ফারুক মেহেদী, ঢাকা
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি ভবনগুলোর সামনে প্রতিদিন বিকেলে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন সুমন আহমেদ। তাঁর আয়ের প্রধান উৎস এটাই। জিনিসপত্রের দাম কত বাড়ল, সেই হিসাব তিনি না জানলেও বাজারে চাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্য ছাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি এখন আকাশচুম্বী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো–বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ শতাংশ। অর্থাৎ যে পণ্যটি গত বছরের জানুয়ারিতে ১০০ টাকায় কেনা যেত। এই তথ্য যখন তার কাছে তুলে ধরা হল, হতাশ সুমন মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে চাপে পিষ্ট হকার সুমনের মত অসংখ্য মানুষের হতাশা দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার কোনো কৌশলই ঠিকমত কাজ করছে না। বিবিএসের তথ্য–উপাত্ত বলছে, গত আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কখনই ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। জানুয়ারিতে তা ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও তেমন একটা অগ্রগতি নেই। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চূড়ান্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। করোনাকালীন মন্দার সময় বাদ দিলে গত ১৩ বছরের মধ্যে এ অর্জন সবচেয়ে কম। যদিও সরকার বলেছিল, এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার হবে সাড়ে ৭ শতাংশ।
ফলে দেখা যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতির আকার বাড়ানো– প্রধান দুটি লক্ষ্যের কোনোটিই অর্জন করতে পারেনি সরকার। অর্থবছরের সময়ও চলে গেছে অনেকটা।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদের বৃদ্ধির প্রভাব কী
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাস, এতে মানুষের হাতে নগদ টাকা কমে যাবে। ফলে, তারা খরচ কমিয়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কিন্তু গত এক মাসে মূল্যস্ফীতি উল্টো বেড়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে চাল, তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় সব পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, মুদ্রানীতির সনাতন কৌশলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যবর্হিভূত পণ্যের দাম কমানো।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে হলে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এখানে চালের দাম বাড়লেই সব পণ্যের দাম বাড়ে। সুদের হারের ওপর ভরসা করে বসে থাকলে কাজ হবে না। আর ব্যবসায়ীদের যখন খুশি দাম বাড়ানোর যে স্বেচ্ছাচারিতা– সেটা থামাতে হবে।’
সরকারের পদক্ষেপের যে প্রভাব প্রবৃদ্ধিতে
সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা নিয়ে সংশয়ের যেমন বাস্তবতা আছে, তেমনি তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও আঘাত হানতে পারে। টাকার প্রবাহ কমানোর ফলে ব্যবসায়ী–উদ্যোক্তারা ঠিকমত ঋণ পাচ্ছেন না। তারা নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছেন না। এতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমদানি ব্যাপক হারে কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য–উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে তা ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছিল। অর্থনীতির স্থবিরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার বাড়ানোর কথা ভাবছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এলসি খোলার হার ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এরই মধ্যে দুর্বল কৌশলের নেতিবাচক প্রভাব জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে পড়তে শুরু করেছে। মানুষের কাজের সুযোগ কমছে। বেকার মানুষের লাইন ধীর্ঘ হচ্ছে। বিবিএসের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ২৩ লাখেরও বেশি মানুষ চাকুরি খুঁজছে।
অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ায় বিনিয়োগের গতিও কম। ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ৩৬ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৯১৩ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া নিট বিনিয়োগ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬৭০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এমন পরিস্থিতির জন্য সময়োপযোগী ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতির অভাবকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘খুবই বাজে মুদ্রনীতি’ গ্রহণ করেছে। ‘স্মার্ট’ নামক সুদের হার আরোপের কৌশল নিচ্ছে ‘আনস্মার্ট’ সময়ে। এগুলো সুফল দেবে না।
ড. বিরূপাক্ষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক সকল সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক মুক্তির পথ খুঁজছে। দেশে নতুন ‘স্থিতিশীল সরকার’ এসেছে, এখন অর্থনীতিতে চাহিদা পূরণের সময়। অথচ উল্টো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে হাত–পা গুটিয়ে বসে থাকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে মোট আমদানির ৭৫ শতাংশই শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও মধ্যবর্তী পণ্য, সেখানে সুদের হার বাড়ানো প্রবৃদ্ধিকে আটকে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। জোর করে ডলারের দর ধরে রেখে হুন্ডিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সংকটটা এখন সর্দি হিসেবে আছে, এটা কিছুদিন পরে নিউমোনিয়ায় পরিণত হবে।’
স্লথ অর্থনীতি রাজস্বে যে প্রভাব ফেলছে
ব্যবসা–বাণিজ্যের গতি কমার ফলে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজস্ব খাতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমদানি কমার ফলে ব্যাংকের এলসি কমিশন থেকে রাজস্ব কমে গেছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ধরার সময় রাজস্বের বড় উৎসই মনে করা হয়েছিল এলসি কমিশনকে। এলসি কমিশন কমা মানে তো ব্যাংকেরও ব্যবসা কমে যাওয়া। তাদের আয় কমা মানে, আমাদের রাজস্ব কমে যাওয়া। আর রাজস্ব কমলে, সরকারের ব্যয় কাটছাঁট করতে হয় অথবা ধার করতে হয়।’
রাজস্ব আয় কমার ফলে, সরকারের ধার বাড়ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না ঠিকমত। পরিকল্পনা কমিশনের সবশেষ তথ্য বলছে, ইতিহাসের সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগের কোনো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এত কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়নি। সামনে এডিপির বড় একটি অংক কাটছাঁট করতে হবে। আর এসবই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার উপসর্গ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি ভবনগুলোর সামনে প্রতিদিন বিকেলে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন সুমন আহমেদ। তাঁর আয়ের প্রধান উৎস এটাই। জিনিসপত্রের দাম কত বাড়ল, সেই হিসাব তিনি না জানলেও বাজারে চাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্য ছাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি এখন আকাশচুম্বী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো–বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ শতাংশ। অর্থাৎ যে পণ্যটি গত বছরের জানুয়ারিতে ১০০ টাকায় কেনা যেত। এই তথ্য যখন তার কাছে তুলে ধরা হল, হতাশ সুমন মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে চাপে পিষ্ট হকার সুমনের মত অসংখ্য মানুষের হতাশা দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার কোনো কৌশলই ঠিকমত কাজ করছে না। বিবিএসের তথ্য–উপাত্ত বলছে, গত আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কখনই ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। জানুয়ারিতে তা ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও তেমন একটা অগ্রগতি নেই। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চূড়ান্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। করোনাকালীন মন্দার সময় বাদ দিলে গত ১৩ বছরের মধ্যে এ অর্জন সবচেয়ে কম। যদিও সরকার বলেছিল, এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার হবে সাড়ে ৭ শতাংশ।
ফলে দেখা যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতির আকার বাড়ানো– প্রধান দুটি লক্ষ্যের কোনোটিই অর্জন করতে পারেনি সরকার। অর্থবছরের সময়ও চলে গেছে অনেকটা।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদের বৃদ্ধির প্রভাব কী
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাস, এতে মানুষের হাতে নগদ টাকা কমে যাবে। ফলে, তারা খরচ কমিয়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কিন্তু গত এক মাসে মূল্যস্ফীতি উল্টো বেড়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে চাল, তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় সব পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, মুদ্রানীতির সনাতন কৌশলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যবর্হিভূত পণ্যের দাম কমানো।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে হলে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এখানে চালের দাম বাড়লেই সব পণ্যের দাম বাড়ে। সুদের হারের ওপর ভরসা করে বসে থাকলে কাজ হবে না। আর ব্যবসায়ীদের যখন খুশি দাম বাড়ানোর যে স্বেচ্ছাচারিতা– সেটা থামাতে হবে।’
সরকারের পদক্ষেপের যে প্রভাব প্রবৃদ্ধিতে
সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা নিয়ে সংশয়ের যেমন বাস্তবতা আছে, তেমনি তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও আঘাত হানতে পারে। টাকার প্রবাহ কমানোর ফলে ব্যবসায়ী–উদ্যোক্তারা ঠিকমত ঋণ পাচ্ছেন না। তারা নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছেন না। এতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমদানি ব্যাপক হারে কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য–উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে তা ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছিল। অর্থনীতির স্থবিরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার বাড়ানোর কথা ভাবছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এলসি খোলার হার ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এরই মধ্যে দুর্বল কৌশলের নেতিবাচক প্রভাব জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে পড়তে শুরু করেছে। মানুষের কাজের সুযোগ কমছে। বেকার মানুষের লাইন ধীর্ঘ হচ্ছে। বিবিএসের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ২৩ লাখেরও বেশি মানুষ চাকুরি খুঁজছে।
অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ায় বিনিয়োগের গতিও কম। ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ৩৬ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৯১৩ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া নিট বিনিয়োগ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬৭০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এমন পরিস্থিতির জন্য সময়োপযোগী ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতির অভাবকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘খুবই বাজে মুদ্রনীতি’ গ্রহণ করেছে। ‘স্মার্ট’ নামক সুদের হার আরোপের কৌশল নিচ্ছে ‘আনস্মার্ট’ সময়ে। এগুলো সুফল দেবে না।
ড. বিরূপাক্ষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক সকল সংকট থেকে মুক্তি পাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক মুক্তির পথ খুঁজছে। দেশে নতুন ‘স্থিতিশীল সরকার’ এসেছে, এখন অর্থনীতিতে চাহিদা পূরণের সময়। অথচ উল্টো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে হাত–পা গুটিয়ে বসে থাকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে মোট আমদানির ৭৫ শতাংশই শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও মধ্যবর্তী পণ্য, সেখানে সুদের হার বাড়ানো প্রবৃদ্ধিকে আটকে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। জোর করে ডলারের দর ধরে রেখে হুন্ডিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সংকটটা এখন সর্দি হিসেবে আছে, এটা কিছুদিন পরে নিউমোনিয়ায় পরিণত হবে।’
স্লথ অর্থনীতি রাজস্বে যে প্রভাব ফেলছে
ব্যবসা–বাণিজ্যের গতি কমার ফলে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজস্ব খাতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমদানি কমার ফলে ব্যাংকের এলসি কমিশন থেকে রাজস্ব কমে গেছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ধরার সময় রাজস্বের বড় উৎসই মনে করা হয়েছিল এলসি কমিশনকে। এলসি কমিশন কমা মানে তো ব্যাংকেরও ব্যবসা কমে যাওয়া। তাদের আয় কমা মানে, আমাদের রাজস্ব কমে যাওয়া। আর রাজস্ব কমলে, সরকারের ব্যয় কাটছাঁট করতে হয় অথবা ধার করতে হয়।’
রাজস্ব আয় কমার ফলে, সরকারের ধার বাড়ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না ঠিকমত। পরিকল্পনা কমিশনের সবশেষ তথ্য বলছে, ইতিহাসের সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগের কোনো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এত কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়নি। সামনে এডিপির বড় একটি অংক কাটছাঁট করতে হবে। আর এসবই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার উপসর্গ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় তারল্য ঘাটটি মেটাতে দুর্বল সাতটি ব্যাংককে ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে সবল ৯টি ব্যাংক। তবে এসব দুর্বল ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছিল ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আ
৯ ঘণ্টা আগেদেশে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভেজাল, নকল, মানহীন, অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রী। বাংলাদেশ যেন বিদেশি এসব পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন। প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন এসব পণ্যে সয়লাব হচ্ছে বাজার। বিদেশ থেকে চোরাই পথে বিপুল পরিমাণে নিম্নমানের ভেজাল প্রসাধনী ঢুকছে দেশে।
১২ ঘণ্টা আগেরাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী নির্মাণ, আবাসন, বিদ্যুৎ ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামকেন্দ্রিক দেশের সবচেয়ে বড় ছয়টি পৃথক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত
১৪ ঘণ্টা আগেব্রোকারেজ হাউস সাবভ্যালি সিকিউরিটিজের সব ধরনের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। মূলধন ঋণাত্মক ও বিনিয়োগের বিপরীতে দেওয়া ঋণের অনুপাত অনেক বেশি হওয়ায় এই নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
১৪ ঘণ্টা আগে