জয়পুরহাটে দোকানঘর দখল করে বিএনপির কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ 

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ৫৪

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সংলগ্ন বাজারের পশ্চিম পাশে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর দোকানঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের বিরুদ্ধে।

কালাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেনের ছত্রচ্ছায়ায় জাহিদুল ইসলাম তাঁর অনুসারীদের নিয়ে এ দুঃসাহস দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে এরই মধ্যে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক দুটি লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী।

সরেজমিন এবং লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন বাজারের পশ্চিম পাশে শান্তিপূর্ণভাবে হোটেল ব্যবসা করে আসছেন রেজাউল করিম তালুকদার নাজু। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাহিদুল ইসলাম সদলবলে ওই হোটেলে প্রবেশ করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন।

চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যবসায়ী রেজাউল করিমকে গলা ধাক্কা দিয়ে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ওই হোটেলে তালা ঝুলিয়ে দেন জাহিদ। এ সময়ে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ভবিষ্যতে ফের ওই দোকানে এলে তাঁকে হত্যা করা হবে। এরপর তাঁরা ওই দোকানটিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে রূপ দেন। তারপর দোকানের সামনে টাঙিয়ে দেন দলীয় সাইনবোর্ড।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হোটেল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম তালুকদার নাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। কারণ, ওই দোকানের উপার্জনে আমার সংসার চলে। আর ওই দিন থেকে সেই দোকানঘরে আমার রেফ্রিজারেটর, চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও আসবাব আটকে আছে। এ ঘটনায় আমি মারাত্মক অসুস্থ হই। চিকিৎসা নেই বগুড়া টিএমএসএস হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে ইউএনও এবং ওসি বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি সুবিচার পাব।’

হোটেল ঘর দখলের বিষয় স্বীকার করে মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপির সরকারের শাসনামলে ওই দোকানের স্থানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার আমাদের কার্যালয়টি ভেঙে দেয়। তারপর সেখানে নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করে দেয় রেজাউল করিম তালুকদার নাজুকে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে উপজেলা এবং জেলার ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে আমরা একপর্যায়ে ওই ঘরটি দখলে নিয়েছি।’

এ বিষয়ে কালাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপির সরকারের শাসনামলে ওই দোকানের স্থানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেটি মাত্রাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ অন্যরা দখলে নিয়েছে বলে জানি। তবে এ কাজে আমি কোনো নির্দেশ দিইনি। তবে সেটিকে দলীয় কার্যালয় করার কথা নয়। এ ধরনের কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।’

কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমি কালাই থানায় যোগদানের আগের। তারপরও বিষয়টি আমলে নিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ অক্টোবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত