আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ, গোদাগাড়ীর সেই অধ্যক্ষ বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ২৬
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ২৮
সেলীম রেজা। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর মারধরের শিকার হয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসা রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলীম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন খাত থেকে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেলীম রেজার বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচটি মামলা চলছে। গত বুধবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা পারভীন সাময়িক বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। পরদিন থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা পারভীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা পারভীন বলেন, সেলীম রেজা ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। নিয়ম অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরই তাঁর সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলার চার্জশিট হলেও ১৮ মাস ধরে বিগত পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তাঁকে বরখাস্ত করেননি। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা এবং বিধি অনুযায়ী সেলীম রেজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কলেজে টানা অনুপস্থিত ছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সেলীম রেজা। এ কারণে গত ২১ আগস্ট কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কলেজের রসায়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হাসিনা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন।

এরপর গত ৫ নভেম্বর কলেজের ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারী হাসিনা পারভীনকে প্রশাসনিক এবং আর্থিক দায়িত্ব প্রদানের জন্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে এ দুটি দায়িত্ব প্রদান করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে সেলীম রেজার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে সেলীম রোজা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন। সেলীম রেজা প্রতি মাসে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের ৩ শতাংশ অর্থ জোর করে আদায় করতেন। এভাবে তিনি দুই বছরে ৮ লাখ টাকা আদায় করেছেন। সাতজন কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন আরও প্রায় কোটি টাকা। ২০১৭ সাল থেকে হিসাব না দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

এ কারণে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিষয়টি তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠন করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব খাত থেকে কয়েক বছরে সেলীম রেজা প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে শিক্ষক-কর্মচারীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগেও অধ্যক্ষ সেলীম রেজার অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ তছরুপের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) তদন্তেও সেলীম রেজার আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়। এ কারণে চলতি বছরের মার্চে তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয় মাউশি।

এর আগে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মারধরের পর সাময়িক বরখাস্ত করার কারণে অধ্যক্ষ সেলীম রেজার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে মামলা করেন আহাদুজ্জামান নাজিম নামের এক শিক্ষক। সেই মামলায় সেলীম রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ফরম পূরণের টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিনজন শিক্ষক সেলীম রেজার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে আরও তিনটি মামলা করেন। সব মিলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচটি মামলা চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ সেলীম রেজা বলেন, ‘মামলার চার্জশিট দেওয়ার কারণে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়ম ও অন্যান্য দুর্নীতির যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবুল হায়াত আজকের পত্রিকাকে বলেন, চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় সেলীম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও যেসব দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর এ ব্যাপারে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাইয়ে অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় সেলীম রেজা দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। ওই সময় এলাকার সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে সেলীম রেজাকে বেধরক পেটান। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হলে সেলীম রেজাকে পাশে বসিয়েই সংবাদ সম্মেলন করেন ফারুক চৌধুরী। সেদিন দুজনই দাবি করেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে সেলীম রেজাকে মারধরের সত্যতা মেলে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত