বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন প্রচার প্রচারণা ছাড়াই প্রতি বছর ‘বাসিয়া হাটি’ নামে পরিচিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মিলনমেলা বসে। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাঁওতালদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়া। ঐতিহ্যগতভাবে বউমেলা নামে পরিচিত এটি। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। সন্ধ্যার আগে তরুণ–তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজে বের করে অভিভাবকদের জানান।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয়া দশমীর পরের দিন গোলাপগঞ্জ হাট হওয়ার কারণে এক দিন পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আয়োজন করা হয় এই বউমেলার।
বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে এই মেলায় প্রথা অনুযায়ী সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজতে আসেন এই মেলায়। ১৮ পেরিয়ে ২৫ ছুঁই ছুঁই বয়সের তরুণ–তরুণীরা রঙিন পোশাক পরে বাড়ির বড়দের সঙ্গে মেলায় আসেন। কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গীর নজর কাড়তে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে তাঁরা নানাভাবে চেষ্টা করেন!
মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের মাঠে আসতে শুরু করে মানুষ। সকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকলেও মূল মেলা শুরু হয় বেলা ৩টার পর, রাত পর্যন্ত থাকে মানুষের আনাগোনা।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, তিল ধারণের জায়গা নেই। মেলাটি কবে শুরু কেউ অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। কেউ বলেন, ১০০ বছরের বেশি। আর কেউ বলেন, ‘অনেক দিন ধরে’ এই মেলা চলছে। সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পেতে এক বছর অপেক্ষা করে থাকেন।
জীবনসঙ্গী খোঁজা মূল উপলক্ষ হলেও মেলায় থাকে নানা পণ্যের পসরা। বাহারি কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালা, মাটির তৈরি খেলনা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত দা, কুড়াল, হাঁড়ি, পাতিল ও নানা পদের খাবারের দোকান। চলতে থাকে বাজনার তালে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর। আর স্কুলমাঠের একদিকে চলে কনে বাছাই পর্ব।
মেলায় সাঁওতাল তরুণীরা এসেছিলেন রঙিন পোশাক পরে। নজর কাড়তে গলায় মাথায় বাহারি ফুলের সাজ। তাঁদের দৃষ্টি রুমাল বাঁধা হাতের দিকে। বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি কাড়তে হাতে রুমাল বেঁধে মেলায় আসেন তরুণেরা। সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই বেঁধে ফেলতে হয় সঙ্গী।
নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আগে কঠিন সামাজিক বিধিবিধান থাকলেও বর্তমানে অনেকেই রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মেনে বিয়ে করছেন। যুবক–যুবতীরা একে অপরকে পছন্দ করলে পারিবারিক আলোচনার মধ্য দিয়ে বিয়ের মাধ্যমে তাঁরা দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। একসময় পাত্রী পছন্দ হলে পাত্র তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতেন নিজের বাড়িতে। এখন সে প্রথা না থাকলেও, বর–কনে পছন্দের জন্য মেলায় ভিড় জমান সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা। সঙ্গে অভিভাবকেরাও থাকেন। বাদ্য–বাজনার তালে চলে বউ বাছাইয়ের উৎসব। সময়ের সঙ্গে এই প্রক্রিয়াতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন পছন্দ হলেই বিয়ে হয়ে যায় না। বরং পছন্দ হলে তা অভিভাবকদের জানানো হয়। অভিভাবকেরা একমত হলে তবেই শুরু হয় বিয়ের কাজ।
গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহেন চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি বছর এই সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের মানুষের পাশাপাশি মেলায় হিন্দু ও মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে মেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি বলেন, এক সময় এই মেলার নাম ছিল বউমেলা। এখন এ মেলা মিলনমেলা নামে পরিচিত। পূর্ব পুরুষেরা এই মেলা শুরু করেন। আমরা তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটা সঠিক ভাবে বলা যাবে না। বাপ–দাদার কাছে শুনেছি, যুগ যুগ ধরে এ মেলা আপনা-আপনি চলছে। আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা চালিয়ে যাচ্ছি বাপ দাদার পথ ধরে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আত্মীয়–স্বজনেরা বছরে একবার হলেও এই এলাকায় মিলিত হয়।
বিকেলে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সাঁওতালদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির বীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মনজুরুল ইসলাম (মঞ্জু)। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি আমিরুল বাহার।
নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বীরগঞ্জ থানা-পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশ সদস্যরা।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী মেলা পরিদর্শন করে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, মেলাটি সম্পর্কে সারা বাংলাদেশে জানান দিলে এক সময় মেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে।
আরও খবর পড়ুন:
শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন প্রচার প্রচারণা ছাড়াই প্রতি বছর ‘বাসিয়া হাটি’ নামে পরিচিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মিলনমেলা বসে। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাঁওতালদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়া। ঐতিহ্যগতভাবে বউমেলা নামে পরিচিত এটি। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। সন্ধ্যার আগে তরুণ–তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজে বের করে অভিভাবকদের জানান।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয়া দশমীর পরের দিন গোলাপগঞ্জ হাট হওয়ার কারণে এক দিন পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আয়োজন করা হয় এই বউমেলার।
বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে এই মেলায় প্রথা অনুযায়ী সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজতে আসেন এই মেলায়। ১৮ পেরিয়ে ২৫ ছুঁই ছুঁই বয়সের তরুণ–তরুণীরা রঙিন পোশাক পরে বাড়ির বড়দের সঙ্গে মেলায় আসেন। কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গীর নজর কাড়তে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে তাঁরা নানাভাবে চেষ্টা করেন!
মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের মাঠে আসতে শুরু করে মানুষ। সকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকলেও মূল মেলা শুরু হয় বেলা ৩টার পর, রাত পর্যন্ত থাকে মানুষের আনাগোনা।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, তিল ধারণের জায়গা নেই। মেলাটি কবে শুরু কেউ অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। কেউ বলেন, ১০০ বছরের বেশি। আর কেউ বলেন, ‘অনেক দিন ধরে’ এই মেলা চলছে। সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গী পেতে এক বছর অপেক্ষা করে থাকেন।
জীবনসঙ্গী খোঁজা মূল উপলক্ষ হলেও মেলায় থাকে নানা পণ্যের পসরা। বাহারি কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালা, মাটির তৈরি খেলনা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত দা, কুড়াল, হাঁড়ি, পাতিল ও নানা পদের খাবারের দোকান। চলতে থাকে বাজনার তালে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর। আর স্কুলমাঠের একদিকে চলে কনে বাছাই পর্ব।
মেলায় সাঁওতাল তরুণীরা এসেছিলেন রঙিন পোশাক পরে। নজর কাড়তে গলায় মাথায় বাহারি ফুলের সাজ। তাঁদের দৃষ্টি রুমাল বাঁধা হাতের দিকে। বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি কাড়তে হাতে রুমাল বেঁধে মেলায় আসেন তরুণেরা। সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই বেঁধে ফেলতে হয় সঙ্গী।
নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আগে কঠিন সামাজিক বিধিবিধান থাকলেও বর্তমানে অনেকেই রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মেনে বিয়ে করছেন। যুবক–যুবতীরা একে অপরকে পছন্দ করলে পারিবারিক আলোচনার মধ্য দিয়ে বিয়ের মাধ্যমে তাঁরা দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। একসময় পাত্রী পছন্দ হলে পাত্র তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতেন নিজের বাড়িতে। এখন সে প্রথা না থাকলেও, বর–কনে পছন্দের জন্য মেলায় ভিড় জমান সাঁওতাল তরুণ–তরুণীরা। সঙ্গে অভিভাবকেরাও থাকেন। বাদ্য–বাজনার তালে চলে বউ বাছাইয়ের উৎসব। সময়ের সঙ্গে এই প্রক্রিয়াতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন পছন্দ হলেই বিয়ে হয়ে যায় না। বরং পছন্দ হলে তা অভিভাবকদের জানানো হয়। অভিভাবকেরা একমত হলে তবেই শুরু হয় বিয়ের কাজ।
গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহেন চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি বছর এই সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের মানুষের পাশাপাশি মেলায় হিন্দু ও মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে মেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি বলেন, এক সময় এই মেলার নাম ছিল বউমেলা। এখন এ মেলা মিলনমেলা নামে পরিচিত। পূর্ব পুরুষেরা এই মেলা শুরু করেন। আমরা তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটা সঠিক ভাবে বলা যাবে না। বাপ–দাদার কাছে শুনেছি, যুগ যুগ ধরে এ মেলা আপনা-আপনি চলছে। আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা চালিয়ে যাচ্ছি বাপ দাদার পথ ধরে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আত্মীয়–স্বজনেরা বছরে একবার হলেও এই এলাকায় মিলিত হয়।
বিকেলে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সাঁওতালদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির বীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মনজুরুল ইসলাম (মঞ্জু)। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি আমিরুল বাহার।
নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বীরগঞ্জ থানা-পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশ সদস্যরা।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী মেলা পরিদর্শন করে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, মেলাটি সম্পর্কে সারা বাংলাদেশে জানান দিলে এক সময় মেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে।
আরও খবর পড়ুন:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে আই আর খান জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডে মজুত করা বিপুলপরিমাণে পাট পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
১৮ মিনিট আগেনোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নে দুর্গম চরাঞ্চল দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাতে ইউনুছ আলী এরশাদ (৩৯) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন।
৩৫ মিনিট আগেগোলাম মোস্তফা। বয়স ৩৫ বছর। পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন। গুলিতে তাঁর ডান হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত হাড় ভেঙে কয়েক টুকরা হয়েছিল। গত ২৩ জুলাই ভর্তি হওয়ার পর থেকে হাতে ১০ বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পেশায় নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা গুলিব
১ ঘণ্টা আগেজাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বরিশাল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৭ ঘণ্টা আগে