খাটিয়ায় মাহিনের নিথর দেহ, নির্বাক তাকিয়ে মা

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ১১
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২: ০৫
রংপুর মহানগরীর জুম্মাপাড়ায় মাহিনের জানাজা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাসার সামনে খাটিয়া। তাতে রাখা নিজ সন্তানের লাশ। নির্বাক তাকিয়ে মা নাইমুন নাহার। হয়তো তখনো কল্পনা করতে পারেনি তার ছেলে নিথর। পুরো বাড়িতে কান্নার রোল। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় বাবা-মাসহ স্বজনেরা।

এমন চিত্র আজ রোববার রংপুর মহানগরীর জুম্মাপাড়া বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া আইইউটির শিক্ষার্থী মুবতাসিম রহমান মাহিনের বাড়িতে।

মাহিন গাজীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিকনিকে যাওয়া পথে শ্রীপুরের উদয়খালি গ্রামে ঝুলে থাকা তারে বিআরটিসির দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে মাহিনসহ তিন শিক্ষার্থী মারা যান। রাতেই হাসপাতাল থেকে মাহিনের লাশ ঢাকা থেকে রংপুরের জুম্মাপাড়ার বাসায় নিয়ে আসা হয়।

এরপর আজ দুপুরে করিমিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল থেকে শেষ বারের মতো মাহিনকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান আত্মীয়–স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী। পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুবতাসিম রহমান মাহিন রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছিলেন। মাহিনের বাবা এবি ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখার ব্যবস্থাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহিন বড়।

বিদ্যুতায়িত বাসে মারা যাওয়া মুবতাছিন রহমান মাহিন। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যুতায়িত বাসে মারা যাওয়া মুবতাছিন রহমান মাহিন। ছবি: সংগৃহীত

মাহিনের চাচা হাসান রহমান বলেন, ‘আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে পিকনিকে যাচ্ছিল, সেখানে বিদ্যুতায়িত হয়ে মাহিনের নিথর দেহ আমাদের সামনে পড়ে আছে। যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না, চোখে দেখা যায় না। এটা সহ্য করার মতো না। আদরের ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা পাগল হয়ে গেছে। আমাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল। কেন হলো এটা? এটা উদ্ভট বাংলাদেশ বলেই সম্ভব? পৃথিবীর অন্য কোথাও সম্ভব নয়।’

এই ধরনে ঘটনা আর যাতে না ঘটে তাই সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজাসহ যারা মারা গেছে। যাদের মায়ের কোল খালি হয়েছে। তা কোনোভাবে পূরণ করা সম্ভব না। এই ঘটনায় গাফিলতি যাদের ছিল তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

তাদের যে গাফিলতি, সেটা টাকা বাঁচানোর জন্য, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? এটা আমরা জানতে চাই? কারণ আমাদের সন্তান চলে গেছে এটা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা কেউ পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু যাতে করে পরবর্তীতে আর কেউ গাফিলতি করতে না পারে, সে জন্য যেন দ্রুত অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা এটার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

মাহিনের প্রতিবেশী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘গ্রামের একটা রাস্তায় কীভাবে দোতলা বাস নিয়ে যায়। সেখানে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজন মারা গেছে। তিনজনের জায়গায় ৩০০ জনও হতে পারত। সারা দেশে এটা আরও বড় ধরনের আকার ধারণ করতে পারত। ওই বাসের সবাই তো মারা যেতে পারত। যাওয়ার আগে রাস্তাঘাটগুলো চেক করে নিলে আজ অকালে তিনটি প্রাণ ঝরে যেত না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত