সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন (২০) হত্যা মামলায় নিহতের ভাই লাল বাবুসহ দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দুই আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 

আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মো. নাজির এই রায় দেন। নিহত ইকবাল মনসুর নগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন। 

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—কাজীপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি গ্রামের সোহবার শেখের ছেলে মজনু মিয়া (৪২) ও একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ও নিহতের বড়ভাই লাল বাবু (৪০)। 

১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—মাজনাবাড়ি গ্রামের বছির শেখের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৮) ও ছলি ওরফে চিকাছলির ছেলে রেজাব (৩৯)। 

সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় তিন আসামি মোজাম ওরফে মোজাম্মেল, জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুম বাবুকে খালাস দেওয়া হয়েছে। 

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত লাল বাবু ও মজনু মিয়াকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ বছর কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি রবিউল ইসলাম ও রেজাবকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

মামলার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কাজীপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। এ সময় ছাত্রদল নেতা ইকবালের নেতৃত্বে তাঁর ভাই লাল বাবু, মজনু মিয়া, রবিউল, রেজাব সহ ৭-৮ জন যুবক ঠিকাদারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। ঠিকাদার হারুন অর রশিদ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা ছাদ ঢালাই কাজ বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিকের ভাই শফিকুল ইসলামসহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের বাধার মুখে ইকবাল ও তাঁর লোকজন চলে যায়। 

এরই জেরে পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা ইকবাল লোকজন নিয়ে মাজনাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিকের ভাই শফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মজনু মিয়া ডেগার দিয়ে শফিকুলকে পর পর পাঁচটি আঘাত করেন। পঞ্চমবার আঘাতের পর শফিকুল সরে যাওয়ায় ছাত্রদল নেতা ইকবালের বুকে ডান পাশে লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় ইকবালের ভাই লাল বাবু বাদী হয়ে কাজীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসলে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজেই বাদী হয়ে প্রধান শিকের ভাই শফিকুলের ওপর হামলাকারীদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। 

মামলা চলাকালে ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আজ নিহতের ভাইসহ দুই আসামিকে যাবজ্জীবন ও দুই আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।