সুখাইজুড়ি নদী দখল, ঘের করে ‘ইজারা’

আমার জায়গাই আমার দখলে, নদী দখল করিনি। নদীর পাশে আমার জমি, পানিতে জমির অনেক অংশ ভেঙে গেছে। মাঝখানে নদীর একটু জায়গা রয়েছে। আমি এখানে মাছ ধরতাম।

মতিন মিয়া, সুখাইজুড়ি নদীতে ঘের নির্মাতা

মিন্টু মিয়া, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৫
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৪
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সুখাইজুড়ি নদীতে বানানো ঘের থেকে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুখাইজুড়ি নদী একসময় প্রবহমান ছিল। এতে এলাকার মানুষ গোসল করত, মাছ ধরত ও হাঁস পালন করত। সেই নদী দখল করে বাঁশ ও জালের বেড়া দিয়ে ছোট ছোট ঘের তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। পাশাপাশি মাটি ফেলে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। অনেক ঘের আবার লিজ বা ইজারা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সুখাইজুড়ি নদীর ৫ কিলোমিটার অংশ মৃতপ্রায়। নদীর পাশের জমির মালিকেরা নদী দখল করে নিয়েছেন। সুখাইজুড়ি সেতুর পূর্ব পাশে নদীর এক কিলোমিটারে তৈরি করা হয়েছে ঘের। এতে জড়িত আছেন দরিল্ল্যা গ্রামের খোকন মিয়া, ছোবহান মিয়া, মন্নান মিয়া, হান্নান, আব্দুস ছাত্তার, মামুন মিয়া, মতিন মিয়াসহ অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুখাইজুড়ি সেতুর পূর্ব দিকে বাঁশ ও জাল দিয়ে ছোট ছোট ৮০-৯০টি ঘের তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাটি খনন করে বানানো হয়েছে পুকুর। নদীতে আড়াআড়িভাবে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। সেখানে দেখা যায়, একটি ঘেরে আটজন মিলে জাল টেনে মাছ ধরছেন। এর ছবি তুলতে দেখে দৌড়ে আসেন ঘের তৈরি করা ব্যক্তিদের একজন মামুন। তিনি জানান, নদীর একটি অংশে তাঁর নিজস্ব ঘের আছে। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী খোকনের দখলে থাকা আরেক অংশ তিনি ২ লাখ টাকায় লিজ নিয়েছেন।

ঘের লিজ নিয়ে মাছ চাষ করা ছমির উদ্দিন নামের একজন বলেন, ‘নদী তো লিজ নিছি মতিনের কাছ থাইক্কা। ৫০ হাজার টাকা পড়ে গেছে এই সিজনে। এখন মাছ ধরতেছি ঘের থাইক্কা।’ জানতে চাইলে মতিন বলেন, ‘আমার জায়গাই আমার দখলে, নদী দখল করিনি। নদীর পাশে আমার জমি, পানিতে জমির অনেক অংশ ভেঙে গেছে। মাঝখানে নদীর একটু জায়গা রয়েছে। আমি এখানে মাছ ধরতাম। এখন ছমির উদ্দিনকে মাছ ধরতে দিয়েছি, সে কিছু টাকা দিছে।’

এ নিয়ে কথা হলে স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, যাঁর যাঁর জমির সীমানা অনুযায়ী লিজ দিয়ে দিয়েছেন। নদীতে ঘের দেওয়াতে সাধারণ কেউ তো আর মাছ ধরতে পারবেন না। মাইন উদ্দিন নামের আরেকজন বলেন, ‘একসময় নদীতে নেমে মাছ ধরতাম। এখন তো অনেকেই দখলে নিয়েছেন। এটি তো অন্যায়। নদীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার।’

তবে রাজগাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেকার মোমতাজ ভূঁইয়া খোকন বলেন, ‘এটি দখল না, যাঁর যাঁর প্লট অনুযায়ী ভোগ করে খাচ্ছেন। ইউএনও স্যারকে আমি বলেছি আইনগত ব্যবস্থা নিতে। আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারব না।’

যোগাযোগ করা হলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘নদী দখল ও লিজ দেওয়ার বিষয়ে খবর পেয়েছি। যাঁরাই জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত