লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও বেতন-ভাতা বন্ধ রাখায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দফাদার (গ্রাম পুলিশ) বিপুল চন্দ্র। বাবার কিছুটা সহযোগিতায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করা বিপুল এখন দিশেহারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল পাননি। তাই বেঁচে থাকতে সম্মান না পেলে মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার না দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার রায়। 

জানা গেছে, ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বিপুল চন্দ্র গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদে দফাদর পথে (গ্রাম পুলিশ) কর্মরত আছেন। প্রায় ২২ মাস আগে ওই এলাকার মৃত দেলোয়ারের ছেলে রবিউল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিপুল চন্দ্রকে গড্ডিমারী হাট থেকে মিলনবাজারে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। এ সময় খবর পেয়ে বিপুলের বাবা অমূল্য কুমার সেখানে গেলে তাঁকেও হেনস্তা করেন। পরে রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ছিনতাই মামলা দিয়ে বিপুলকে থানায় দেন। পরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর হস্তক্ষেপে বিপুলকে থানা থেকে নিয়ে আসা হয়। এদিকে ওই অভিযোগের ঘটনায় কোন প্রমাণ না মিললেও ২২ মাস থেকে তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অমূল্য কুমার রায় বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো। তুলে নিয়ে মারধরসহ আমাকেও হেনস্তা করল। অতঃপর সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরেও বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের কাছে গেলেও কোন সুরাহা করেনি। ছেলের বেতন আর আমার ভাতা দিয়ে কোন রকম সংসার চলতো। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। 

অমূল্য কুমার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে আর কত দিন? দেশের জন্য যুদ্ধ করে কি পেলাম? বেঁচে থাকতে যদি সম্মান না পাই তাহলে মরে গিয়ে সম্মান পেয়ে কি করব? তাই আমি আমার মৃত্যুর পরে গার্ড অব অনার চাই না। 

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বিপুল চন্দ্র বলেন, রবিউল ইসলাম ছিনতাইয়ের অভিযোগ দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। আমাকে বাঁচাতে বাবা সেখানে গেলে তাঁরা বাবাকেও মারধরের চেষ্টা করে। অনেক অপমান করে। পরে তাঁর থানায় মামলা দেয়। সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণও হয়। এরপরেও আমি ২২ মাস থেকে বেতন পাই না। আমার যে বেতন ভাতা বন্ধ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন নোটিশও আমি পাইনি। আমিতো থানায় গিয়ে হাজিরা খাতায় নাম স্বাক্ষর করে আসছি। তাহলে কেন বেতন বন্ধ? 

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল জব্বার বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আশা করি প্রশাসন অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবেন।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট 'মৃত্যুর পরে গার্ড অব অনার চাই না' সম্বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার রায়। গার্ড অব অনার না দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বরাবর উক্ত আবেদন করেন তিনি।