শিক্ষার্থী সাকিবের মৃত্যু: ক্ষোভ থাকলেও আইনের আশ্রয় নেবে না পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক,  রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৬
বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত জোবায়ের আলম সাকিব। ছবি: সংগৃহীত

দোতলা বাসে শিক্ষার্থীদের পিকনিকে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী জোবায়ের আলম সাকিবের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে চান না।

গতকাল শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও দুই সহপাঠীর সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে জোবায়ের আলম সাকিবের। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারিপুরে গ্রামের কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। সাকিবের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো গ্রামের মানুষ।

সাকিবের মা ফজলেতুন্নেসা সেফা মুরারিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর আলম অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। আগে তাঁদের বাড়ি ছিল মুরারিপুর গ্রামেই। পরে তাঁরা রাজশাহী নগরের বাকির মোড় এলাকায় একটি চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

সাকিব রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০২১ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জোবায়ের আলম সাকিবের জানাজা। ছবি: সংগৃহীত
জোবায়ের আলম সাকিবের জানাজা। ছবি: সংগৃহীত

আজ সকালে মুরারিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাকিবের এক চাচার বাড়ির সামনে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। সেখানে সাকিবের মা ফজলেতুন্নেসা সেফাকে নিয়ে বসে আছেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের নারীরা। সাকিবের মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা উঠে আসেন। তিনি বলেন, এখন কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে তাঁরা আগ্রহী নন। কোনোরকম ঝামেলা হোক তা তাঁরা চান না। এখন তিনি শুধু ভাইয়ের জন্য দোয়া চান।

নিহত সাকিবের মামা তাসনিম ফেরদৌস বলেন, ‘গ্রামের সরু রাস্তায় দোতলা বাস নিয়ে পিকনিকে যাওয়া মোটেও উচিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী বিবেচনায় এটা করেছিল, তারাই ভালো জানে। দোতলা বাস না হলে এভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটত না।’

সাকিবের জানাজায় এসেছিলেন তাঁর স্কুলবন্ধু সোহেল পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলাদা স্কুলে পড়তাম। এইচএসসিতে ভর্তির আগে প্রস্তুতির সময় কোচিং করতে গিয়ে সাকিবের সঙ্গে পরিচয়। ওর মতো ভালো ছেলে হয় না। সে খুব আন্তরিক ছিল। যে কারণে অন্য স্কুলে পড়লেও তার সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়। তার মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছি না।’

জোবায়ের আলম সাকিবের জানাজা। ছবি: সংগৃহীত
জোবায়ের আলম সাকিবের জানাজা। ছবি: সংগৃহীত

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যরা সাকিবের লাশের ময়নাতদন্ত করতে দেননি। অনেক ঝামেলা হলেও তারা সাকিবের মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করতে দেননি। এ জন্য আইনগত কোনো ব্যবস্থাও নেবেন না তাঁরা। আইনের আশ্রয় নিলে আবার কবর থেকে লাশ তোলা হবে, ময়নাতদন্ত হবে—এসব ঝামেলা চান না পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে গাজীপুরে ছুটে যান সাকিবের বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও মা ফজলেতুন্নেসা সেফা। সঙ্গে যান সাকিবের বড় বোন নাইমাতুল জান্নাত শিফা। গভীর রাতে লাশ নিয়ে তাঁরা রাজশাহী শহরের বাসায় আসেন। সকাল ৭টায় এখানে সাকিবের প্রথম জানাজা হয়। এরপর লাশ নেওয়া হয় মুরারিপুর গ্রামে। আজ সকাল ১০টায় গ্রামের কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত