আকস্মিক একজন যুবক ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এরপর একাধারে কক্ষ ভাঙচুর শুরু করেন। নিরাপত্তা প্রহরী তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ওই যুবক। এ সময় অফিসের ১০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন তিনি। পুলিশ তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলে পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দেন। পরে তাঁকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসকের প্রবেশদ্বারের কেচি গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এ ঘটনা ঘটান ওই যুবক। আকস্মিক হামলার পর ডিসি অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওই যুবকের নাম নাসির উদ্দিন (২৫)। হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের পারুপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাঞ্জাবি পরিহিত নাসির উদ্দিন সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসকের প্রবেশদ্বারের কেচি গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এরপর তিনি বেলচা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষসহ অফিসের ১০টি কক্ষের ৩১টি দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করেন।
ডিসি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী হরকান্ত রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে এক যুবক ইট দিয়ে মূল ফটকের তালা ভেঙে অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে সে আমাকে ধাওয়া করে। পরে সে পশ্চিম দিক থেকে অফিসের কক্ষগুলো ভাঙচুর শুরু করে। ভাঙতে ভাঙতে জেলা প্রশাসকের কক্ষ, সভাকক্ষ, মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, অভ্যর্থনাকক্ষ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষ, প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষসহ ১০টি কক্ষের দরজা-জানালাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। সে নেজারত শাখার প্রিন্টার মেশিন ও চেয়ারও ভাঙচুর করেছে। তাকে কোনোভাবে থামানো যাচ্ছিল না। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে আটকের চেষ্টা করে। তাকে আটক করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁও থানার এসআই মামুনুর রশিদ আহত হয়েছে।’
আহত পুলিশ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ভাঙচুর করা ব্যক্তিকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাঁর বেলচার আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়।’
আটক নাসির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো অপরাধ না করলে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে না। তাই পুলিশের হাতে আটক হওয়ার জন্যই আমি এ ঘটনা ঘটিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে রাত কাটানোর পর আমি বাড়ি যাই। আজ সকালে মোটরসাইকেলে ডিসি অফিসে এসে ভাঙচুর করি।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি অত্যন্ত খারাপ একটি কাজ হয়েছে। সেই সময় কে ডিউটিতে ছিল, তখন তাঁর ভূমিকা কী ছিল, এটি আমরা দেখব।’
অন্যদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সকালে আমরা এ ঘটনা শুনতে পাই। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। জেলে যাওয়ার জন্য আটক নাসির উদ্দিন ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে সে জানিয়েছে। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ওই যুবকের বাড়ি এলাকার (গেদুরা) ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নাসির এলাকার একটি মক্তবের শিক্ষক ছিল। সে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যদের মারপিট করত, বাড়ির মালামাল ভাঙচুর করত। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, ‘আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’