নওগাঁর রানীনগরে মিরাট ইউনিয়নের ২ নং স্লুইচ গেট এলাকায় সিসা তৈরি কারাখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বাগানের প্রায় ৪০ টন পেয়ারা নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। উন্মুক্ত স্থানে অবৈধ কারখানার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ কার্যত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ ছাড়া ওই এলাকায় বিষাক্ত ধোঁয়ায় গরু মারা যাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রানীনগর বান্দাইখাড়া প্রধান সড়কের ২ নং স্লুইচ গেটের পার্শ্বে উন্মুক্ত কারখানা স্থাপন করে সিসা তৈরির কাজ করে আসছে একটি চক্র। বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরোনো ব্যাটারি কিনে গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে এসে সন্ধ্যার পর থেকেই সারা রাত চলে আগুনে পুড়িয়ে সিসা তৈরির কাজ। তবে সকাল হওয়ার আগেই কাজ শেষ করে চলে যান তারা। ব্যাটারির অ্যাসিডের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং দুর্গন্ধে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাশেই প্রায় পাঁচ হাজার বিভিন্ন ফলজ গাছের বাগান রয়েছে। বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে এসব বাগানে ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গাছপালার পাতা বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। কারখানার আশপাশে ঘাস খাওয়ার পর ওই এলাকার প্রায় ৪টি গরুও মারা গেছে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোন ফল হচ্ছে না। এমনকি প্রশাসনের লোকজনও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

বাগান ও প্রজেক্ট মালিক আব্দুল কুদ্দুছ মন্ডল বলেন, আমার জন্মস্থান রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভাতঘর পাড়া গ্রামে। ব্যবসা করার জন্য গত দুই বছর আগে এই এলাকায় এসে জমি কিনি এবং জায়গা লিজ নিয়ে একই স্থানে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে ৯টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। পাশাপাশি পুকুর পাড় জুড়ে গড়ে তুলেছি ফলজ বাগান। আমার বাগানে প্রায় সাড়ে ১২ শত থাই পেয়ারা, আড়াই শত আম, একশত বেদানা, আড়াই হাজার লেবু এবং বেশ কিছু কলা গাছ রয়েছে। এসব গাছে ফল আসতে শুরু করলেও ফল বড় হতে না হতেই সিসা তৈরি কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে সবগুলো ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বাগান মালিক আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ টনেরও বেশি পেয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বেদানা, আম, কলা, লেবুসহ বিভিন্ন জাতের লাখ লাখ টাকার ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার কারখানার মালিককে বলেও কোন ফল হয়নি।

কালিকাপুর গ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, কারখানার পাশের চরে ঘাস খাওয়ার কারণে তার একটি গরুও মারা গেছে। এ ছাড়া এই এলাকার আরও তিনটি গরু মারা গেছে।

রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সিসা তৈরি কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন থাকে। ফলে ধোঁয়ার প্রভাবে ফল কালো হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যে আমি এই কারখানা বন্ধের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছি।

রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, সিসা তৈরির বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানব দেহে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পশু-পাখি এবং গাছপালার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ব্যাটারি পুরে সিসা তৈরি কারখানার কথা শুনেছি। কারখানা বন্ধে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কারখানার নির্দিষ্ট মালিকের নাম বা খোঁজ পাওয়া যায়নি।