রাজধানীর বাড্ডা ও শান্তিনগরে দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বাড্ডার আনন্দনগরের বাসা থেকে আবু বক্কর রিফাত (১৫) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।

বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোশারফ হোসেন সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন, মৃত রিফাত আনন্দনগরের বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে রিফাত নিজের রুমে ঘুমাতে যায়। সকাল ৯টার দিকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে তাকে ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা। পরে নিজেরাই চাদর কেটে রিফাতকে নিচে নামায় এবং থানায় খবর দেয়।

এসআই জানান, রিফাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিফাত আত্মহত্যা করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

রিফাতের বাবা সোহেল রানা জানান, তাঁদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার জোড়খালী গ্রামে। বর্তমানে আনন্দনগরের ওই বাসায় ভাড়া থাকেন। রিফাত স্থানীয় জাগরণী কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি থেকে পরীক্ষা দিয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

সোহেল রানা আরও জানান, রিফাতের মা রাবেয়া বেগম রিফাতের স্কুলে চাকরি করেন। সেই জন্য রিফাতের কোনো টাকা লাগত না। রিফাতের অনেক বন্ধু অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। রিফাত চেয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে। অন্য স্কুলে ভর্তি হতে অনেক টাকা লাগে, সে জন্য রিফাতকে আগের স্কুলেই ভর্তি হতে বলে। সে জেদি প্রকৃতির ছিল। যখন যা চাইতো তা-ই রিফাতকে দেওয়া লাগত। বন্ধুদের সঙ্গে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে রিফাত আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।

এদিকে রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসায় ইফতিয়াক মাহমুদ সাফি (২১) নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ইম্পিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। আজ শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মৃত সাফি পরিবারের সঙ্গে শান্তিনগর স্কাই ভিউ অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সাফি ইম্পিরিয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। বর্তমানে বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মাঝে সাফি ছিল দ্বিতীয়।

মৃত সাফির বাবা মো. গোলাম ফারুক রানা জানান, শুক্রবার রাতে তাঁকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তখন সন্দেহ হয়। পরে রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে সাফি। তাঁকে ঝুলন্ত থেকে নামিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

সাফির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি পরিবার।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রাতে শান্তিনগর থেকে এক শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে মারা যায়। পরিবার দাবি করেছে, সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।