দুবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি মেম্বার) পদে পরাজিত মো. এসকেন আলী এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন এই গ্রাম পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে লালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন উত্তোলন করেন বলে নিশ্চিত করেন লালপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা।

আগামীকাল রোববার নাটোরের লালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন মো. এসকেন আলী। 

উপজেলার লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের একজন গ্রাম পুলিশ মো. এসকেন আলী। বাবা মৃত আকবর আলী মণ্ডল ও মা রংবাস বেগমের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। স্ত্রী শাহানাজ বেগম গৃহিণী। তাঁদের দুই সন্তান ইয়াসমিন খাতুন একাদশ শ্রেণি ও সুরমিলা আক্তার লাবনী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।

মো. এসকেন আলী জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর বাবা মারা যান। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আর পড়াশোনা করা হয়নি। যেকোনো ভোট এলে খুব আনন্দ লাগে। অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছে করে। এর আগে দুবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমবার সপ্তম আর গত নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিলেন। গতবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের খরচ মেটানোর জন্য একটি গরু বিক্রি করেছিলেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য সবার দোয়া চেয়ে পোস্টার লাগান। কিন্তু সে বছর আর্থিক সংকটের জন্য ভোট করতে পারেননি।

মো. এসকেন আলী বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট করার পরিকল্পনা করেছিলাম। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ বছর ভোট করার জন্য বাড়ির পাশের এক কাঠা জমি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। মনোনয়ন ফরম তুলে ভোটের কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত এতে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বসতভিটের আর এক কাঠা জমি অবশিষ্ট রয়েছে।

জনগণ ভোট দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘গত ২৭ বছর ধরে গ্রাম পুলিশের চাকরি করছি। বিনা স্বার্থে অনেক মানুষের উপকার করেছি। তাই একটা ভোট চাইলে তাঁরা অবশ্যই দেবেন। এই আসনে ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ আর দুটি পৌরসভা আছে। সব এলাকার গ্রাম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাঁরা সবাই কাজ করবেন ইনশা আল্লাহ।’ 

মো. এসকেন আলীর স্ত্রী শাহানাজ বেগম জানান, স্বামীর এই খামখেয়ালিপনায় তিনি কখনো বাধা দেননি। স্বামীর ভালো লাগাই নিজের ভালো লাগা মেনে নিয়ে পাশে থাকতে চান সব সময়।

লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, পরিষদের গ্রাম পুলিশ এসকেন আলীর মনোনয়ন ফরম উত্তোলনের খবরটি শুনে অবাক হয়েছেন।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক গ্রাম পুলিশ মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। সরকারি (গ্রাম পুলিশ) চাকরি করলে নির্বাচনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে কি না, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়গুলো দেখবেন। আইনবিধি অনুযায়ী ত্রুটিযুক্ত হলে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, নাটোর-১ আসনে নির্বাচনে ২৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এর মধ্যে ১৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু) ও স্বতন্ত্র একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছেন।