গেমের টাকা জোগাতে অপহরণ নাটক সাজায় কিশোর

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০: ১৫

আপনার ভাইকে অপহরণ করেছি তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেব, না হলে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখব। এমন সংবাদে যখন বড়ভাই দিশেহারা তখন ছোট ভাইকে খুঁজতে পুলিশের সহযোগিতা নেন তিনি। পুলিশ অপহরণকারী চক্রকে আটক করে জানতে পারে এটা ছিল তাঁর ছোট ভাইয়ের সাজানো একটি নাটক। 

পরে জানা যায়, অনলাইন গেমের টাকা সংগ্রহ করতেই এমন পরিকল্পনা করে স্কুল পড়ুয়া তিন শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছোট ভাই ও তার দুই সহপাঠী তাকে সহযোগিতা করে। 

জানা যায়, গত ৯ ফেব্রয়ারি বিকেলে গেইমের টাকা জোগাড় করতে নিজে অপহরণ হয়েছে এমন সংবাদ পরিবারের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই কিশোর সকালে বের হয়ে আমতলিতে তারা তিন বন্ধু একত্রিত হয়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী এক নির্জনস্থানে যায়। প্রথমে ওই কিশোরের ভাবীর নম্বরে কল করে তিন লাখ টাকা দাবি করে তার বাকি দুই বন্ধু। অন্যথায় তাঁর দেবরকে হত্যা করা হবে বলে জানানো হয়। এরপর তারা আত্বগোপনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরে তার বড় ভাইকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা। এরপর রাতের মধ্যে তিন লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাঁর ছোট ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এমন ঘটনায় বড় ভাই দিশেহারা হয়ে ত্রিশাল থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। এ সময় থানায় বসে থাকা অবস্থায় অপহরনকারীরা টাকার জন্য তাগিদ দিতে থাকে। 

অভিযোগ পেয়ে ত্রিশাল থানা-পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অপহরনকারীচক্র অবস্থান নিশ্চিত করে। পুলিশের পরামর্শেই বড় ভাইয়ের মোবাইলে কথা বলে সময় ক্ষেপন করে এবং টাকার অংক কমানোর কথাবার্তা চলতে থাকে। এত টাকা রাতের বেলা জোগাড় করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব না বলে দরকষাকষির একপর্যায়ে ২৫ হাজার টাকা দফারফা হয়। ২৫ হাজার টাকা বিনিময়ে তার ছোট ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিন্ধান্ত হয়। এরপর বড়ভাই অপহরনকারীর দেওয়া নম্বর অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা পাঠায়। স্থানীয় গোহাটা মোড় থেকে রাত ১২টার দিকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায় তারা। এরপর পুলিশ বিকাশ দোকানের অবস্থান নিশ্চিত করে। পরে বড় ভাইকে আরও দশ হাজার টাকা পাঠাতে বলে পুলিশ। এরপর তিনজন রাত দেড়টার দিকে এই টাকা উত্তোলন করতে আসলে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া ত্রিশাল থানা-পুলিশের একটি টিম তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। 

এ সময় ত্রিশাল থানা-পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোবাইলের অনলাইন গেইমের টাকা জোগাড়ের জন্যেই অপহরনের নাটক সাজনো হয় বলে জানায় ওই তিন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী। 

অপহৃত শিক্ষার্থী থানা থেকে বের হয়ে বলে, ‘ইন্টারনেটে মোবাইল গেম খেলতে টাকা লাগে। তাই এই পন্থা নিয়েছি।’ সে আরও বলে, ‘বাবার অনেক টাকা আছে। গেমের কথা বললে টাকা দেয় না তাই এই পথ বেছে নিয়েছি। মোবাইলে গেমে অনেক টাকা ধার হয়ে গেছে তা পরিশোধ করার আর অন্য কোনো উপায় ছিল না।’ 

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দিনরাত চেষ্টা করে তাদেরকে আটক করা হয়েছে এবং এই অপহরণ নাটকের মূল কারণ খুঁজে বের করা হয়েছে। অপরাধীরা কিশোর হওয়ায় পরিবারের কাছে মুচলেকা দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

ওসি আরও বলেন, স্মার্টফোনে ডিজিটাল ভিডিও গেম খেলার আসক্তি বেড়েছে শিশু-কিশোরদের। অবাধে অভিভাবকদের সামনেই প্রকাশ্যে এসব ব্যবহার করছে শিশু-কিশোরেরা। মোবাইল আর গেম তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। সহপাঠীদের আছে এমন কথায় অনেক সময়ে অভিভাবকেরাও শিশুদের হাতে মোবাইল দিয়ে নিজেরা সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকছেন। যা সমাজে ব্যাপক ব্যাধির আকার ধারন করেছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত