সিলেটে আদালতপাড়ায় পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতপাড়ার সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) শাহপরান (র.) থানা জিআরওতে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আদালতপাড়ার শাহপরান (র.) থানা জিআরওর দায়িত্বে থাকা এসআই শামীমা বেগম ও তাঁর পাশে বসেছিলেন কনস্টেবল বিউটি পুরকায়স্থ। তখন অ্যাডভোকেট কাজি সেবা বেগম একটি মামলার নথি দেখতে চাইলে তাঁকে দেখতে দেওয়া হয়নি। এ কারণে কাজি সেবা অতর্কিতভাবে কনস্টেবল বিউটি পুরকায়স্থকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। 

এরপর ওই মহিলা আইনজীবী কাজি সেবা সেখান থেকে বেরিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে বিউটিসহ দুই নারী পুলিশ সদস্য তাঁকে জাপটে ধরেন। এ সময় তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। 

এ নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন আইনজীবীরা। তাঁরা আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কার্যালয়ের বারান্দায় গেলে আগে থেকে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। তখন পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে। 

অ্যাডভোকেট কাজি সেবা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলার ভিকটিম আমার আপন বোন। দুই মাস ধরে আমি তাদের পেছনে হাঁটছি। কোনো প্রতিবেদন আসছে, বেইল চাইছে কী-না জানতে। বলে-নথি নাই। নথি মহানগরে চলে গেছে। সেখানে গিয়ে দেখি এক মাস আগে নথি তাদের কাছে এসেছে। আজ সকালেও তারা না করছে। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বেইল দিয়েছেন। আমি ভিকটিম।’ 

কাজি সেবা বেগমের অভিযোগ অস্বীকার করে শাহপরান (র.) থানার জিআরও এসআই শামীমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে উনি আসছিল নথি কোথায় জানতে। আমি ছিলাম না। আমার মুন্সি (কনস্টেবল বিউটি) বলে দিছে নথি নারী শিশু আদালতে। দিনের বেলা উনি আদালতে শুনানিও করছে। এরপর হঠাৎ উনি ঢুকে আমার মুন্সির চুলে ধরে বেধড়ক মারতে শুরু করেন। মারার কারণ জানতে গেলে আমার ওপরও চড়াও হন।’ 

খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসএমপি উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে আদালতপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহিলা আইনজীবী কাজি সেবা বেগম শাহপরান থানা জিআরও কার্যালয়ে গিয়ে এক নারী কনস্টেবলের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ ঘটনার জেরে আইনজীবীরা মিছিল সহকারে এসে হামলা করেন। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

ঘটনাটি সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি পরে দেখা যাবে। এখনো কিছু বলতে পারব না। জখম দুই পুলিশকে ওসমানী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’ 

আদালত সূত্র জানায়, বিষয়টি সমাধানের জন্য মহানগর দায়রা জজের মধ্যস্থতায় আইনজীবী-পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক চলছে। তবে তখন পর্যন্ত পুলিশ বিষয়টি আপসে সমাধানে রাজি নয়, তারা মামলা করে আইনিভাবে মোকাবিলা করতে চায়। 

জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম শমিউল আলম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম ইয়াহ-ইয়া চৌধুরী (সুহেল) এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য মহানগর দায়রা জজ উদ্যোগ নিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা বৈঠকে রয়েছেন। আশা করছেন শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে। সিদ্ধান্তের বিষয়টি পরে জানানো হবে।