সম্ভাব্য সর্বোত্তম নীতিকাঠামোর আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি এখন আমাদের ব্যবসা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ করার জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য নীতিকাঠামো এবং জোরালো সম্ভাবনার বিষয়ে আপনাদের আশ্বস্ত করব।’ 

প্রথমবারের মতো ঢাকা সফররত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ বিজনেস ডেলিগেশনের সঙ্গে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো এ সুবিধা গ্রহণ করবে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আইসিটি, অবকাঠামো, হালকা প্রকৌশল পণ্য, মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, অটোমোবাইল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, সিরামিকের মতো সম্ভাব্য খাতে আরও বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আপনারা অনুকূল পরিবেশ বুঝতে সক্ষম হবেন এবং আপনারা বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের আস্থা অনুভব করতে পারবেন।’ 

বাংলাদেশ এখন আরএমজি, চামড়া, প্লাস্টিক, পাট, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং আরও অনেক খাতে অত্যাধুনিক উৎপাদন কারখানার জন্য স্বীকৃত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের “সময়”। অনুগ্রহ করে আমাদের অনুকূল পরিবেশে বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ নেওয়ার “সময়” তৈরি করুন।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইউএস-বাংলাদেশ এনার্জি টাস্কফোর্স যেটি সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে চালু হয়েছিল তা উভয় দেশের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। 

বাংলাদেশ-মার্কিন বন্ধুত্ব অভিন্ন মূল্যবোধ ও অংশীদারত্বমূলক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদের সম্প্রসারিত সার্বিক ব্যবসায়িক সম্পর্কের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (জিএসপি) এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধার মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করা যেতে পারে। বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।’ 

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে তাঁর অন্যতম সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএস চেম্বারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এ সফর এবং প্রাসঙ্গিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময়ের ফলে প্রত্যাশিত ব্যবসা থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব আরও অন্বেষণ হবে এবং নিশ্চিতভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে এবং উভয় দেশের বেসরকারি খাত উপকৃত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে স্নাতক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সে কারণে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।’ 

বাংলাদেশ সারা দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, ‘আপনারা যদি চান তবে আমরা শুধু মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি জোন নির্ধারণ করে দিতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, এবং দক্ষ জনশক্তির বিকাশে আমাদের ফোকাস নিশ্চিত করে এখানে বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ পাবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নাগরিকদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির কৌশল অনুসরণ করছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিবিদ এবং সংস্থাগুলো দ্বারা টেকসই হিসেবে স্বীকৃত। 

বাংলাদেশে অবস্থানকালে আগত অতিথিরা সবাই নিশ্চিতভাবেই মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দেখবেন, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো আরও বেশি প্রত্যক্ষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বেড়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন হয়েছে।’ 

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড চেয়ার জে আর প্রাইর, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ড সদস্য এবং বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস এক্সিকিউটিভরা সভায় বক্তব্য দেন। 

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বৈঠক সঞ্চালনা করেন।