নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ছাত্র–জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মামলা করছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম না দিতে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগের মামলায় গণ আসামি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ঘটনা নিয়েও মামলা হচ্ছে এখন।
পুলিশ বলছে, মামলায় কাকে আসামি করা হবে না হবে তা বাদীর ওপরেই নির্ভর করছে। মামলা রেকর্ডের আগে যাচাই–বাছাই করার সুযোগ হচ্ছে না। আর আইনজ্ঞরা বলছেন, অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ মামলায় গণআসামি করছেন। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন তা নজর রাখা উচিত। কারণ, মামলার লক্ষ্য হলো– সুবিচার পাওয়া। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট থেকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হতে শুরু করেছে। ১৯ আগস্ট প্রথম মামলা হয় নগরের বোয়ালিয়া থানায়। গত ৫ আগস্ট আলী রায়হান নামের এক শিবির নেতার নিহতের ঘটনায় করা এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। মামলায় আসামি হিসেবে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি আরও ১০০০ থেকে ১২০০ জন।
রাজশাহীতে ৫ আগস্টের সংঘর্ষে আলী রায়হানসহ মোট দুজনের মৃত্যু হয়। অপর শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমকে হত্যার অভিযোগে ২৩ আগস্ট রাতে বোয়ালিয়া থানায় আরও একটি মামলা হয়। এতেও আসামি করা হয় লিটনসহ ৪২ নেতা–কর্মীকে। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা আরও প্রায় ৩০০ জন।
১৯ আগস্টের পর থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় প্রতিদিনই দুয়েকটি করে মামলা হচ্ছে। সব মামলাতেই গণহারে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ জনকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির অভিযোগেও এখন মামলা হতে শুরু করেছে। নগরের বোয়ালিয়া, কর্ণহার ও গোদাগাড়ী থানায় এমন মামলা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাজশাহী মহানগরের বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলার আসামি না করতে মোটা অংকের টাকারও লেনদেন হচ্ছে। ফলে রাজশাহীর প্রভাবশালী সাবেক একাধিক এমপি ও কোন কোন প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী সদর আসন থেকে টানা তিনবার এমপি হওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নামেও এখনও পর্যন্ত মামলা হয়নি। এনিয়েও সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী কে হবেন তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলীয় নেতাদের কাছে সমালোচিত হওয়া ব্যক্তিরাও আগবাড়িয়ে মামলা করতে যাচ্ছেন। দলের সুনজরে আসতে রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহারও ২০১৮ সালের ঘটনায় সম্প্রতি মামলা করেছেন। সামসুন নাহার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২৩ সালে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সামসুন নাহার এখনও দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনের বিএনপির প্রার্থী ও দলের চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলাটি করেছেন। এ মামলাতেও গণআসামি করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময় মিনুর বাড়ি ও নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলার অভিযোগে আরও দুটি মামলা করেছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকার।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন রাজশাহী–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী–৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
রাজশাহী সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান, রাজশাহী–৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ এবং রাজশাহী–৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।
ওমর ফারুক চৌধুরী ও আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ভোটডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সাড়ে ৫ বছর আগের ঘটনার এসব মামলায় গণআসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কারও ওপর অতীতে ছোটখাট কোন রাগ থাকলে তাকেও আসামি করা হচ্ছে।
রাজশাহীর বাঘা থানায় মামলা করতে একটি এজাহার দিয়েছেন কিশোরপুর গ্রামের জাহিদ হাসান নামের এক ব্যক্তি। এই এজাহারে ১৪ নম্বর আসামি হিসেবে বাঘা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান ও ১৫ নম্বর আসামি হিসেবে তাঁর ছেলে মো. স্বদেশের নাম লেখা হয়েছে। মামলায় ১৩০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার তারিখ বলা হয়েছে ২৫ আগস্ট। নুরুজ্জামান দৈনিক ইত্তেফাকের বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি। আর তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে তার ওপর কেউ বিরাগভাজন থাকতে পারে। এ জন্য ছেলেসহ তাকেও আসামি করতে এজাহারে নাম লেখা হয়েছে।
সাংবাদিক নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এলাকায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেওয়ার মতো কেউ নেই। তারপরও গায়েবি মামলা করতে এরকম এজাহার দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কিছু অতিউৎসাহী লোকজন এসব মামলা করছে। আবার যাদের বাদী করা হচ্ছে, তারা নিজেরাও মামলার বিবরণ ও আসামি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
গায়েবি অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে সোমবার বিকালে অভিযোগকারী জাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। সন্ধ্যার পর তিনি যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, ‘মামলাটা অভিযোগ আকারে আছে। এখনও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। তবে মামলা হয়ে যাবে।’
ওসি বলেন, ‘আসামি কে হবেন না হবেন তা বাদীর ওপরেই নির্ভর কছে। মামলা হওয়ার পরে তদন্তের সময় আমরা বাকিটা দেখব।’
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের রাজশাহীর এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ কোনো যাচাই–বাছাই করছে না। যাদের নামে ইচ্ছে হচ্ছে মামলা করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগের ঘটনা সামনে এনে গায়েবি মামলাও করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের বিত্তশালী নেতাদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষ যোগাযোগ করছে মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে। তারা বিএনপি নেতাদের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আসলেই এ টাকা বিএনপির নেতারা নিচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে দুয়েকজন বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতার নামে এখনও কোন মামলা হয়নি।’
একাধিক মামলার আসামি হয়ে যাওয়ার ভয়ে ওই নেতা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন, ‘কোনো অপরাধের বিচার পাওয়াটাই মামলার মূল্য উদ্দেশ্য। এখানে কাউকে হয়রানি করার জন্য গণআসামি করা ঠিক হবে না। তবে মামলা করাই তো শেষ কথা নয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। তখন যেন মামলাগুলোর সতর্কতার সাথে তদন্ত করা হয়। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধেই যেন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’
গণআসামি করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমার নামে এখন ৬৭টা মামলা, সবগুলো মামলাই গায়েবি। আমাদের অন্য নেতাকর্মীদের নামেও অসংখ্য গায়েবি মামলা আছে। তারপরেও আমরা গায়েবি মামলা সমর্থন করি না। কেউ হয়তো অতিউৎসাহী হয়ে এ ধরনের মামলা করছেন। এর দায় মামলার বাদীকেই নিতে হবে। আমরা বলছি, কাউকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যেন মামলার আসামি করা না হয়।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে মামলা হচ্ছে সেগুলো বাদীর ইচ্ছার ওপরেই নির্ভর করছে। বাদী আসামিদের নাম দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী মামলা হচ্ছে। তবে তদন্তের সময় পুলিশ দেখবে আসলেই কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যাদের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদেরই অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হবে। অন্যদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
ছাত্র–জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মামলা করছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম না দিতে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগের মামলায় গণ আসামি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ঘটনা নিয়েও মামলা হচ্ছে এখন।
পুলিশ বলছে, মামলায় কাকে আসামি করা হবে না হবে তা বাদীর ওপরেই নির্ভর করছে। মামলা রেকর্ডের আগে যাচাই–বাছাই করার সুযোগ হচ্ছে না। আর আইনজ্ঞরা বলছেন, অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ মামলায় গণআসামি করছেন। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন তা নজর রাখা উচিত। কারণ, মামলার লক্ষ্য হলো– সুবিচার পাওয়া। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট থেকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হতে শুরু করেছে। ১৯ আগস্ট প্রথম মামলা হয় নগরের বোয়ালিয়া থানায়। গত ৫ আগস্ট আলী রায়হান নামের এক শিবির নেতার নিহতের ঘটনায় করা এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। মামলায় আসামি হিসেবে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি আরও ১০০০ থেকে ১২০০ জন।
রাজশাহীতে ৫ আগস্টের সংঘর্ষে আলী রায়হানসহ মোট দুজনের মৃত্যু হয়। অপর শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমকে হত্যার অভিযোগে ২৩ আগস্ট রাতে বোয়ালিয়া থানায় আরও একটি মামলা হয়। এতেও আসামি করা হয় লিটনসহ ৪২ নেতা–কর্মীকে। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা আরও প্রায় ৩০০ জন।
১৯ আগস্টের পর থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় প্রতিদিনই দুয়েকটি করে মামলা হচ্ছে। সব মামলাতেই গণহারে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ জনকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির অভিযোগেও এখন মামলা হতে শুরু করেছে। নগরের বোয়ালিয়া, কর্ণহার ও গোদাগাড়ী থানায় এমন মামলা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাজশাহী মহানগরের বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলার আসামি না করতে মোটা অংকের টাকারও লেনদেন হচ্ছে। ফলে রাজশাহীর প্রভাবশালী সাবেক একাধিক এমপি ও কোন কোন প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী সদর আসন থেকে টানা তিনবার এমপি হওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নামেও এখনও পর্যন্ত মামলা হয়নি। এনিয়েও সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী কে হবেন তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলীয় নেতাদের কাছে সমালোচিত হওয়া ব্যক্তিরাও আগবাড়িয়ে মামলা করতে যাচ্ছেন। দলের সুনজরে আসতে রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহারও ২০১৮ সালের ঘটনায় সম্প্রতি মামলা করেছেন। সামসুন নাহার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২৩ সালে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সামসুন নাহার এখনও দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনের বিএনপির প্রার্থী ও দলের চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলাটি করেছেন। এ মামলাতেও গণআসামি করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময় মিনুর বাড়ি ও নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলার অভিযোগে আরও দুটি মামলা করেছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকার।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন রাজশাহী–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী–৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
রাজশাহী সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান, রাজশাহী–৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ এবং রাজশাহী–৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।
ওমর ফারুক চৌধুরী ও আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ভোটডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সাড়ে ৫ বছর আগের ঘটনার এসব মামলায় গণআসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কারও ওপর অতীতে ছোটখাট কোন রাগ থাকলে তাকেও আসামি করা হচ্ছে।
রাজশাহীর বাঘা থানায় মামলা করতে একটি এজাহার দিয়েছেন কিশোরপুর গ্রামের জাহিদ হাসান নামের এক ব্যক্তি। এই এজাহারে ১৪ নম্বর আসামি হিসেবে বাঘা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান ও ১৫ নম্বর আসামি হিসেবে তাঁর ছেলে মো. স্বদেশের নাম লেখা হয়েছে। মামলায় ১৩০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার তারিখ বলা হয়েছে ২৫ আগস্ট। নুরুজ্জামান দৈনিক ইত্তেফাকের বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি। আর তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে তার ওপর কেউ বিরাগভাজন থাকতে পারে। এ জন্য ছেলেসহ তাকেও আসামি করতে এজাহারে নাম লেখা হয়েছে।
সাংবাদিক নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এলাকায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেওয়ার মতো কেউ নেই। তারপরও গায়েবি মামলা করতে এরকম এজাহার দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কিছু অতিউৎসাহী লোকজন এসব মামলা করছে। আবার যাদের বাদী করা হচ্ছে, তারা নিজেরাও মামলার বিবরণ ও আসামি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
গায়েবি অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে সোমবার বিকালে অভিযোগকারী জাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। সন্ধ্যার পর তিনি যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, ‘মামলাটা অভিযোগ আকারে আছে। এখনও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। তবে মামলা হয়ে যাবে।’
ওসি বলেন, ‘আসামি কে হবেন না হবেন তা বাদীর ওপরেই নির্ভর কছে। মামলা হওয়ার পরে তদন্তের সময় আমরা বাকিটা দেখব।’
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের রাজশাহীর এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ কোনো যাচাই–বাছাই করছে না। যাদের নামে ইচ্ছে হচ্ছে মামলা করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগের ঘটনা সামনে এনে গায়েবি মামলাও করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের বিত্তশালী নেতাদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষ যোগাযোগ করছে মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে। তারা বিএনপি নেতাদের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আসলেই এ টাকা বিএনপির নেতারা নিচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে দুয়েকজন বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতার নামে এখনও কোন মামলা হয়নি।’
একাধিক মামলার আসামি হয়ে যাওয়ার ভয়ে ওই নেতা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন, ‘কোনো অপরাধের বিচার পাওয়াটাই মামলার মূল্য উদ্দেশ্য। এখানে কাউকে হয়রানি করার জন্য গণআসামি করা ঠিক হবে না। তবে মামলা করাই তো শেষ কথা নয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। তখন যেন মামলাগুলোর সতর্কতার সাথে তদন্ত করা হয়। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধেই যেন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’
গণআসামি করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমার নামে এখন ৬৭টা মামলা, সবগুলো মামলাই গায়েবি। আমাদের অন্য নেতাকর্মীদের নামেও অসংখ্য গায়েবি মামলা আছে। তারপরেও আমরা গায়েবি মামলা সমর্থন করি না। কেউ হয়তো অতিউৎসাহী হয়ে এ ধরনের মামলা করছেন। এর দায় মামলার বাদীকেই নিতে হবে। আমরা বলছি, কাউকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যেন মামলার আসামি করা না হয়।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে মামলা হচ্ছে সেগুলো বাদীর ইচ্ছার ওপরেই নির্ভর করছে। বাদী আসামিদের নাম দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী মামলা হচ্ছে। তবে তদন্তের সময় পুলিশ দেখবে আসলেই কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যাদের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদেরই অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হবে। অন্যদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে আই আর খান জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডে মজুত করা বিপুলপরিমাণে পাট পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
১৮ মিনিট আগেনোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নে দুর্গম চরাঞ্চল দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রামে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাতে ইউনুছ আলী এরশাদ (৩৯) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন।
৩৪ মিনিট আগেগোলাম মোস্তফা। বয়স ৩৫ বছর। পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন। গুলিতে তাঁর ডান হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত হাড় ভেঙে কয়েক টুকরা হয়েছিল। গত ২৩ জুলাই ভর্তি হওয়ার পর থেকে হাতে ১০ বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পেশায় নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা গুলিব
১ ঘণ্টা আগেজাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বরিশাল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৭ ঘণ্টা আগে