পরীক্ষায় ‘পাস’, তবুও চালু হচ্ছে না নৌ–রুট

  • ৫৯ বছর পর এই নৌ-রুট চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পর পাঁচটি নৌযানে পণ্য আনা-নেওয়াও হয়
  • নৌ শুল্ক স্টেশনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে এসে দুটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন এনবিআর সদস্য
  • এনবিআরের অর্থনৈতিক কোড সৃষ্টি না হওয়ার কারণে এই নৌ-রুট পুরোপুরি চালু হচ্ছে না
 রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৩৪
ছবি: সংগৃহীত

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে পর্যন্ত রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ও ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া পর্যন্ত পদ্মা নদীতে চালু ছিল একটি নৌ-রুট। ৫৯ বছর পর নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় আবার এই নৌ-রুট চালুর উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। পরীক্ষামূলক পাঁচটি নৌযানে পণ্য আনা-নেওয়াও করা হয়। সেই পরীক্ষায় ‘পাস’ করলেও এরপর আর কোনো কিছুরই অগ্রগতি হয়নি।

এতে হতাশ রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অর্থনৈতিক কোড সৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ নৌ-রুট পুরোপুরি চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ সমস্যার সমাধানে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান নৌ শুল্ক স্টেশনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন। তিনি এসে দুটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন।

রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, এনবিআর সদস্য নিজেও এই নৌ-রুট পুরোপুরি চালু করতে আগ্রহী। কিন্তু তিনি দুটি সমস্যার কথা বলেছেন। এর একটি হলো এখানে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ যে একটা ঘর বানিয়েছে, সেটা আসলে পোর্টের কাজে ব্যবহার হওয়ার মতো ঘর নয়। এটার উন্নয়ন দরকার, সীমানাপ্রাচীর দরকার। আর এখানে নিরাপত্তার সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের সদস্য।

নৌপথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নদীর পাড় থেকে ভারতের ময়ার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের কম। এ পথে ভারত থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করলে খরচ অনেক কমবে। এখন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর ব্যবহার করে থাকেন। নৌপথে এলে স্থলবন্দরের চেয়ে ৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘গত ১২ ফেব্রুয়ারি এই নৌপথের উদ্বোধনের পর এনবিআর পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি লাইটার জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দেয়। তখন ভারত থেকে চারটি নৌযানে পাথর আমদানি করা হয়। আর বাংলাদেশ থেকে প্রথম দিনই একটি নৌযানে যায় গার্মেন্টস পণ্য। গত জুন পর্যন্ত এসব কার্যক্রম চলে। এতে এনবিআর ৮ লাখ ১৪ হাজার ৮০৩ টাকা রাজস্ব পায়। এনবিআর বলেছে, পরীক্ষামূলক অপারেশনে নৌ-রুট পাস করেছে; কিন্তু এত দিন পরও পুরোপুরি নৌ-রুটটি চালু করার অনুমতি না পেয়ে তাঁরা কিছুটা হতাশ।

এনবিআরের সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সুলতানগঞ্জ ঘাট পরিদর্শনে এলে তাঁর সঙ্গে মাসুদুর রহমান রিংকু ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আব্দুল আওয়াল এবং সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্যও। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তা দিতে তাঁরা এই শুল্ক স্টেশনে সব সময় এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য রাখতে চান। এই জনবল তাঁদের আছে। তবে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে শুধু একটা অনুমোদন নিতে হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআর সদস্যকে বলেছেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘি থানার ধুলিয়ান ময়াঘাট এবং গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত নদীপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে। তাঁরা ভারত থেকে পণ্য এনে সুলতানগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে ডিউটি পরিশোধের পর ওই নৌযানেই পণ্য নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন। এতে সড়কপথের ওপর চাপ কমবে, খরচও কমবে। এনবিআর বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের পণ্য ভারতে পাঠানোর অনুমোদন দিলেও ভারত শুধু কয়লা ও পাথর আমদানির সুযোগ দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা এ সীমাবদ্ধতা উঠিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন এনবিআর সদস্যের কাছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘সুলতানগঞ্জে ডিউটি পরিশোধের পর আমরা ওই লাইটার জাহাজেই নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য নিয়ে যেতে পারব। এতে কোনো সমস্যাও হবে না। কারণ, বিআইডব্লিউটিএর তালিকাভুক্ত কোনো লাইটার জাহাজ ছাড়া অন্য নৌযানে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে না। এটি চালু হলে দুই দেশের পাশাপাশি লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরাও।’

জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর বলেন, ‘সুলতানগঞ্জ নৌ শুল্ক স্টেশন চালুর আগে অবকাঠামো নির্মাণ এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কিছু কাজ করার আছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়ে এটি করতে হবে। আমিও চাই সংকটগুলো দ্রুত কাটিয়ে এ নৌ-রুটটি চালু হোক।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত