একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা, বিলাপ থামছে না মা-বোনের

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ২২: ১৫

একমাত্র ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে নির্বাক বসে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা সুশিল কুমার ঘরামী। পাশে বসে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন মা গীতা রানী। বীর নিবাসের অন্য কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে কান্না করছেন একমাত্র বোন সুমা ঘরামী। পাশে বসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। 

আর ঘরের সামনে সিমেন্ট, বালু ও ইট দিয়ে সমাধি তৈরি করে মরদেহের অপেক্ষা করছেন স্থানীয়রা। আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কিসমত মালিপাটন গ্রামের সুমনের বাড়ির দৃশ্য এটি।

খুলনায় গতকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় নিহত হন পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামী (৩৫)। নিহত সুমন তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা ঘরামীকে নিয়ে খুলনার পূজাখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (সোনাডাঙ্গা জোন) দেহরক্ষী ছিলেন।

সুমন কুমারের বাড়ির সামনে এলাকাবাসী ও স্বজনেরা ভিড় করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যাম্বুলেন্স করে মৃতদেহ পৌঁছায় সুমনের বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও স্থানীয়রা। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় সুমনের বাড়ির সামনে। পরে সেখানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সুমনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শেষে সুমনের নিথর দেহ নেওয়া হয় ঘরের বারান্দায়। সেখানে বাবা-মা-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়স্বজনেরা সুমনের মরদেহ শেষবারের মতো দেখেন। 

পরে সন্ধ্যার দিকে নিজ ঘরের সামনে সুমনকে সমাহিত করা হয়। সুমনের বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ছেলেকে দাহ না করে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

সুমনকে গার্ড অব অনার দেওয়া ও সমাহিত করার সময়, বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানা, কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাখী ব্যানার্জী, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিন হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রতিবেশীরা জানান, তিনবার স্ট্রোক করেছেন সুমনের বাবা। শারীরিকভাবে সুস্থ না। ছেলের মৃত্যুর খবর এ নির্বাক হয়ে গেছেন। কোনো কথা বলছেন না। মাঝেমধ্যে শুধু বলছেন, হত্যার বিচার চান।

সুমনের মা গীতা রানী বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘এত ছবি তুলে কী হবে, আমার ছেলেকে কি ফিরিয়ে দিতে পারবা। তোমরা এত ছবি তুলছ কেন।’

মেঝেতে লুটিয়ে কান্না করতে করতে সুমনের একমাত্র বোন সুমা ঘরামী বলেন, ‘কারা মারল আমার ভাইকে। আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। কে চালাবে আমাদের এখন।’

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয় সুমন কুমার ঘরামীকে। ছবি: আজকের পত্রিকা এদিকে সুমনের মৃত্যুর খবরে আজ শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী স্থানীয় হরিমন্দিরের সামনে অপেক্ষায় থাকেন প্রিয় সুমনের জন্য। এই মন্দিরের পেছনেই পুলিশ কনস্টেবল সুমনের ঘরে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর নিবাসের ঘর পেয়েছেন তাঁরা। 

প্রতিবেশী ও সুমনের বন্ধু সমর কৃষ্ণন ঘরামী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এসএসসি পাস করছি। এরপর সে এইচএসসি পাস করে। এর কিছুদিন পর পুলিশে যোগদান করেন সুমন কুমার ঘরামী।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত