মো. গোলাম মোস্তফা, পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
১৯৫২ সালে আজিম উদ্দিন দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সে সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করার দায়ে তাঁকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করে। এরপর চিরতরেই বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। অবশেষে ২০১৪ সালে তাঁর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাঁর বয়স ৮১ বছর। মাতৃভাষার জন্য এই ত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন নেত্রকোনার আজিম উদ্দিন।
আজিম উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত শমসের আলী। ৮৯ বছর বয়সী আজিম উদ্দিন বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো উত্তেজনা বোধ করেন।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আজিম উদ্দিনের। মেলে ধরেন তাঁর স্মৃতির পাতা।
আজিম উদ্দিন বলেন, ১৯৫২ সালে তিনি নেত্রকোনা আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ছাত্র অবস্থায় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল তাঁর। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখেন একাধিক কবিতা।
এর মধ্যে ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে লেখা ‘পকেট ভারী’ ও ‘ঘুষের থলি’ শিরোনামে দুটি কবিতা স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৫ ডিসেম্বর নেত্রকোনা দত্ত উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ‘আজব বুড়ি’ শিরোনামে লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন তিনি। কবিতার প্রথম চরণগুলো হলো ‘ঢাকার গগনে মেঘ ঘন বরষা, মিলিটারি ছাড়া আর নাহি ভরসা’। ওই দিন রাতেই পুলিশ তাঁর বাসায় গিয়ে কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে আসে। এর কয়েক দিন পরই ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কবিতা লেখার’ কারণ জানতে চেয়ে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়।
সে সময় তিনি নোটিশের জবাবে বলেছিলেন, ‘যা সত্য তাই লিখেছি।’ পরপর তিনবার তাঁকে নোটিশ দেওয়ার পরও একই জবাব দেন তিনি। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৯৫৩ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর আজিম উদ্দিনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁকে আপসের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তী সময়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আজিম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও তিনি সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলনে নেত্রকোনা ও নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ বিভিন্ন বইয়ে তাঁর গৌরবদীপ্ত বীরত্বগাথার কথা লেখা রয়েছে।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে নেত্রকোনা আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। সে সময় সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেন। তত দিনে পেরিয়ে গেছে ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর। প্রতীকী হলেও এত বছর পর এমন সম্মান পাওয়ায় গর্বিত আজিম উদ্দিন।
আজিম উদ্দিন বলেন, ‘বাবা-মায়ের আশা ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবায় কাজ করব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বায়ান্ন পরবর্তী যত আন্দোলন হয়েছে সব কটিরই বীজ বোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। কিন্তু ভাষাসৈনিকেরা আজও যথাযথ মর্যাদা পাননি। তা ছাড়া যখন মায়ের ভাষার বিকৃত উচ্চারণ শুনি, তখন খুব দুঃখ লাগে। বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা, সংবর্ধনা দেওয়া হলেও সরকারি পর্যায়ে কোনো স্বীকৃতি নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
আজিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার একুশে পদকের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আজও তা ভাগ্যে জোটেনি। মৃত্যুর আগে এ সম্মান পেলে নিজেকে গর্বিত মনে হবে।’
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক ও লেখক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব বলেন, ‘আজিম উদ্দিনের মতো ভাষাসৈনিকেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজটি বপন করেছিলেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আজিম উদ্দিনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁর জীবনের একটি অনবদ্য ত্যাগ। আজিম উদ্দিনের মতো ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁদের সেই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত।’
১৯৫২ সালে আজিম উদ্দিন দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সে সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করার দায়ে তাঁকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করে। এরপর চিরতরেই বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। অবশেষে ২০১৪ সালে তাঁর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাঁর বয়স ৮১ বছর। মাতৃভাষার জন্য এই ত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন নেত্রকোনার আজিম উদ্দিন।
আজিম উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত শমসের আলী। ৮৯ বছর বয়সী আজিম উদ্দিন বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো উত্তেজনা বোধ করেন।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আজিম উদ্দিনের। মেলে ধরেন তাঁর স্মৃতির পাতা।
আজিম উদ্দিন বলেন, ১৯৫২ সালে তিনি নেত্রকোনা আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ছাত্র অবস্থায় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল তাঁর। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখেন একাধিক কবিতা।
এর মধ্যে ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে লেখা ‘পকেট ভারী’ ও ‘ঘুষের থলি’ শিরোনামে দুটি কবিতা স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৫ ডিসেম্বর নেত্রকোনা দত্ত উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ‘আজব বুড়ি’ শিরোনামে লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন তিনি। কবিতার প্রথম চরণগুলো হলো ‘ঢাকার গগনে মেঘ ঘন বরষা, মিলিটারি ছাড়া আর নাহি ভরসা’। ওই দিন রাতেই পুলিশ তাঁর বাসায় গিয়ে কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে আসে। এর কয়েক দিন পরই ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কবিতা লেখার’ কারণ জানতে চেয়ে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়।
সে সময় তিনি নোটিশের জবাবে বলেছিলেন, ‘যা সত্য তাই লিখেছি।’ পরপর তিনবার তাঁকে নোটিশ দেওয়ার পরও একই জবাব দেন তিনি। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৯৫৩ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর আজিম উদ্দিনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁকে আপসের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তী সময়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আজিম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও তিনি সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলনে নেত্রকোনা ও নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ বিভিন্ন বইয়ে তাঁর গৌরবদীপ্ত বীরত্বগাথার কথা লেখা রয়েছে।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে নেত্রকোনা আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। সে সময় সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেন। তত দিনে পেরিয়ে গেছে ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর। প্রতীকী হলেও এত বছর পর এমন সম্মান পাওয়ায় গর্বিত আজিম উদ্দিন।
আজিম উদ্দিন বলেন, ‘বাবা-মায়ের আশা ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবায় কাজ করব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বায়ান্ন পরবর্তী যত আন্দোলন হয়েছে সব কটিরই বীজ বোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে। কিন্তু ভাষাসৈনিকেরা আজও যথাযথ মর্যাদা পাননি। তা ছাড়া যখন মায়ের ভাষার বিকৃত উচ্চারণ শুনি, তখন খুব দুঃখ লাগে। বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা, সংবর্ধনা দেওয়া হলেও সরকারি পর্যায়ে কোনো স্বীকৃতি নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
আজিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার একুশে পদকের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আজও তা ভাগ্যে জোটেনি। মৃত্যুর আগে এ সম্মান পেলে নিজেকে গর্বিত মনে হবে।’
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক ও লেখক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব বলেন, ‘আজিম উদ্দিনের মতো ভাষাসৈনিকেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজটি বপন করেছিলেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আজিম উদ্দিনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁর জীবনের একটি অনবদ্য ত্যাগ। আজিম উদ্দিনের মতো ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁদের সেই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত।’
তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের ‘অযোগ্য’ বলছে একটি পক্ষ। আরেক পক্ষের অভিযোগ, আহ্বায়ক কমিটিতে এখন ‘ভূমিদস্যু’ ও ‘চাঁদাবাজদের’ দৌরাত্ম্য। তাই আলাদা হয়েছেন তাঁরা। তবে নগর বিএনপির আহ্বায়ক বলছেন, দ্বন্দ্ব-বিভাজনের কথা তাঁর জানা নেই।
১৯ মিনিট আগেরাজধানীর আজিমপুরে অপহৃত শিশুকে মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার রাতেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
৩৯ মিনিট আগেনিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের সড়কে বড় জমায়েত করে গতকাল শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলিগ জামায়াতের সাদপন্থীরা। নামাজ শেষে যাওয়ার আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
৮ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যায় আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রুকু আক্তার নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়
৯ ঘণ্টা আগে