জীবিত স্বামীকে আন্দোলনে ‘নিহত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনার নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ০২
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ২৮
আল-আমিন। ছবি: সংগৃহীত

জীবিত স্বামীকে আন্দোলনে ‘নিহত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আল-আমিন (৩৪) নামে ওই ব্যক্তি সিলেট দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। মামলাটি সাভারের আশুলিয়া থানায় দায়ের হওয়ায় তাঁকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন এক নারী (২১)। পরে গত ৮ নভেম্বর মামলাটি এফআইআরভুক্ত করে আশুলিয়া থানা। সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মো. রকিবুল হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রকিবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাকে মৃত দেখানো হয়েছিল, সেই যুবক বর্তমানে আশুলিয়া থানায় রয়েছেন।’

সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নারীর স্বামী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হন।

আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলাটি করেছে আমার স্ত্রী। ১২ আগস্ট পর্যন্ত আমার স্ত্রী মৌলভীবাজারের জুড়িতে ছিল। পারিবারিক ঝামেলার কারণে রাগারাগি হয়। পরে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে দুই-তিন দিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের পরামর্শে থানায় আসি।’

আল-আমিন আরও বলেন, ‘ও (স্ত্রী) আমাকে মৃত দেখিয়ে এতগুলো মানুষকে হয়রানি করছে। তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আমিতো জীবিত। যখন আমি জীবিত তারা জানবে তখনতো আমার ওপর প্রেশার (চাপ) আসবে। এ জন্য ভয়ে আমি থানায় এসেছি।’ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে তিনি স্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডের বিচার চান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে—আল-আমিন মিয়া (৩৪) রংপুর সদরে বড় বাড়ির সুমন মিয়ার ছেলে। অথচ আল-আমিন লালমনিরহাট সদরের নুরনবী মিয়ার ছেলে। নুরনবী দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুরে বসবাস করেন। আর বাদীর ঠিকানায় উল্লেখ করা হয়েছে-কুলসুম বেগম মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাংগালার আব্দুল খালেকের মেয়ে। তারা বর্তমানে আশুলিয়ার জামগড়ার এ/পি-রুহুল আমীনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন।

র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিহুর রহমান সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। ভুক্তভোগী নিজেই থানায় এসে হাজির হন।’

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আল-আমিন তাঁর ভাই ও বাবাকে নিয়ে থানায় এসে ঘটনাটি জানান। তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআইকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং আল-আমিনকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও আল-আমিনের স্ত্রীর এজাহারে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করলে অন্য এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। তিনি একজন কৃষক। মামলার বাদীর নাম জানানোর পরে, তাঁকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই নামে কাউকে চিনি না।’

মামলায় ভুক্তভোগী হিসেবে আল-আমিনের নাম ঠিকঠাক থাকলেও ঠিকানা, বাবার নাম ও মোবাইল নম্বরে অসংগতি রয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, স্বামী আল-আমিন পরিবারসহ সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকেন। তাঁকে খুঁজে বের করতে র‍্যাব-৯ এর সহায়তা নেওয়া হয়। পরে খোঁজ মেলে আল-আমিনের ভাই জাহাঙ্গীর আলমের।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘র‍্যাব সদস্যরা জানতে চান আল-আমিন কোথায়? তাঁদের বলি, যেখানেই থাকুক আমার ভাই সেইফ আছে। তাঁরা বলেন, সেইফটাই আমাদের দরকার। তখন তাঁদের ঘটনা জানাই। পরে আমার ভাইকে নিয়ে থানায় এসেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত