ময়মনসিংহের কয়েকটি উপজেলায় গত ৩ দিনে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চারজনেই হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। গত রোববার থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার গফরগাঁও, ভালুকা, ঈশ্বরগঞ্জ ও ফুলপুর উপজেলায় তাদের মৃত্যু হয়।

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মৃতের পরিবার জানায়, গত রোববার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের বাঘবের গ্রামের আফাজ উদ্দিন ঢালীর ছেলে ফজলুল হক ঢালী (৫৬) বাজার করে বাড়ির টয়লেটে যান। পরে বের হতে দেরি হওয়ায় তার মা টয়লেটের দরজা খুলে দেখেন ফজলুল হক সেখানে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবাশীষ রাজবংশী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই ফজলুল হক ঢালীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে, অতিরিক্ত গরমে এমনটা হতে পারে বলেও ধারণা করছি।’

অপরদিকে গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া বাজারের রমজান খলিফা (৫৫) নিজের দোকানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ শরীর খারাপ লাগছে বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা টের পেয়ে মাথায় পানি দিতে শুরু করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই রমজান অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তবে, হাসপাতালে নেওয়া হয়নি বা পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। তিনি একই ইউনিয়নের পাইস্কা গ্রামের বাসিন্দা।’

আজ মঙ্গলবার জেলার ফুলপুর উপজেলায় কয়রা ইউনিয়নের ইমাতপুর গ্রামে শিল-পাটা কাটার কাজ করছিলেন রমজান আলী। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঘটনাস্থলেই রমজানআলী মারা যান। তিনি তারাকান্দা উপজেলার ৩ নম্বর কাকনী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বগীরপাড়া গ্রামের মৃত শুকুর মাহমুদের ছেলে।

তারাকান্দা বগীপাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মো. তরিকুর রহমান খন্দকার রাশেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রমজান আলী গ্রামে গ্রামে ঘুরে মসলা ভাটার শিলপাটা কাটার কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো আজ তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ফুলপুর উপজেলার ইমাতপুরে যান। সেখানে কাজ করা অবস্থায় দুপুরে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে মারা যান।’

উপজেলা স্বাস্থ‍্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হুমায়ন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালে আসার আগেই রমজান আলীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে বা অন্য কোনো কারণে তাঁর মৃত্যু হতে পারে।’

একইদিন সকালে ভালুকা উপজেলায় কামরুল ইসলাম (৩০) নামে এক গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি গৌরীপুর উপজেলার রায় শিমুল গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে এবং ভালুকার মাস্টার বাড়ি এলাকার পুর্বাশা নিট কম্পোজিটে চাকরি করতেন।

ভালুকা শিল্প পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ মানিকুজ্জামান বলেন, ‘কামরুল ইসলাম ভালুকায় বসবাস করে পুর্বাশা নিট কম্পোজিটে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন সকালে কামরুল অসুস্থ অবস্থায় ভাইকে নিয়ে গার্মেন্টসে যান। গার্মেন্টসে গিয়ে কর্তব্যরত নার্সকে অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে চলে আসেন।

সেখান থেকে কামরুল ইসলাম প্রথমে চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’