৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় কার প্রশ্ন আইইউটি উপাচার্যের

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ০৫
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪৬
নিহত তিনজন মোস্তাকিম রহমান মাহিন, মোজাম্মেল হোসেন ও জুবায়ের রহমান সাকিব। ছবি: সংগৃহীত

বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইইউটি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খান। দুর্ঘটনার পর আজ (শনিবার) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রাস্তায় বের হলে যদি এ রকম হয়, তাহলে এ দায়িত্বটা কার আপনারাই ভালো বোঝেন। আমি আসলে কাউকে সরাসরি দায়ী করতে চাই না। ছাত্ররা বাইরে যাবে—এটাই স্বাভাবিক, পিকনিকে যাবে তা–ও স্বাভাবিক।

একটা ছেলে গাড়িতে বসে বা দাঁড়িয়ে থেকেও যদি তার জীবনের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কী করবে? এটা তো এমন দুর্ঘটনা না যে মুখোমুখি সংঘর্ষ কিংবা বাসটা উল্টে পড়ে গিয়েছে।

সে গাড়িতেই আছে কিন্তু বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন দায়দায়িত্ব কার। আর যেন এভাবে প্রাণ না যায়, ভবিষ্যতে রাস্তা—ঘাট যেন ক্লিয়ার থাকে, বিদ্যুতের তার যেন যথেষ্ট উচ্চতায় থাকে এবং সেগুলো যেন লিকেজ না থাকে কর্তৃপক্ষকে নজর রাখতে হবে।’

সরু সড়কে দ্বিতল বাস চলার অনুমতি ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘যারা পিকনিকের আয়োজন করেছে, তারা কেন দ্বিতল বাস নিল এবং সে রাস্তায় তা চলাচলে অনুমতি ছিল কি না—তা আমার জানা নেই। এটা তো ভালো জানার কথা বিআরটিসির। কারণ, তারা বাস ভাড়া দেয়। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।’

এর আগে শনিবার সকালে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছয়টি দ্বিতল বাস শ্রীপুর মাটির মায়া রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে জৈনা বাজার এলাকায় রিসোর্টে যাওয়ার সরু সড়কে প্রবেশের সময় বিদ্যুতের তার লেগে বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

এতে ঘটনাস্থলেই মীর মোজাম্মেল নাঈম (২৩), জোবায়ের আলম সাকিব (২২) ও মুবতাছিন রহমান মাহীন (২২) নামে তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যু হয়। সন্ধ্যার পর নিহতদের লাশ হাসপাতালের হিমঘর থেকে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে মীর মোজাম্মেল নাঈম ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে, জোবায়ের আলম রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাবো এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ও মুবতাছিন রহমান মাহীন রংপুর সদরের ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আহত মিরপুর কাজীপাড়া এলাকার কাবিদুল ইসলাম আলিফ (২২) ও ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার নাফিজ আলম খানকে (২২) বিকেলে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর আহসানিয়া মিশন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মোহতাসিম মাশফি বলেন, ‘পিকনিকের আনন্দময় যাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হয় বিষাদে। এমনটি আমাদের কাম্য ছিল না। আমি যেটুকু শুনেছি, যখন ছাত্ররা বাসের হ্যান্ডেল ধরে ছিল তখন সেটা বিদ্যুতায়িত হয়ে মাহিন আহত হলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে সাকিবও আহত হয়। নাঈমের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন মৃত্যু আমরা কীভাবে মেনে নিব বলেন? এটা তো আজকে হওয়া কথা ছিল না।’

এদিকে দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে এসেছি। হাইস গাড়িতে করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত আমরা এটাকে দুর্ঘটনা বলব। কাউকে দোষারোপ না করে পরিস্থিতি উত্তরণে আমরা কাজ করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত