অনলাইন ডেস্ক
আইফোন নির্মাতা ফক্সকন নতুন করে ব্যবসা কৌশল সাজাচ্ছে। চীন থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ব্যবসার ক্ষেত্র পরিবর্তন বড় ঝুঁকি হলেও ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের তিক্ত সম্পর্কের মধ্য তাইওয়ানভিত্তিক এই কোম্পানি আর কোনো পথ দেখছে না।
১৯৭৪ সালে ফক্সকন বা হন হাই টেকনোলজি গ্রুপ নামে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু করেছিল। শুরুতে টেলিভিশনের নব বা চাবি তৈরি করত। এখন এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি, যার বার্ষিক আয় ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আইফোন থেকে আইম্যাকস—পর্যন্ত অ্যাপলের অর্ধেকের বেশি পণ্য তৈরি করে ফক্সকন। এর বাইরে মাইক্রোসফট, সনি, ডেল এবং অ্যামাজনকের পণ্য সরবরাহ করে এটি।
কয়েক দশক ধরে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর চাহিদামাফিক পণ্য সরবরাহ করে সুনাম কেড়েছে এই কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের নকশা করে চীনে তৈরির পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হতো। এভাবেই ছোট কারখানা থেকে আজকের দুনিয়ার টেক-জায়ান্টে পরিণত হয়েছে ফক্সকন।
কিন্তু ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে ফক্সকনের কিছুটা জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। সহজ কথায়, বিশ্বের বড় দুটি অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে বিপদেই আছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাণিজ্য থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধ পর্যন্ত নানা বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধ আছে। তবে সবচেয়ে বড় বিরোধের কেন্দ্র তাইওয়ান, যেখানে ফক্সকনের সদর দপ্তর।
এমন প্রেক্ষাপটে কোম্পানির সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে—তা সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ফক্সকনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইয়াং লিউ।
ইয়াং লিউ বলেন, চলমান উৎপাদন চীন থেকে সরিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের এই পরিকল্পনায় এক দশকের মধ্য কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক যেহেতু দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সবচেয়ে বাজে পরিণতি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফক্সকন।
৬৭ বছর বয়সী লিউ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দুই দেশের নেতারা যেই সিদ্ধান্ত নেবেন তা শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যই নেবেন। কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে খারাপ পরিণতিই মাথায় রাখি।’
তাইওয়ানকে নিজের বলে দাবি করে আসছে চীন। পরিস্থিতি এখন যেমন, তাতে বেইজিং যেকোনো সময় স্বশাসিত দেশটিকে অবরুদ্ধ করে দিতে পারে অথবা সেখানে আগ্রাসনও চালাতে পারে।
লিউ বলেন, ‘ব্যবসা নিরবচ্ছিন্ন রাখার পরিকল্পনা’ চলছে। এর মধ্যেই বেশ কিছু কারখানা চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী উৎপাদন মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী’ বলতে সম্ভবত ফক্সকনের তৈরি সার্ভারকে বুঝিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের জন্য ব্যবহৃত এই পণ্যে ‘সংবেদনশীল তথ্য’ থাকতে পারে।
দুই দেশের মাঝে বন্দিদশা
তাইওয়ান নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিন ধরে চললেও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘পুনরায় একত্রীকরণের’ ডাক নতুন করে বিবাদের আগুনে ঘি ঢালছে। দুই দেশের মধ্যে বারবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু চীন তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ করলে বা হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেবে না বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরব আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিক তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্যও দিয়েছেন। যদিও হোয়াইট হাউস তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, তারা তাইপে নয়, বেইজিংয়ের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে।
এই সপ্তাহ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন সফরের কথা রয়েছে। এই সফরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছেন অনেকেই। তবে সংঘাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এক মার্কিন জেনারেলের ধারণা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দুই দেশের মধ্য সামরিক সংঘাত হতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর শিহোকো গোটো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখানে ফক্সকন উভয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু শেষমেশ বিজয়ী হবে একজনই।’
কিন্তু বিষয়টা ‘তত সরল’ বলে মনে করেন না লিউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশা করে চীনে পণ্য তৈরির যে মডেল ফক্সকন অনুসরণ করে, তার দিন শেষ হতে বহু দেরি।
লিউ বলেন, ‘আমরা প্রচুর কর্মী নিয়োগ করি। চীনসহ বেশির ভাগ দেশ তাদের কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে ফক্সকনের মতো কোম্পানিকে চীনের দরকার আছে।’
পশ্চিমারা বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানিকে ব্যবসা ঝুঁকিমুক্ত করতে চীন থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি।
লিউ বলেন, ‘চীন থেকে উৎপাদন সরাতে কিছু বিদেশি গ্রাহকের কাছ থেকে চাপ এসেছিল। তবে এটি তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, ফক্সকনের নয়। ওই সব কোম্পানির ওপর সরকারের চাপ ছিল। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তাঁরা আমাদের জানাবে।’
কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ
ভূ-রাজনীতি বাদ দিলেও চীন থেকে ব্যবসা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হবে কোভিড-১৯। ২০২২ সালের শেষ দিকে কঠোর কোভিড নীতি, কোয়ারেন্টাইনের জায়গার অভাব এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে ঝেংজুতে ফক্সকনের কারখানায় বিক্ষোভ ও দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। তখন বিশ্বে আইফোন যন্ত্রাংশ তৈরির বৃহত্তম কারখানা ছেড়ে যায় ফক্সকনের অনেক কর্মী।
এ বিষয়ে লিউ বলেন, করোনাকালে বহির্বিশ্বে চীনের যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা পেছনের সত্য অনেকেই জানেন না। মূলত বেইজিংয়ের কঠোর কোভিড নীতির কারণে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছিল শহরগুলো।
তবে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানে পরিস্থিতিকে অন্যভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল স্বীকার করে বলেন, ‘যদি একই পরিস্থিতি আবার দেখা দেয়, আমি সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এমনকি অ্যাপলের মতো ক্লায়েন্টদের হারালেও এই সিদ্ধান্ত অটল থাকব।’
তবে কোম্পানির সাফল্য অবশ্যই তার নামীদামি গ্রাহকদের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু এখানে গ্রাহকরাই ফক্সকনের কাছে আসতে একরকম বাধ্য। বিষয়টি স্পষ্ট করে বললে, চীনে ৬০ শতাংশ আইফোন তৈরি করে ফক্সকন। পাশাপাশি চীনের কারখানাগুলো আইফোনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ক্যামেরা মডিউল, কানেকটর ও ফোনের ব্যাক পার্ট তৈরি করে থাকে।
চাকার ওপর আইফোন
ফক্সকনের পরবর্তী বাজিমাত বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো দিয়ে হবে বলে লিউ আশা করছেন। বড় আইফোন আকৃতির বিশাল বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে লিউ বলেন, ‘কার গাড়ি একটি বড় আইফোন। আমরা এর সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত।’
বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা মেটাতে চকচকে সাদা ইলেকট্রিক এসইউভি কার গাড়ি ইতিমধ্যে বানিয়েছে ফক্সকন। এ বিষয়ে লিউ বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আমাদের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এত দিন পৃথিবীতে শুধু গ্যাস বা ডিজেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিন (এমভি) ছিল। কিন্তু আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নিয়ে আসছি, যা অবশ্যই সাড়া ফেলবে।’
ফক্সকন আগামী কয়েক বছরে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ববাজারের প্রায় ৫ শতাংশ দখল করার আশা করছেন। একটি বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছেন তাঁরা। কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি মডেল তৈরি করেছে। কিন্তু লিউ আশাবাদী যে এটাই সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির বিষয়ে লিউ বলেন, ‘এক জায়গায় ইভি (বৈদ্যুতিক গাড়ি) বানানোর কোনো মানে হয় না, গাড়ির জন্য আঞ্চলিক উৎপাদন খুবই স্বাভাবিক। ফক্সকন গাড়ির কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং সম্ভবত ভারতেও হবে।’
বিবিসি অবলম্বনে আব্দুল বাছেদ
আইফোন নির্মাতা ফক্সকন নতুন করে ব্যবসা কৌশল সাজাচ্ছে। চীন থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ব্যবসার ক্ষেত্র পরিবর্তন বড় ঝুঁকি হলেও ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের তিক্ত সম্পর্কের মধ্য তাইওয়ানভিত্তিক এই কোম্পানি আর কোনো পথ দেখছে না।
১৯৭৪ সালে ফক্সকন বা হন হাই টেকনোলজি গ্রুপ নামে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু করেছিল। শুরুতে টেলিভিশনের নব বা চাবি তৈরি করত। এখন এটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি, যার বার্ষিক আয় ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আইফোন থেকে আইম্যাকস—পর্যন্ত অ্যাপলের অর্ধেকের বেশি পণ্য তৈরি করে ফক্সকন। এর বাইরে মাইক্রোসফট, সনি, ডেল এবং অ্যামাজনকের পণ্য সরবরাহ করে এটি।
কয়েক দশক ধরে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর চাহিদামাফিক পণ্য সরবরাহ করে সুনাম কেড়েছে এই কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের নকশা করে চীনে তৈরির পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হতো। এভাবেই ছোট কারখানা থেকে আজকের দুনিয়ার টেক-জায়ান্টে পরিণত হয়েছে ফক্সকন।
কিন্তু ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে ফক্সকনের কিছুটা জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। সহজ কথায়, বিশ্বের বড় দুটি অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে বিপদেই আছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাণিজ্য থেকে শুরু করে ইউক্রেনের যুদ্ধ পর্যন্ত নানা বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধ আছে। তবে সবচেয়ে বড় বিরোধের কেন্দ্র তাইওয়ান, যেখানে ফক্সকনের সদর দপ্তর।
এমন প্রেক্ষাপটে কোম্পানির সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে—তা সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ফক্সকনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইয়াং লিউ।
ইয়াং লিউ বলেন, চলমান উৎপাদন চীন থেকে সরিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের এই পরিকল্পনায় এক দশকের মধ্য কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক যেহেতু দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সবচেয়ে বাজে পরিণতি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফক্সকন।
৬৭ বছর বয়সী লিউ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দুই দেশের নেতারা যেই সিদ্ধান্ত নেবেন তা শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যই নেবেন। কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে খারাপ পরিণতিই মাথায় রাখি।’
তাইওয়ানকে নিজের বলে দাবি করে আসছে চীন। পরিস্থিতি এখন যেমন, তাতে বেইজিং যেকোনো সময় স্বশাসিত দেশটিকে অবরুদ্ধ করে দিতে পারে অথবা সেখানে আগ্রাসনও চালাতে পারে।
লিউ বলেন, ‘ব্যবসা নিরবচ্ছিন্ন রাখার পরিকল্পনা’ চলছে। এর মধ্যেই বেশ কিছু কারখানা চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী উৎপাদন মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তাসামগ্রী’ বলতে সম্ভবত ফক্সকনের তৈরি সার্ভারকে বুঝিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের জন্য ব্যবহৃত এই পণ্যে ‘সংবেদনশীল তথ্য’ থাকতে পারে।
দুই দেশের মাঝে বন্দিদশা
তাইওয়ান নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিন ধরে চললেও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘পুনরায় একত্রীকরণের’ ডাক নতুন করে বিবাদের আগুনে ঘি ঢালছে। দুই দেশের মধ্যে বারবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু চীন তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ করলে বা হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেবে না বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরব আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিক তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্যও দিয়েছেন। যদিও হোয়াইট হাউস তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, তারা তাইপে নয়, বেইজিংয়ের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে।
এই সপ্তাহ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন সফরের কথা রয়েছে। এই সফরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছেন অনেকেই। তবে সংঘাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এক মার্কিন জেনারেলের ধারণা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দুই দেশের মধ্য সামরিক সংঘাত হতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর শিহোকো গোটো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখানে ফক্সকন উভয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু শেষমেশ বিজয়ী হবে একজনই।’
কিন্তু বিষয়টা ‘তত সরল’ বলে মনে করেন না লিউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশা করে চীনে পণ্য তৈরির যে মডেল ফক্সকন অনুসরণ করে, তার দিন শেষ হতে বহু দেরি।
লিউ বলেন, ‘আমরা প্রচুর কর্মী নিয়োগ করি। চীনসহ বেশির ভাগ দেশ তাদের কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে ফক্সকনের মতো কোম্পানিকে চীনের দরকার আছে।’
পশ্চিমারা বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানিকে ব্যবসা ঝুঁকিমুক্ত করতে চীন থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি।
লিউ বলেন, ‘চীন থেকে উৎপাদন সরাতে কিছু বিদেশি গ্রাহকের কাছ থেকে চাপ এসেছিল। তবে এটি তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, ফক্সকনের নয়। ওই সব কোম্পানির ওপর সরকারের চাপ ছিল। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তাঁরা আমাদের জানাবে।’
কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ
ভূ-রাজনীতি বাদ দিলেও চীন থেকে ব্যবসা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হবে কোভিড-১৯। ২০২২ সালের শেষ দিকে কঠোর কোভিড নীতি, কোয়ারেন্টাইনের জায়গার অভাব এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে ঝেংজুতে ফক্সকনের কারখানায় বিক্ষোভ ও দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। তখন বিশ্বে আইফোন যন্ত্রাংশ তৈরির বৃহত্তম কারখানা ছেড়ে যায় ফক্সকনের অনেক কর্মী।
এ বিষয়ে লিউ বলেন, করোনাকালে বহির্বিশ্বে চীনের যেসব দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা পেছনের সত্য অনেকেই জানেন না। মূলত বেইজিংয়ের কঠোর কোভিড নীতির কারণে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছিল শহরগুলো।
তবে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানে পরিস্থিতিকে অন্যভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল স্বীকার করে বলেন, ‘যদি একই পরিস্থিতি আবার দেখা দেয়, আমি সম্পূর্ণভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এমনকি অ্যাপলের মতো ক্লায়েন্টদের হারালেও এই সিদ্ধান্ত অটল থাকব।’
তবে কোম্পানির সাফল্য অবশ্যই তার নামীদামি গ্রাহকদের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু এখানে গ্রাহকরাই ফক্সকনের কাছে আসতে একরকম বাধ্য। বিষয়টি স্পষ্ট করে বললে, চীনে ৬০ শতাংশ আইফোন তৈরি করে ফক্সকন। পাশাপাশি চীনের কারখানাগুলো আইফোনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ক্যামেরা মডিউল, কানেকটর ও ফোনের ব্যাক পার্ট তৈরি করে থাকে।
চাকার ওপর আইফোন
ফক্সকনের পরবর্তী বাজিমাত বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো দিয়ে হবে বলে লিউ আশা করছেন। বড় আইফোন আকৃতির বিশাল বোর্ডের দিকে ইঙ্গিত করে লিউ বলেন, ‘কার গাড়ি একটি বড় আইফোন। আমরা এর সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত।’
বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা মেটাতে চকচকে সাদা ইলেকট্রিক এসইউভি কার গাড়ি ইতিমধ্যে বানিয়েছে ফক্সকন। এ বিষয়ে লিউ বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আমাদের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এত দিন পৃথিবীতে শুধু গ্যাস বা ডিজেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিন (এমভি) ছিল। কিন্তু আমরা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নিয়ে আসছি, যা অবশ্যই সাড়া ফেলবে।’
ফক্সকন আগামী কয়েক বছরে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ববাজারের প্রায় ৫ শতাংশ দখল করার আশা করছেন। একটি বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছেন তাঁরা। কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি মডেল তৈরি করেছে। কিন্তু লিউ আশাবাদী যে এটাই সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির বিষয়ে লিউ বলেন, ‘এক জায়গায় ইভি (বৈদ্যুতিক গাড়ি) বানানোর কোনো মানে হয় না, গাড়ির জন্য আঞ্চলিক উৎপাদন খুবই স্বাভাবিক। ফক্সকন গাড়ির কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং সম্ভবত ভারতেও হবে।’
বিবিসি অবলম্বনে আব্দুল বাছেদ
নেপাল থেকে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের বিদ্যুৎ, আবাসন ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী মনোহর লাল, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের...
২ ঘণ্টা আগেমূল্যস্ফীতির প্রভাব মধ্য ও নিম্ন আয়ের শ্রেণির মধ্যে প্রধানত ভোগের ওপর পড়ছে, কিন্তু উচ্চ আয়ের মানুষদের ওপর এর তেমন প্রভাব নেই। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে বিলাসদ্রব্যে মানুষের ব্যয় বাড়ছে। জার্মান বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারক মার্সিডিজ–বেঞ্জের গাড়ি বিক্রি এ বছরের প্রথম নয় মাসে ভারতে ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা
৩ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন ধরেই ডলারের অস্থিরতা ও সংকটে ভুগছিল দেশ। সেটি এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে, প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় পর এখন বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগেসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৫২১ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত ১৪ নভেম্বর এই সভার আয়োজন করা হয়।
৭ ঘণ্টা আগে