যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বন্ধের নির্দেশনা আসায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় দুই হাজার ৭৬২ জন প্রবাসী। ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে মডার্নার প্রথম ডোজের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখন টিকা দেওয়া বন্ধের ঘোষণায় অনিশ্চয়তার পড়েছেন প্রবাসীরা। অ্যাপে নিবন্ধনকৃতরা ছাড়াও টিকা জটিলতায় সিলেট বিভাগে অন্তত ১০ হাজার প্রবাসী আটকা পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কানাইঘাটের আজির আলী থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে। ছয় মাস আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। কিন্তু টিকা জটিলতায় ফিরতে পারছেন না কর্মস্থলে।

আজির আলী বলেন, ‘সরকারের উচ্চমহলে একেকদিন একেক সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। নানা দৌড়ঝাঁপ করে টিকার রেজিস্ট্রেশন করেছি। এখন শুনছি ওপরের নির্দেশনায় মডার্নার টিকা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় কবে টিকা পাব তা বলতে পারছি না।’ সময়মতো কাতারে পৌঁছাতে না পারলে চাকরিও হারানোর শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। 
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হঠাৎ মডার্নার টিকা বন্ধের ঘোষণায় প্রবাসীরা উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। টিকার জন্য নিবন্ধন করে বসে আছেন দুই হাজার ৭৬২ জন প্রবাসী। এখন টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাঁদের। কখন টিকা পাবেন, কখন কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই প্রবাসী বালাগঞ্জের রাশেদ আহমদ বলেন, ‘ছুটিতে দেশে এসে প্রায় আট মাস ধরে আটকে আছি। টিকার রেজিস্ট্রেশন করেছি। এখন হঠাৎ করে মডার্নার টিকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এসেছে। টিকা না পেলে কাজে ফিরতেও পারব না। দীর্ঘদিন ধরে দেশে থাকায় অর্থকষ্টেও আছি। এখন কাজে না ফিরতে পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়ব।’

অপরদিকে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত দুই হাজার ৭৬২ জন ছাড়াও টিকা জটিলতায় সিলেট বিভাগের অন্তত ১০ হাজার প্রবাসী আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ রিয়াজ।

তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্রবাসীরা দেশে এসে হয়রানি ও আর ভোগান্তিতে পড়েছেন। নানা জটিলতায় তারা নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাসে ফিরতে পারছে না। সরকারের উচিত প্রবাসীদের বিষয়ে সব নিয়মকানুন সহজ করা। তাদের দ্রুত কর্মস্থলে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ প্রবাসীরা দেশে আটকা পড়লে রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়বে।’

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, সিলেটে গত ১৩ আগস্ট থেকে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসীদের টিকা দেওয়া হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মডার্নার প্রথম ডোজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই চিঠিতে মডার্না টিকার প্রথম ডোজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রবাসীদের মডার্নার প্রথম ডোজ দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও ওই চিঠিতে প্রবাসীদের ব্যাপারে আলাদা করে কিছু উল্লেখ ছিল না।’

সিসিকের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রবাসী যারা মডার্নার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তাঁদের তথ্য তো কেন্দ্রীয় পর্যায়েও জানা। কারণ প্রবাসীদের নিবন্ধনের সব তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে থাকে। সেখান থেকে আমাদের ফরোয়ার্ড করা হয়। আমরা তালিকা অনুসারে টিকা দেই।’

বিপাকে পড়া প্রবাসীদের টিকার বিষয়ে এখন কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল বলেন, ‘তাঁরা কীভাবে টিকা পাবেন, সে বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকও এ বিষয়ে কেন্দ্রে কথা বলছেন।’