নিন্মবিত্ত পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পড়ালেখার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে বাড়িতেই শুরু করেন মাশরুম চাষ। সফলভাবে মাশরুমও চাষ করেছেন। তবে বাজারজাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উদ্যোক্তা রাকেশ সরকার প্লাবন (২৭)।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পৌর এলাকার চাঁদপাড়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র সরকার ও রিক্তা রানী দম্পতির ছেলে তিনি। দিনাজপুর গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমার তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
প্লাবনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে নির্মাণাধীন আধাপাকা দরজা–জানালাসহ চালাবিহীন একটি কক্ষ। সেখানে বাঁশের সঙ্গে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে পলিথিন ব্যাগে খড় দিয়ে মোড়ানো বীজ প্যাকেট (মাশরুমের স্পন)। এই মাশরুম দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। যারা কিনা এখন পর্যন্ত জানেনই না, এটিও একটি খাদ্যপণ্য।
রাকেশ সরকার প্লাবন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাঁর বাবা। বাবার উপার্জন দিয়েই লেখাপড়াসহ পরিবারের ভরণপোষণ চলে। বাবার কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে। এ কারণে তাঁকে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে পরিকল্পনা করে শুরু করেন মাশরুম চাষের। এজন্য তিনি প্রথমে দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার ও ফুলবাড়ী কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাঁদের পরামর্শে সংগ্রহ করেন মাশরুমের স্পন। চলতি বছরের জানুয়ারির থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং ফেব্রয়ারি থেকে মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে।
প্লাবন আরও বলেন, প্রতিকেজি মাশরুম উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর প্রতিকেজি পাইকারি মাশরুম বিক্রি করা হবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। তবে মাশরুম উৎপাদিত হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাজারজাত নিয়ে। কারণ ফুলবাড়ী উপজেলায় মাশরুমের পরিচিতি নেই, চাহিদাও তেমন না থাকায় বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় যোগাযোগ করেও তেমন সাড়া বা আগ্রহী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে কয়েকজন হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিক মাশরুমের নমুনা চাওয়ায় তাঁদেরকে মাশরুম দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন। তাছাড়া সরকারিভাবে সহজশর্তে কৃষি ঋণ কিংবা সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া গেলে আগামীতে বড় পরিসরে মাশরুম চাষের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান এই শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা।
রাকেশ সরকার প্লাবনের বাবা নিখিল চন্দ্র সরকার ও মা রিক্তা রানী সরকার বলেন, প্লাবন লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে মাশরুম চাষের কথা বললে প্রথম দিকে এতে অমত ছিল তাঁদের। কিন্তু ছেলে জেদের কাছে সম্মতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর শুরু হয় তার মাশরুম চাষ। এ পর্যায়ে মাশরুম উৎপাদন শুরু হলে তাঁরাও ছেলের এ কাজে সহযোগিতা করছেন।
লেখাপড়ার জন্য প্লাবন যখন দিনাজপুর হোস্টেলে ছিলেন, সে সময় তাঁর মা–বাবাই মাশরুমের স্পনগুলোতে দুবেলা স্প্রে করতেন। আর ছুটি পেলেই প্লাবন বাড়ি এসে মনোনিবেশ করেন মাশরুম চাষের দিকে। সন্তানের এই কষ্ট একদিন সফলতা হিসেবে আসবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ রুম্মান আক্তার বলেন, মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। রাকেশ সরকার প্লাবনকে মাশরুমের স্পন কেনার জন্য দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারে যোগাযোগ করে দেওয়া হয়েছে। মাশরুম চাষে তাঁকে সার্বিকভাবে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্লাবনকে মাশরুম চাষে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য আগামীতে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।