ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল ৩ ভাই-বোনের

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ২৪

আহনাফ ও আদনীন দুই ভাই-বোন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন খালাতো, মামাতো ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনসহ ১০ জন। সবার বয়স ১৭ থেকে ২৫-এর মধ্যে। দুদিন আনন্দ-উল্লাসে কাটলেও তৃতীয় দিনে এসে সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল! রোয়াংছড়ির তারাছার বাধরা ঝরনার পাশে সাঙ্গু নদীতে গোসলে নেমে লাশ হলেন তাঁদের তিন জন। নদীতে ডুবতে থাকা খালাতো ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান অন্য তিন জন বলে জানা যায়। 

প্রাণ হারানো তরুণ-তরুনীরা হলেন, গজারিয়া উপজেলা বালুয়াকান্দি এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে মো. আহনাফ আকিব, তাঁর ছোট মেয়ে মারিয়াম আদনীন এবং তাঁর শ্যালিকার মেয়ে মারিয়া ইসলাম। আজ রোববার পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। 

জানা যায়, গত বুধবার ফতুল্লা থেকে তারা বান্দরবান যান। ওঠেন শহরের হোটেল দ্য প্যারাডাইসে। প্রথম দুদিন মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরিসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরেছেন। এরপর শুক্রবার রাতে তাঁদের ফতুল্লা ফেরার কথা। সকালে হোটেলে ব্যাগ, কাপড় গুছিয়ে বের হন নৌকা ভ্রমণে। শহরের ক্যাচিংঘাটা থেকে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে চলে যান বেতছড়ার বাধরা ঝরনায়। সেখানে ঝরনার মোহনায় নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে সাঁতার না জানা সত্ত্বেও আট জন নেমে পড়েন। দুজন নদীর পাড়ে ছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিট নদীতে গোসল করে সাত জন তিরে এলেও রয়ে যান খালাতো ভাই তানিশ। তানিশকে ডুবতে দেখে তাকে বাঁচাতে নেমে পড়েন সবাই। বহু কষ্টে তানিশকে টেনে তুললেও ডুবে যান মো. আহনাফ আকিব, তাঁর ছোট বোন মারিয়াম আদনীন ও তাঁদের খালাতো বোন মারিয়া ইসলাম। পরে মারিয়াকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিখোঁজ থেকে যান আহনাফ আকিব ও ছোট বোন মারিয়াম আদনীন। গতকাল শনিবার পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা তাঁদেরও মরদেহ উদ্ধার করেন। 

এ দিকে সন্তানদের বিপদের কথা শুনে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে বান্দরবান ছুটে যান সবার বাবা-মা। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদনীনের ও দুপুর দেড়টায় আহনাফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলে-মেয়ের মৃতদেহ দেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন বাবা জহিরুল ইসলাম ও মা সাইদা শিউলী। নদীর পাড়ে শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। 

ঘটনার বর্ণনায় এক ভাই তানিশ বলেন, ‘নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে আট জন গোসল করতে নামি। প্রায় ৪০ মিনিট পানিতে গোসলের পর বুঝতে পারি, আমার পায়ের নিচে মাটি নেই। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকি। ওই মুহূর্তে আমাকে বাঁচাতে সবাই নদীতে নামেন। পরে টেনে তোলেন। ততক্ষণে অন্য ভাইবোনেরা নিখোঁজ হয়ে যান। হাঁটু পানি হঠাৎ এত গভীর হলো কীভাবে, বুঝতে পারিনি।’ 

আহনাফ ও আদনীনের বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মেয়ে আদনীন সবার ছোট। আহনাফ সবার বড়। আদনীন নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আহনাফ ঢাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখন মেজো ছেলে ছাড়া তাদের আর কোনও সন্তান রইল না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত