মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
‘এই তো গতকালই ছিল ঈদের দিন, সবাই তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুরছে। এক হতভাগা আমিই পারিনি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথাও বের হতে। ঘুরেফিরে বাড়িতেই আছি। আর সন্তানেরাও আমাকে নিয়ে যেতে পারছে না কোথাও। স্বামী, সন্তানদের প্রয়োজনে তাদের কাছেও যেতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব!’
কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারানো পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী।
২৪ এপ্রিল ভয়াবহ রানা ট্র্যাজেডির ১০ বছরপূর্ণ হবে। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা সেই ভয়াল দুঃসহ স্মৃতি বহন করছেন এখনো। আজও কান্না থামেনি তাঁর। রানা প্লাজার ঘটনায় হারানো দুই পায়ে জরুরি অপারেশন করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু করতে পারেননি। এখন বেশি চলাফেরা করলেই পা ব্যথা করে তাঁর।
আজ রোববার দুপুরে কথা হয় রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন এবং একই ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের গুলশান আক্তার শাবানার পরিবারের সঙ্গে।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রেবেকা জানান, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল দেখে শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে জানালে বিকেল চারটায় ছুটি দিয়ে দেয়। পরদিন সকাল আটটায় যথারীতি কাজে এসে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজে যোগ দিতে চাননি তাঁরা। কিন্তু রানা প্লাজা কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলে, ‘বেতন, ভাতাসহ ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হবে।’ বকেয়া টাকা এবং চাকরি হারানোর ভয়ে সব শ্রমিকের সঙ্গে তিনিও সেদিন কাজে যোগ দেন বলে জানান রেবেকা।
এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন রেবেকা মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়া। আজও পাননি তাঁদের খোঁজ। জানতে চাইলে রেবেকা জানান, ঘটনার দিন সকাল নয়টায় তাঁর মা চান বানু নাশতা খাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘একটু কাজ আছে তা শেষ করে পরেই খাব মা।’ কিন্তু এরপর তিন দিন মুখে আর খাবার জোটেনি রেবেকার। দুর্ঘটনায় অচেতন হয়ে তিন দিন আটক পড়ে ছিলেন ওই বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপের নিচে। জ্ঞান ফিরলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেলেও পাননি পানি। তখন গায়ের ঘাম শুষে নেওয়াসহ নিজের মূত্র পান করতে হয়েছে তাঁকে। পরে উদ্ধার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর শরীরে অপরিহার্য দুটি পা আর নেই। ঘটনার পর তাঁর দুই পায়ে আটবার অপারেশন করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো ওই দিন আমি আমার গর্ভধারিণী মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়াকেও হারিয়েছি। তাঁদের মরদেহ আজও খুঁজে পাইনি। আমার জীবন থেকে যা কিছু হারিয়ে গেছে তা আর ফিরে পাব না।’
এদিকে এরই মধ্যে তাঁর পঙ্গুত্ব; জীবনজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ছিদরাতুন মুনতাহা। বর্তমানে তাঁর বয়স নয় বছর চলছে। স্থানীয় বারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। পরে আরেকটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম মাদানী আন-নুর। তার বয়স তিন বছর। আক্ষেপ করে রেবেকা বলেন, ‘পঙ্গুত্বের কারণে সন্তানদের পুরো সময় দিতে পারি না। ইচ্ছে করলেও অন্য মায়েদের মতো নিজের সন্তানদের করতে পারি না আদর-যত্ন। কিংবা স্বামীর প্রয়োজনে কাজে আসতে পারি না।’
রেবেকা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই পা হারানোরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় চিকিৎসাজনিত ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতি পূরণের পাঁচ লাখ টাকা কম পেয়েছি। ১৫ লাখ টাকার স্থলে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।’
সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ প্রতি মাসে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান। তা দিয়েই বর্তমানে চলছে রেবেকার সংসার জীবন।
সারাক্ষণ রেবেকাকে সহযোগিতা করতে পাশে থাকতে হয় তাঁর স্বামীকে. তাই তিনিও সে রকম কাজে যেতে পারেন না। একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কোথাও গেলে ওই পা লাগিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কষ্টকর হলেও চলতে হয় তাঁকে। স্বামী ছাড়া তেমন চলাফেরা বা কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি।
২০২১ সালে ৫ শতাংশ জমিতে বারাই হাট এলাকায় বেসরকারি সংস্থা একটি পাকা টিনশেডের বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও বসবাস করতে পারেন না তিনি। কারণ, ফাঁকা জায়গা আশপাশে তেমন বাড়িঘর নেই এবং স্বামীর অবর্তমানে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় আগের মাটির বাড়িতেই থাকেন বলে জানান রেবেকা।
আক্ষেপ করে রেবেকা খাতুন আরও বলেন, ‘একজন কর্মক্ষম মানুষ এভাবে চলতে পারে না। পা হারিয়ে আজ কর্মহীন হয়ে সারা দিন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়। স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনেও তেমন কাজে আসতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে-চলা করতে পারব!’
রেবেকা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী রেবেকা একা চলাফেরা করতে পারে না। আমাকেই স্ত্রীসহ সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। সে কারণে আর কাজ করতে পারি না। সঞ্চয়পত্রের থেকে প্রতি মাসে পাওয়া টাকা দিয়েই বর্তমানে আমাদের সংসার চলছে।’
মোস্তাফিজার বলেন, ‘আগে আমি কাজ করতাম। সেও কাজ করত। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল। একটি দুর্ঘটনায় আজ আমাদের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আমরা ওই গার্মেন্টস মালিকের শাস্তি চাই।’
এদিকে একই ঘটনায় নিখোঁজ হন উপজেলার কাজিহাল ইউনয়নের ডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী পোশাকশ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা। জানতে চাইলে স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতোই শাবানা ওই দিন রানা প্লাজায় কাজ করতে যায়। ঘটনার পর আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ তালিকায় শাবানার নাম ছিল। নিখোঁজ তালিকার সূত্র ধরে সেই সময় ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও পাইনি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার একটি। এতে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাকশ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের রেশ রয়ে গেছে আজও। আহতদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন পথ খুঁজছেন তারা, এখনো অনেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
‘এই তো গতকালই ছিল ঈদের দিন, সবাই তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুরছে। এক হতভাগা আমিই পারিনি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথাও বের হতে। ঘুরেফিরে বাড়িতেই আছি। আর সন্তানেরাও আমাকে নিয়ে যেতে পারছে না কোথাও। স্বামী, সন্তানদের প্রয়োজনে তাদের কাছেও যেতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব!’
কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারানো পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী।
২৪ এপ্রিল ভয়াবহ রানা ট্র্যাজেডির ১০ বছরপূর্ণ হবে। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা সেই ভয়াল দুঃসহ স্মৃতি বহন করছেন এখনো। আজও কান্না থামেনি তাঁর। রানা প্লাজার ঘটনায় হারানো দুই পায়ে জরুরি অপারেশন করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু করতে পারেননি। এখন বেশি চলাফেরা করলেই পা ব্যথা করে তাঁর।
আজ রোববার দুপুরে কথা হয় রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন এবং একই ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের গুলশান আক্তার শাবানার পরিবারের সঙ্গে।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রেবেকা জানান, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল দেখে শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে জানালে বিকেল চারটায় ছুটি দিয়ে দেয়। পরদিন সকাল আটটায় যথারীতি কাজে এসে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজে যোগ দিতে চাননি তাঁরা। কিন্তু রানা প্লাজা কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলে, ‘বেতন, ভাতাসহ ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হবে।’ বকেয়া টাকা এবং চাকরি হারানোর ভয়ে সব শ্রমিকের সঙ্গে তিনিও সেদিন কাজে যোগ দেন বলে জানান রেবেকা।
এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন রেবেকা মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়া। আজও পাননি তাঁদের খোঁজ। জানতে চাইলে রেবেকা জানান, ঘটনার দিন সকাল নয়টায় তাঁর মা চান বানু নাশতা খাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘একটু কাজ আছে তা শেষ করে পরেই খাব মা।’ কিন্তু এরপর তিন দিন মুখে আর খাবার জোটেনি রেবেকার। দুর্ঘটনায় অচেতন হয়ে তিন দিন আটক পড়ে ছিলেন ওই বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপের নিচে। জ্ঞান ফিরলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেলেও পাননি পানি। তখন গায়ের ঘাম শুষে নেওয়াসহ নিজের মূত্র পান করতে হয়েছে তাঁকে। পরে উদ্ধার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর শরীরে অপরিহার্য দুটি পা আর নেই। ঘটনার পর তাঁর দুই পায়ে আটবার অপারেশন করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো ওই দিন আমি আমার গর্ভধারিণী মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়াকেও হারিয়েছি। তাঁদের মরদেহ আজও খুঁজে পাইনি। আমার জীবন থেকে যা কিছু হারিয়ে গেছে তা আর ফিরে পাব না।’
এদিকে এরই মধ্যে তাঁর পঙ্গুত্ব; জীবনজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ছিদরাতুন মুনতাহা। বর্তমানে তাঁর বয়স নয় বছর চলছে। স্থানীয় বারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। পরে আরেকটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম মাদানী আন-নুর। তার বয়স তিন বছর। আক্ষেপ করে রেবেকা বলেন, ‘পঙ্গুত্বের কারণে সন্তানদের পুরো সময় দিতে পারি না। ইচ্ছে করলেও অন্য মায়েদের মতো নিজের সন্তানদের করতে পারি না আদর-যত্ন। কিংবা স্বামীর প্রয়োজনে কাজে আসতে পারি না।’
রেবেকা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই পা হারানোরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় চিকিৎসাজনিত ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতি পূরণের পাঁচ লাখ টাকা কম পেয়েছি। ১৫ লাখ টাকার স্থলে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।’
সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ প্রতি মাসে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান। তা দিয়েই বর্তমানে চলছে রেবেকার সংসার জীবন।
সারাক্ষণ রেবেকাকে সহযোগিতা করতে পাশে থাকতে হয় তাঁর স্বামীকে. তাই তিনিও সে রকম কাজে যেতে পারেন না। একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কোথাও গেলে ওই পা লাগিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কষ্টকর হলেও চলতে হয় তাঁকে। স্বামী ছাড়া তেমন চলাফেরা বা কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি।
২০২১ সালে ৫ শতাংশ জমিতে বারাই হাট এলাকায় বেসরকারি সংস্থা একটি পাকা টিনশেডের বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও বসবাস করতে পারেন না তিনি। কারণ, ফাঁকা জায়গা আশপাশে তেমন বাড়িঘর নেই এবং স্বামীর অবর্তমানে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় আগের মাটির বাড়িতেই থাকেন বলে জানান রেবেকা।
আক্ষেপ করে রেবেকা খাতুন আরও বলেন, ‘একজন কর্মক্ষম মানুষ এভাবে চলতে পারে না। পা হারিয়ে আজ কর্মহীন হয়ে সারা দিন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়। স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনেও তেমন কাজে আসতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে-চলা করতে পারব!’
রেবেকা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী রেবেকা একা চলাফেরা করতে পারে না। আমাকেই স্ত্রীসহ সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। সে কারণে আর কাজ করতে পারি না। সঞ্চয়পত্রের থেকে প্রতি মাসে পাওয়া টাকা দিয়েই বর্তমানে আমাদের সংসার চলছে।’
মোস্তাফিজার বলেন, ‘আগে আমি কাজ করতাম। সেও কাজ করত। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল। একটি দুর্ঘটনায় আজ আমাদের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আমরা ওই গার্মেন্টস মালিকের শাস্তি চাই।’
এদিকে একই ঘটনায় নিখোঁজ হন উপজেলার কাজিহাল ইউনয়নের ডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী পোশাকশ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা। জানতে চাইলে স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতোই শাবানা ওই দিন রানা প্লাজায় কাজ করতে যায়। ঘটনার পর আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ তালিকায় শাবানার নাম ছিল। নিখোঁজ তালিকার সূত্র ধরে সেই সময় ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও পাইনি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার একটি। এতে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাকশ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের রেশ রয়ে গেছে আজও। আহতদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন পথ খুঁজছেন তারা, এখনো অনেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের সড়কে বড় জমায়েত করে গতকাল শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলিগ জামায়াতের সাদপন্থীরা। নামাজ শেষে যাওয়ার আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
৮ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যায় আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রুকু আক্তার নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়
৮ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত বুধবার উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২)। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রুমা আক্তার নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৯ ঘণ্টা আগেরাজশাহীতে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
১০ ঘণ্টা আগে