ফারুক মেহেদী, ঢাকা
নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশাও ছিল নতুন কিছুর; কিন্তু তা আর হলো না। পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটলেন নতুন অর্থমন্ত্রী। করের জাল বিছিয়ে চাপ বাড়ালেন জনগণের ওপর। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফাঁদে পড়ে মানুষের যে ত্রাহি অবস্থা, তা থেকে মুক্তির কোনো দিশা দেখাতে পারলেন না। অথচ ঠিকই ছাড় দিলেন কালোটাকার মালিকদের। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী—কেউই।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সংকটের সময়ে বাজেটের আকার নিয়ে যেমন কথা হচ্ছে, তেমনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর গতানুগতিক বাজেটে সৃজনশীল কিছু না থাকার বিষয়টিও সামনে এসেছে। পাশাপাশি সমালোচনা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা ও কালো-টাকার বৈধতা নিয়েও। কেউ কেউ বিপুল অঙ্কের ব্যাংকঋণ, শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপসহ মোটাদাগে অসংখ্য পণ্যে শুল্ক-কর বসিয়ে মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানোর বিষয়টি নিয়েও সরব রয়েছেন।
বর্তমানে দেশে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে আনার সংকল্প নিয়েছেন। যদিও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে কীভাবে কমবে, সে পথনকশা নেই তাঁর প্রস্তাবিত বাজেটে।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কিছুই পেলাম না বাজেটে। বাজারে এমনিতেই জিনিসপত্রের লাগামহীন দাম। এর মধ্যে শুল্ক-কর আরোপের ফলে আরেক দফা দাম বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। উচিত ছিল কার্যকর কিছু পদক্ষেপ জানানো।’
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কার কার গুদামে মজুত করে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেগুলো
খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সব রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে হবে। শ্রীলঙ্কা যদি আকাশে উঠে যাওয়া মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪-৫ শতাংশের ঘরে আনতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারি না।’
এফিবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই তা ভোক্তার ওপরই পড়ে। আপনি যতই ট্যাক্স বাড়ান, ঋণ বাড়ান—যা কিছুই করবেন না কেন, খরচ বাড়বে জনগণের।
তা পণ্যের ওপর যোগ হয়ে দাম বাড়বে। সরকার যতই বলুক, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পারবে—আসলে তো মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে।
অবাস্তব রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
বাজেটে গতানুগতিকভাবে আবারও বড় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আগেরটির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায়ও ১০ মাসে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি। সেখানে নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে অর্থমন্ত্রী আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে অনেক করছাড় কমিয়েছেন। নতুন নতুন খাতে কর বসিয়েছেন। মানুষের নিত্য ব্যবহার হয়, এমন অনেক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়িয়েছেন। ফলে সামনে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। নতুন করদাতা খোঁজা বা কর ফাঁকিবাজদের করের জালে আনার তেমন পদক্ষেপ নেই বলেও সমালোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এনবিআরের আয়ের নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ‘বাজেটে কর ফাঁকিবাজদের ধরতে তেমন কোনো কৌশলের দেখা পাইনি। নতুন করদাতা খুঁজতে হবে। আর বিদ্যমান কর কাঠামোতে কোনোভাবেই বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়। এ জন্য সৃজনশীল করনীতির দরকার ছিল। বাজেটে এ নিয়ে নতুন তেমন কিছুই দেখিনি।’
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণে নির্ভরতা
অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ব্যাংক থেকেই ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সরকারের পৌনে ৭ শতাংশের উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্য, তা পূরণ হবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘সংকটের সময় বাজেটটি আরও ছোট করা দরকার ছিল। তাতে রাজস্ব আয়ের ওপর চাপ কম হতো। আর ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। এখন সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ধার করবে। ফলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।’
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ
বাজেটে বিনা প্রশ্নে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সৎ করদাতার ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। অভিযোগ করা হচ্ছে, এতে যাঁরা সৎ উপায়ে আয় করেন তাঁরা ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর দেবেন, এটা তাঁদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে। এটা অনৈতিক। সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালোটাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের অনৈতিক সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিমও মনে করেন, এ ধরনের সুযোগ অনৈতিক কাজ, এটা হওয়া উচিত নয়। সম্ভবত সরকার বাধ্য হয়েই সুযোগটি দিয়েছে। কারণ দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকিয়ে অর্থনীতির মূলধারায় বিনিয়োগের সুযোগ দিতেই এটা করা হয়ে থাকতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে চুরি করবে। তারপর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করবে। এটা তো চোরদের উৎসাহিত করা এবং সৎ লোকদের সাজা দেওয়ার সমান।’
শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক
এত দিন শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা। নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে খুবই সাদামাটা একটি বাজেট। সত্যি বলতে, আমি এতে কিছুই পাইনি। শুধু শিল্পের কাঁচামালেই নয়; বিভিন্ন খাতে কর আরোপ করা হয়েছে।
এমন একটা সময়ে এটা দরকার ছিল না।’ একই বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইমেনের প্রেসিডেন্ট মৌসুমী ইসলাম বলেন, শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক বসালে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। খরচ বেড়ে যাবে। ট্যারিফে যে সমতা থাকার কথা ছিল, সেটা রাখা হয়নি। এতে দেশীয় শিল্পের প্রসার বাধাগ্রস্ত হবে।
সবার জন্য বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম
সরকারি চাকরিতে ঢুকলেই বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে থাকতে হবে বলে বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চলতি অর্থবছরে চালু হলেও এর নানা প্যাকেজে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ নিয়ে আন্দোলনও করছেন। তবে সাবেক সচিব ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা হতে পারে। তবে দেখতে হবে সুযোগ-সুবিধা যাতে না কমে; বরং সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবেশে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।’
সহায়তার বদলে পুঁজিবাজারে গেইন ট্যাক্স
বাজেটে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয় হলে ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপের কথা বলেছেন। তিনি এমন এক সময়ে এ প্রস্তাব দিলেন, যখন পুঁজিবাজারে বড় পতনের ফলে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাজারে যেখানে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করার কথা বা প্রণোদনা দেওয়ার দাবি, সেখানে নতুন করে গেইন ট্যাক্স বাজারকে আরও অস্থির করবে বলে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সহায়ক নীতি-সহায়তা নেই জানিয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে কিছু নেই। নীতি-সহায়তা না দিলে হবে না। এমন সময় আমাদের শেয়ারবাজার ছিল জিডিপির ৩৩ শতাংশ। এখন ১২ শতাংশে চলে।’
নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশাও ছিল নতুন কিছুর; কিন্তু তা আর হলো না। পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটলেন নতুন অর্থমন্ত্রী। করের জাল বিছিয়ে চাপ বাড়ালেন জনগণের ওপর। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফাঁদে পড়ে মানুষের যে ত্রাহি অবস্থা, তা থেকে মুক্তির কোনো দিশা দেখাতে পারলেন না। অথচ ঠিকই ছাড় দিলেন কালোটাকার মালিকদের। ফলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী—কেউই।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। সংকটের সময়ে বাজেটের আকার নিয়ে যেমন কথা হচ্ছে, তেমনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর গতানুগতিক বাজেটে সৃজনশীল কিছু না থাকার বিষয়টিও সামনে এসেছে। পাশাপাশি সমালোচনা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা ও কালো-টাকার বৈধতা নিয়েও। কেউ কেউ বিপুল অঙ্কের ব্যাংকঋণ, শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপসহ মোটাদাগে অসংখ্য পণ্যে শুল্ক-কর বসিয়ে মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানোর বিষয়টি নিয়েও সরব রয়েছেন।
বর্তমানে দেশে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে আনার সংকল্প নিয়েছেন। যদিও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে কীভাবে কমবে, সে পথনকশা নেই তাঁর প্রস্তাবিত বাজেটে।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কিছুই পেলাম না বাজেটে। বাজারে এমনিতেই জিনিসপত্রের লাগামহীন দাম। এর মধ্যে শুল্ক-কর আরোপের ফলে আরেক দফা দাম বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। উচিত ছিল কার্যকর কিছু পদক্ষেপ জানানো।’
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কার কার গুদামে মজুত করে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেগুলো
খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সব রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে হবে। শ্রীলঙ্কা যদি আকাশে উঠে যাওয়া মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪-৫ শতাংশের ঘরে আনতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারি না।’
এফিবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই তা ভোক্তার ওপরই পড়ে। আপনি যতই ট্যাক্স বাড়ান, ঋণ বাড়ান—যা কিছুই করবেন না কেন, খরচ বাড়বে জনগণের।
তা পণ্যের ওপর যোগ হয়ে দাম বাড়বে। সরকার যতই বলুক, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পারবে—আসলে তো মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে।
অবাস্তব রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
বাজেটে গতানুগতিকভাবে আবারও বড় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আগেরটির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায়ও ১০ মাসে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি। সেখানে নতুন অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে অর্থমন্ত্রী আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে অনেক করছাড় কমিয়েছেন। নতুন নতুন খাতে কর বসিয়েছেন। মানুষের নিত্য ব্যবহার হয়, এমন অনেক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়িয়েছেন। ফলে সামনে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। নতুন করদাতা খোঁজা বা কর ফাঁকিবাজদের করের জালে আনার তেমন পদক্ষেপ নেই বলেও সমালোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এনবিআরের আয়ের নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ‘বাজেটে কর ফাঁকিবাজদের ধরতে তেমন কোনো কৌশলের দেখা পাইনি। নতুন করদাতা খুঁজতে হবে। আর বিদ্যমান কর কাঠামোতে কোনোভাবেই বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়। এ জন্য সৃজনশীল করনীতির দরকার ছিল। বাজেটে এ নিয়ে নতুন তেমন কিছুই দেখিনি।’
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণে নির্ভরতা
অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ব্যাংক থেকেই ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সরকারের পৌনে ৭ শতাংশের উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্য, তা পূরণ হবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘সংকটের সময় বাজেটটি আরও ছোট করা দরকার ছিল। তাতে রাজস্ব আয়ের ওপর চাপ কম হতো। আর ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। এখন সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ধার করবে। ফলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।’
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ
বাজেটে বিনা প্রশ্নে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সৎ করদাতার ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। অভিযোগ করা হচ্ছে, এতে যাঁরা সৎ উপায়ে আয় করেন তাঁরা ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর দেবেন, এটা তাঁদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে। এটা অনৈতিক। সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালোটাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের অনৈতিক সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিমও মনে করেন, এ ধরনের সুযোগ অনৈতিক কাজ, এটা হওয়া উচিত নয়। সম্ভবত সরকার বাধ্য হয়েই সুযোগটি দিয়েছে। কারণ দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকিয়ে অর্থনীতির মূলধারায় বিনিয়োগের সুযোগ দিতেই এটা করা হয়ে থাকতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে চুরি করবে। তারপর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করবে। এটা তো চোরদের উৎসাহিত করা এবং সৎ লোকদের সাজা দেওয়ার সমান।’
শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক
এত দিন শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা। নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে খুবই সাদামাটা একটি বাজেট। সত্যি বলতে, আমি এতে কিছুই পাইনি। শুধু শিল্পের কাঁচামালেই নয়; বিভিন্ন খাতে কর আরোপ করা হয়েছে।
এমন একটা সময়ে এটা দরকার ছিল না।’ একই বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইমেনের প্রেসিডেন্ট মৌসুমী ইসলাম বলেন, শিল্পের কাঁচামালে ১ শতাংশ শুল্ক বসালে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। খরচ বেড়ে যাবে। ট্যারিফে যে সমতা থাকার কথা ছিল, সেটা রাখা হয়নি। এতে দেশীয় শিল্পের প্রসার বাধাগ্রস্ত হবে।
সবার জন্য বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম
সরকারি চাকরিতে ঢুকলেই বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে থাকতে হবে বলে বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চলতি অর্থবছরে চালু হলেও এর নানা প্যাকেজে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ নিয়ে আন্দোলনও করছেন। তবে সাবেক সচিব ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা হতে পারে। তবে দেখতে হবে সুযোগ-সুবিধা যাতে না কমে; বরং সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবেশে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।’
সহায়তার বদলে পুঁজিবাজারে গেইন ট্যাক্স
বাজেটে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয় হলে ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপের কথা বলেছেন। তিনি এমন এক সময়ে এ প্রস্তাব দিলেন, যখন পুঁজিবাজারে বড় পতনের ফলে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাজারে যেখানে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করার কথা বা প্রণোদনা দেওয়ার দাবি, সেখানে নতুন করে গেইন ট্যাক্স বাজারকে আরও অস্থির করবে বলে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সহায়ক নীতি-সহায়তা নেই জানিয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে কিছু নেই। নীতি-সহায়তা না দিলে হবে না। এমন সময় আমাদের শেয়ারবাজার ছিল জিডিপির ৩৩ শতাংশ। এখন ১২ শতাংশে চলে।’
দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের অস্থিরতা ও সংকটে ভুগছিল দেশ। সেটি এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে, প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় পর এখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
২৪ মিনিট আগেসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৫২১ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত ১৪ নভেম্বর এই সভার আয়োজন করা হয়।
৩০ মিনিট আগেএসিআই পাওয়ার সলিউশন ২৬ তম পাওয়ার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে। এটি ১৪-১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। এসিআই পাওয়ার সলিউশনের এক্সপোতে অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য সব নতুন পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো। যার মধ্যে রেইকেম কেবল এক্সেসরিজ, স্নেইডার সার্কিট ব্র
১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (তৃতীয়) প্রান্তিকে দেশের ১৭টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একই সময়ে ২৩ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। এ তথ্য ৪০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির ১ জুলাই থেকে ৩০ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
১ ঘণ্টা আগে