বাংলাদেশ পুলিশের রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ে বাগেরহাটে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নামের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেদনার্ত ঘটনাপ্রবাহকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটকটির ৫৯তম মঞ্চায়ন করা হয়। 

বেদনাবিধুর ঘটনার নাটকটি দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে। পুলিশ সদস্যরা অভিনয়ের মাধ্যমে ১৫ আগস্টের সেই করুণ কাহিনি ফুটিয়ে তোলেন। নিখুঁত অভিনয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দর্শক। সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হকসহ রাজনৈতিক দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই রাতে বিপথগামী সামরিক অফিসারদের নারকীয় তাণ্ডব মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। ঘটনাপ্রবাহে উঠে এসেছে খলনায়ক খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ঘাতক চক্রের মিত্রতা। উপস্থাপিত হয়েছে মেজর ফারুক, রশীদসহ পর্দার আড়ালে থাকা মাস্টারমাইন্ডদের দেশ দখলের নীলনকশা এবং সেই ষড়যন্ত্রে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পকদের ষড়যন্ত্রের বীজ বুনন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণসহ নানা বিষয়। 

ঘটনাপ্রবাহে দেখা মেলে আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের কর্মব্যস্ততার চিত্র। বাদ যায়নি শিশু শেখ রাসেলের করুণ আর্তনাদ ও তাকে বাঁচাতে পরীবানুর আকুতি। নাটকের দৃশ্যপটে উঠে এসেছে ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিটি মানুষ। সেই সূত্র ধরে উঠে এসেছে কর্মচারী রমা, পরীবানু, আব্দুল থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তা সিদ্দিকুরের অসীম মমত্ববোধ। তুলে ধরা হয়েছে বাড়ির মানুষদের সাধারণ জীবনযাপনের চিত্রও। 

বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, ‘নাটকটিতে সেই দিনের ঘটনাটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভোরে নৃশংসতার ঘটনাটি নতুন প্রজন্ম এই নাটকের মাধ্যমে জানতে পারবে।’ 

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা যে হৃদয়বিদারক নাটক মঞ্চস্থ করলেন, আসলে মন ছুঁয়ে গেছে। তারা অনেক বিষয় নিয়ে আসছেন।’ 

বাগেরহাটে পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘নাটকটির মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্মকে বার্তাটি দেওয়া। তারা জানে না পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা। অনেকে বইপুস্তক পড়ে জেনেছে। বাংলাদেশ পুলিশ নাটকের মাধ্যমে বার্তা দেশব্যাপী নতুন প্রজন্মকে জানাতে এই আয়োজন করেছে।’ 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ সাধারণত অপরাধীদের নিয়ে কাজ করে। কিন্তু পুলিশেরও অনেক সৃজনশীল কাজ রয়েছে। দেশপ্রেম রয়েছে, রয়েছে সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ। যে নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে, এর রচনা, নির্দেশনা, আলোকসজ্জা, অভিনয়—সবই করেছেন আমাদের পুলিশ সদস্যরা। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও জাতির কল্যাণে সৃজনশীল কাজসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

গবেষণালব্ধ প্রযোজনাটির পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. জাহিদুর রহমানের নির্দেশনায় এই নাটকে ৩০ জন পুলিশ সদস্য অভিনয় করেছেন।