তাজরীন ট্র্যাজেডি: তালা ভেঙে বন্ধ কারখানায় ঢুকে শ্রদ্ধা নিবেদন

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪৭
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৭
তাজরীন ফ্যাশন্স এর বন্ধ কারখানার মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন আহত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির এক যুগ পূর্তি হয়েছে আজ রোববার (২৪ নভেম্বর)। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শ্রমিকেরা।

আজ সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন্সের বন্ধ কারখানার মূল ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তাঁরা।

পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ আর পুনর্বাসনের দাবিতে প্রতিবছর তাজরীনের পোড়া ভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে নিহতদের স্মরণ করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ স্থানীয় শ্রমিকেরা।

এ সময় তাঁরা জানান, একদিকে সুচিকিৎসার অভাবে আহত শ্রমিকদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন, আবার অনেকেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আগুন থেকে বাঁচতে স্বামী রবিনকে নিয়ে ৪ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন পোশাক শ্রমিক ফাতেমা। তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কর্ম অক্ষম দিশেহারা দম্পতি শুরু করেন অন্যের জমিতে সবজি চাষ। পরে শুরু করেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর মারা যান রবিন। স্বামীর মৃত্যু, শিশু সন্তান জান্নাত ও ফাইজাকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ফাতেমা এখন একাই সৈনিক। স্বামীর হাতে গড়া ছোট্ট চায়ের দোকানই বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।

তাজরীন ফ্যাশন্সে কোয়ালিটি কন্ট্রোরাল হিসেবে কাজ করতেন রবিন। ২০২২ সালের ৯ মে মারা যান তিনি।

ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘চায়ের দোকান দেওয়ার দুই মাসের মাথায় মারা যায় আমার স্বামী। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে আমার পক্ষে একা সংসার চালানো তো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিনে বেচাবিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে দোকানের মালামালও কিনতে হয়। আবার আমারও চলতে হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রতি মাসে ১ বস্তা চাল কিনে দেন। চাওয়া এখন একটাই, ক্ষতিপূরণ।’

আজ সকাল থেকে আশুলিয়ায় কারখানাটির সামনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা ফুল হাতে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিল্প পুলিশও। শিল্প পুলিশ–১–এর এসপি মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মূল স্টেকহোল্ডার এই শ্রমিক ভাই–বোনরা। তাদের জন্যেই আমাদের কাজ, আমাদের সব কিছু। তাদের জন্যেই এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ তৈরি হয়েছে। আশা করি, প্রসিকিউশন বিভাগ এবং সবাই মিলে দ্রুত বিচারটা সম্পন্ন হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকে এবং এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে।’

এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আজকে তাজরীনের ১২ বছর। কিন্তু এ ঘটনায় কোনো বিচার এখনো হয়নি। নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো কষ্টে দিন পার করছে। আর আহত শ্রমিকেরা পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছেন। আমাদের দাবি, তাজরীনের এই ভবনটি ভেঙে এখানে শ্রমিকদের পুনর্বাসন অথবা হাসপাতালে তৈরি করা হোক।

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হয়; খোঁজ-খবর নিয়ে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়।’

সাভারে তাজরীন ট্র্যাজেডির আজ ১২ বছর পূর্তি হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাভারে তাজরীন ট্র্যাজেডির আজ ১২ বছর পূর্তি হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার এক যুগ পরও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার চায়নি তাই বিচার হয়নি। শ্রমিকেরা এখনো উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার পেল না। শ্রমিকদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার যেন দোষীদের বিচার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবেন।’

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে মোট ১১৭ জন পোশাকশ্রমিক নিহত ও ২০০ জনের অধিক আহত হন। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা দায়েরের এক যুগেও শেষ হয়নি বিচারকাজ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত