে সেই দেশের কাছাকাছি কোনো একটি দেশে উৎপাদন ব্যবস্থা স্থানান্তরকেই নিয়ারশোরিং বলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনারা এমন হাজারো কোম্পানি মেক্সিকোয় সম্প্রসারিত করেছে। এর ফলে, একই সঙ্গে যেমন পরিবহন খরচ কমেছে, তেমনি ‘মেড ইন মেক্সিকো’ হওয়ায় শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়তে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মান ওয়াহ-এর মহাব্যবস্থাপক উ কেন ওয়েই জানান, চীন থেকে ব্যবসা মেক্সিকোতে স্থানান্তরের বিষয়টি অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সব বিবেচনায়ই ইতিবাচক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে (চীনের তুলনায়) অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি উৎপাদন করতে পারি।’ মজার ব্যাপার হলো, তিনি পুরো আলাপ করেছেন স্প্যানিশে, একেবারে প্রায় স্থানীয়দের মতো উচ্চারণে।
মান ওয়াহ মেক্সিকোর মন্টেরিতে কার্যক্রম শুরু করে ২০২২ সালে। কিন্তু এরই মধ্যে দেশটিতে প্রায় ৪৫০ জনের কর্মসংস্থান করেছে কোম্পানিটি। উ কেন ওয়েই জানান, কয়েক বছরের মধ্যে তাঁদের লক্ষ্য হলো কর্মীসংখ্যা ১ হাজার ২০০-তে উন্নীত করা এবং আরও কয়েকটি কারখানা চালু করা।
মেক্সিকোয় চীনা বাণিজ্যের বেশি সুবিধাও রয়েছে। বিষয়টি উঠে এসেছে মান ওয়াহের মহাব্যবস্থাপকের কথায়। তিনি বলেন, ‘মেক্সিকোর মানুষেরা বেশ পরিশ্রমী এবং তাঁরা দ্রুত সবকিছু শিখে নেন। আমরা খুব ভালো অপারেটর পেয়েছি এবং তাঁদের উৎপাদন দক্ষতাও খুবই উঁচুমানের। তাই আমি মনে করি, শ্রমের দিকটা বিবেচনায় কৌশলগতভাবে মেক্সিকোকে বাছাই করাটা ভালো।’
এই নিয়ারশোরিং যে কেবল চীনকেই সুবিধা দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। গত বছরের জুন পর্যন্ত এর আগের বছরের তুলনায় দেশটির রপ্তানি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ২৯০ কোটি ডলারে। এই প্রবৃদ্ধি শিগগির থেমে যাবে এমন কোনো আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে না। গত বছরের শেষ দুই মাসেই যে পরিমাণ বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে তা ২০২০ সালে সারা বছরের মোট বিনিয়োগের অর্ধেক।
মান ওয়াহ সোফা ফ্যাক্টরিটি মেক্সিকোর হফুসান নামে একটি চীন-মেক্সিকো শিল্প এলাকায় অবস্থিত। কোম্পানিটি অনেক দিন ধরেই নিজস্ব জায়গার জন্য আবেদন করছে। এমনকি উচ্চমূল্য দিয়ে হলেও নিতে রাজি। কিন্তু এলাকাটির সব প্লটই বিক্রি হয়ে গেছে। মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে যেসব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপিত হবে, সেগুলোর প্লটও বিক্রি হয়ে গেছে।
মেক্সিকোর সাবেক বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী হুয়ান কার্লোস বেকার পিনেদা বলেন, ‘মেক্সিকোয় যারা (চীনা ব্যবসায়ীরা) মূলধন আনেন বা বিনিয়োগ করেন তার কাঠামোগত মূল কারণ হলো—এখানে এই দেশে থেকে যাওয়া। আমি এমন কোনো লক্ষণ দেখছি না যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে তা শিগগির থেমে যাবে।’
পিনেদা এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে আরও বলেন, ‘তবে মেক্সিকোয় চীনা মূলধনের প্রবেশ হয়তো কিছু দেশের নীতিমালার জন্য অস্বস্তিকর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম অনুসারে সেই অর্থ দিয়ে নির্মিত সব পণ্যই যেকোনো বিবেচনায় মেক্সিকান।’
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই নিয়মই চীনকে মেক্সিকোয় পা রাখার সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে চীনকে হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মেক্সিকো। যদিও বিষয়টি একপ্রকার প্রতীকী অগ্রগতি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
মেক্সিকোর এই বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি হতে পেরেছে ‘নিয়ারশোরিং’-এর কারণে। চীন তো আছেই, খোদ মার্কিন কোম্পানিগুলোও মেক্সিকোতে বিনিয়োগ করছে বিপুল পরিমাণে। বিশেষ করে যেসব মার্কিন কোম্পানি এশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে, তারা নতুন উৎপাদন হাব হিসেবে বেছে নিয়েছে মেক্সিকোকে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কও তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন মেক্সিকোতে। তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার ‘গিগাফ্যাক্টরি’ স্থাপন করা হতে পারে মন্টেরির উপকণ্ঠে। এ বছরই সেই ঘোষণা দিতে পারেন মাস্ক। তবে ১ হাজার কোটি ডলারের সেই প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান গতিপথ বিবেচনায় টেসলার এই উদ্যোগ কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।
মেক্সিকোতে চীনা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক যে টানাপোড়েন সেটিকেও উসকে দিতে পারে। এ বিষয়ে মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের এনরিক ডুসেল বলেন, ‘এলাকার খানদানি ধনকুবের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) শহরের নব্য ধনীর (চীন) সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছে। বিপরীতে মেক্সিকোর বর্তমান সরকারের এই সমস্যা নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো কৌশল নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে জো বাইডেন বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন না কেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে খুব একটা উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি আসতে পারে। এনরিক ডুসেল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-চীন ত্রিমুখী সম্পর্ককে ‘নিয়ারশোরিং’ না বলে বরং ‘সিকিউরিটি শোরিং’ বলা ভালো। কারণ, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সবার আগে তার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিই বিবেচনা করবে। ফলে, এই দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্বে মেক্সিকো মাঝপথে ধরা খেয়ে যাবে কি না সে বিষয়ে দেশটিকে সতর্ক থাকতে হবে।
এনরিক ডুসেল বলেন, এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মেক্সিকো চীনকে স্বাগত জানাতে ‘মেক্সিকোয় স্বাগত’ বোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর সম্পর্ক বিবেচনায় মধ্যবর্তী মেয়াদে এই বিষয়টি যে ভালো হবে না সেটি উপলব্ধি করার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার দরকার নেই!
তবে সবাই ডুসেলের মতো হতাশাবাদী নন। অনেকেই চীনের সঙ্গে মেক্সিকোর সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে বেশ ইতিবাচক। হুয়ান কার্লোস বেকার পিনেদার মতে, ‘আমার প্রশ্ন হলো, এই প্রবণতা (মেক্সিকোয় চীনা বিনিয়োগের ধারা) চলবে কি না এবং এই প্রবণতার কতটা সুবিধা আমরা নিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম ও কোস্টারিকাতেও মানুষ একই ধরনের (চীনা বিনিয়োগ নিয়ে) আলোচনা করছে। সুতরাং, যে শর্তগুলো (বিনিয়োগকারীদের) বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসেছে, সেগুলোর সাপেক্ষে করপোরেট ও সরকারি সিদ্ধান্তগুলোকে সমন্বিত করে দীর্ঘমেয়াদে সেই প্রবণতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে মেক্সিকোকে।’
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের অস্থিরতা ও সংকটে ভুগছিল দেশ। সেটি এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে, প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় পর এখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
৪ মিনিট আগেসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৫২১ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত ১৪ নভেম্বর এই সভার আয়োজন করা হয়।
১১ মিনিট আগেএসিআই পাওয়ার সলিউশন ২৬ তম পাওয়ার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে। এটি ১৪-১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। এসিআই পাওয়ার সলিউশনের এক্সপোতে অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য সব নতুন পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো। যার মধ্যে রেইকেম কেবল এক্সেসরিজ, স্নেইডার সার্কিট ব্র
২৬ মিনিট আগেচলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (তৃতীয়) প্রান্তিকে দেশের ১৭টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একই সময়ে ২৩ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। এ তথ্য ৪০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির ১ জুলাই থেকে ৩০ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
১ ঘণ্টা আগে