গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ভাই সহকারী শিক্ষক বছরের পর বছর স্কুলে অনুপস্থিত থেকে তুলে নিচ্ছেন বেতন-ভাতা। ওই ভাইয়ের স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন সভাপতি নিজেই। অন্যদিকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও কোনো নিয়োগ কমিটি ছাড়াই নিজের মেয়েকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্কুলটির লাইব্রেরিয়ান পদে পুরোনো তারিখে নিয়োগ দেখিয়েছেন সভাপতি। নিয়োগের বিষয়টি জানেন না প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় ও শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকটের মধ্যে সভাপতির এমন স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙে পড়েছে ওই স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা। ভয়ে কেউ মুখ খলতে চান না। এতে বেকায়দায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনা ঘটছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ীয়া এলাকার ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ে। অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান কাশিয়ানী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর ভাই স্বাক্ষর করে দেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে নির্মিত এই স্কুলটি ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হয়। সাবেক সভাপতি ছবুরোন নেছা ২০১৬ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে টানা আট বছর ধরে মায়ের স্কুলটির সভাপতি ছেলে মোহসিন মোল্লা। সেই প্রভাবেই তাঁর আপন ভাই সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান বছরের পর বছর ঢাকায় থাকেন। তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর তাঁর স্থলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন সভাপতি নিজেই। বিদ্যালয়টির বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জানেন না, মশিউর রহমান তাঁদের শিক্ষক। কেউ কেউ জানলেও গত পাঁচ বছরে তাঁকে স্কুলে দেখেছে মাত্র পাঁচ-সাত দিন। আর ভয়ে মুখ খুলতে চান না শিক্ষকেরা। বর্তমানে ওই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৫৬ জন।
শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ সালে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৯৯৭ সালে ছাপা হওয়া ওই স্কুলের নিয়োগের পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির কাগজ এনে নিজের মেয়ে ফেরদৌসী আরা বৃষ্টিকে দিয়েছেন লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। নিয়োগের আট বছর পর সম্প্রতি বৃষ্টির ফাইল এমপিওভুক্তির জন্য সভাপতি স্কুলের আইডি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তরে।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিন মশিউর রহমান স্যারকে পেয়েছি। পরে এক দিন এসেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে মনে হয় আর তাঁকে পাইনি। ক্লাস সেভেনে ওঠার পরে এক দিন দেখেছি; আর এইটেও (অষ্টম শ্রেণিতে) এক দিন দেখেছি। এতে আমাদের একটা ক্লাসে সমস্যা হচ্ছে।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাত মল্লিক বলে, ‘মশিউর স্যার প্রতিদিন আসে না, কিন্তু মাসে একবার-দুবার আসে স্কুলে।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন মোল্যা বলছে, ‘মশিউর স্যার কোন বিষয়ের ক্লাস নেন, তা জানি না। বছরে চার-পাঁচ দিন আসেন বাড়িতে। স্কুলের পাশেই তাঁর বাড়ি। আর বাড়িতে এসে মাঝে মাঝে স্কুলে আসতে দেখি। শুনেছি তিনি ঢাকা জব করে, কিন্তু কী জব করে তা-ও জানি না।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর মোল্যা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। মশিউর স্যারকে পাঁচ বছরের মধ্যে দুই দিন দেখেছি। তিনি ক্লাস নেন না, স্কুলেও আসেন না। হয়তো পারিবারিক কোনো কাজ বা স্কুলের কোনো কাজ থাকলে স্কুলে আসে, তা ছাড়া আসে না। আমি নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে জানতে পারছি যে মশিউর রহমান আমাদের স্যার।’
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. লিটন মল্লিক বলেন, ‘সভাপতির নিজেদের সিদ্ধান্তে স্কুলের সবকিছু চলে। এতে আমাদের গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না। সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাড়ির পাশের স্কুল রেখে ছেলে-মেয়েদের দূরের স্কুলে ভর্তি করতে হয়। এর জন্য আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই স্কুলে ভালো লেখাপড়া পরিবেশ যেন ফিরে আসে।’
এ বিষয়ে ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহসিন মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৬ সালে আমার মেয়েকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ তবে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি।
কাগজ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজগুলো খুঁজে দেখতে হবে। স্কুলে আছে, নাহয় বাড়িতে আছে। নিয়োগের বিষয়টি স্কুলের সকলেই জানে।’
সভাপতির আপন ভাই শিক্ষক মশিউর রহমানের স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, তাঁর ভাই স্কুলে আসেন। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক কারণে ছুটি নিয়ে স্কুলের বাইরে থাকেন।
কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতা অনুযায়ী তিনি স্কুলেই থাকেন। তাঁর ভাইয়ের ছুটি নেওয়া সংক্রান্ত কোনো কাগজ স্কুলে পাওয়া যায়নি। তবে ভাইয়ের স্থলে নিজের স্বাক্ষর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে স্কুলের কাজে ও রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ও স্কুলের বাইরে যাই। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ে স্কুলেই থাকি।’ তবে স্কুলের শিক্ষক হাজিরা খাতা থেকে জানা যায় তিনি প্রতিদিনই স্কুলে উপস্থিত থাকেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ওয়ালিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সভাপতির মায়ের নামে স্কুল। তিনি সারা দিনই স্কুলে থাকেন। তাঁর ইচ্ছেমতো স্কুল পরিচালনা করেন। তাঁরই আপন ভাই স্কুলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান। একদিকে স্কুলে শিক্ষক সংকট রয়েছে, অপর দিকে শিক্ষক মশিউর রহমান স্কুলে ঠিকমতো আসেন না। সভাপতির মায়ের নামের স্কুল ও তাঁদের জায়গায় স্কুল হওয়ায় তাঁদের একটা প্রভাব আছে এখানে। তাঁদের বাইরে কথা বলা যায় না। সভাপতি তাঁর ভাইয়ের স্বাক্ষর নিজে করে দেন। এই নিয়ে সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে একদিন সভাপতির সঙ্গে আমার তুমুল ঝগড়া হয়। তিনি আমাকে একপর্যায়ে বলেন, আমি স্বাক্ষর করব, আপনি যা পারেন তা-ই করেন।’
সভাপতির মেয়ের নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘২০১০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের স্কুলে এনটিআরসি ব্যতীত কোনো নিয়োগ হয়নি। সভাপতি তাঁর মেয়েকে স্কুলের লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছেন, বিষয়টি আমি জানি না। তবে শিক্ষক সংকট থাকায় সভাপতির অনুরোধক্রমে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সভাপতির মেয়ে ফেরদৌসী আরা বৃষ্টিকে মাঝে মাঝে স্কুলের ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি স্কুলের ক্লাস নেয়।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয় সম্পর্কে আমি যেটা জেনেছি, ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাঁর মেয়েকে পুরোনো ডেটে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি কৌশলে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনের আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে তিনি তাঁর মেয়ের এমপিওর আবেদন করেছেন। যেটা মনে হলো, প্রধান শিক্ষক খুব ভীত অবস্থায় থাকেন। সভাপতির দৌরাত্ম্যই সেখানে বেশি।’
সিদ্দিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমার কাছে সভাপতির মেয়ের এমপিওর আবেদন পাঠিয়ে বলেছেন—এটা রিজেক্ট দিতে হবে। আমি বাতিল দিলে এখানকার লোকজন চাপ সৃষ্টি করে। এ জন্য এই ফাইল বাতিল হবে জেনেও কারণগুলো লিখে পাঠিয়েছি অধিদপ্তরে। অধিদপ্তর থেকে বাতিল হয়ে ফাইল এখানে ফেরত আসলে, আমি তদন্ত করে বাস্তব চিত্র আবারও দেখার চেষ্টা করব। তবে এই নিয়োগের জন্য সভাপতিই দায়ী।’
শিক্ষকের স্কুলে অনুপস্থিতির বিষয়ে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘জানতে পেরেছি মশিউর রহমান নামে ওই স্কুলের একজন শিক্ষক বছরের পর বছর স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন, কিন্তু বেতন-ভাতা তুলে নেন। এর জন্য ওই স্কুলের সভাপতিই দায়ী। আমি স্কুলে সরেজমিন যাব, বাস্তব চিত্র দেখব। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখব।’
গোপালগঞ্জের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ভাই সহকারী শিক্ষক বছরের পর বছর স্কুলে অনুপস্থিত থেকে তুলে নিচ্ছেন বেতন-ভাতা। ওই ভাইয়ের স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন সভাপতি নিজেই। অন্যদিকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও কোনো নিয়োগ কমিটি ছাড়াই নিজের মেয়েকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্কুলটির লাইব্রেরিয়ান পদে পুরোনো তারিখে নিয়োগ দেখিয়েছেন সভাপতি। নিয়োগের বিষয়টি জানেন না প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় ও শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকটের মধ্যে সভাপতির এমন স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙে পড়েছে ওই স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা। ভয়ে কেউ মুখ খলতে চান না। এতে বেকায়দায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনা ঘটছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ীয়া এলাকার ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ে। অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান কাশিয়ানী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর ভাই স্বাক্ষর করে দেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে নির্মিত এই স্কুলটি ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হয়। সাবেক সভাপতি ছবুরোন নেছা ২০১৬ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে টানা আট বছর ধরে মায়ের স্কুলটির সভাপতি ছেলে মোহসিন মোল্লা। সেই প্রভাবেই তাঁর আপন ভাই সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান বছরের পর বছর ঢাকায় থাকেন। তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর তাঁর স্থলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন সভাপতি নিজেই। বিদ্যালয়টির বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জানেন না, মশিউর রহমান তাঁদের শিক্ষক। কেউ কেউ জানলেও গত পাঁচ বছরে তাঁকে স্কুলে দেখেছে মাত্র পাঁচ-সাত দিন। আর ভয়ে মুখ খুলতে চান না শিক্ষকেরা। বর্তমানে ওই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৫৬ জন।
শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ সালে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৯৯৭ সালে ছাপা হওয়া ওই স্কুলের নিয়োগের পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির কাগজ এনে নিজের মেয়ে ফেরদৌসী আরা বৃষ্টিকে দিয়েছেন লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। নিয়োগের আট বছর পর সম্প্রতি বৃষ্টির ফাইল এমপিওভুক্তির জন্য সভাপতি স্কুলের আইডি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তরে।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিন মশিউর রহমান স্যারকে পেয়েছি। পরে এক দিন এসেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে মনে হয় আর তাঁকে পাইনি। ক্লাস সেভেনে ওঠার পরে এক দিন দেখেছি; আর এইটেও (অষ্টম শ্রেণিতে) এক দিন দেখেছি। এতে আমাদের একটা ক্লাসে সমস্যা হচ্ছে।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাত মল্লিক বলে, ‘মশিউর স্যার প্রতিদিন আসে না, কিন্তু মাসে একবার-দুবার আসে স্কুলে।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন মোল্যা বলছে, ‘মশিউর স্যার কোন বিষয়ের ক্লাস নেন, তা জানি না। বছরে চার-পাঁচ দিন আসেন বাড়িতে। স্কুলের পাশেই তাঁর বাড়ি। আর বাড়িতে এসে মাঝে মাঝে স্কুলে আসতে দেখি। শুনেছি তিনি ঢাকা জব করে, কিন্তু কী জব করে তা-ও জানি না।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর মোল্যা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। মশিউর স্যারকে পাঁচ বছরের মধ্যে দুই দিন দেখেছি। তিনি ক্লাস নেন না, স্কুলেও আসেন না। হয়তো পারিবারিক কোনো কাজ বা স্কুলের কোনো কাজ থাকলে স্কুলে আসে, তা ছাড়া আসে না। আমি নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে জানতে পারছি যে মশিউর রহমান আমাদের স্যার।’
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. লিটন মল্লিক বলেন, ‘সভাপতির নিজেদের সিদ্ধান্তে স্কুলের সবকিছু চলে। এতে আমাদের গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না। সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাড়ির পাশের স্কুল রেখে ছেলে-মেয়েদের দূরের স্কুলে ভর্তি করতে হয়। এর জন্য আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই স্কুলে ভালো লেখাপড়া পরিবেশ যেন ফিরে আসে।’
এ বিষয়ে ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহসিন মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৬ সালে আমার মেয়েকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ তবে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি।
কাগজ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজগুলো খুঁজে দেখতে হবে। স্কুলে আছে, নাহয় বাড়িতে আছে। নিয়োগের বিষয়টি স্কুলের সকলেই জানে।’
সভাপতির আপন ভাই শিক্ষক মশিউর রহমানের স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, তাঁর ভাই স্কুলে আসেন। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক কারণে ছুটি নিয়ে স্কুলের বাইরে থাকেন।
কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতা অনুযায়ী তিনি স্কুলেই থাকেন। তাঁর ভাইয়ের ছুটি নেওয়া সংক্রান্ত কোনো কাগজ স্কুলে পাওয়া যায়নি। তবে ভাইয়ের স্থলে নিজের স্বাক্ষর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে স্কুলের কাজে ও রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ও স্কুলের বাইরে যাই। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ে স্কুলেই থাকি।’ তবে স্কুলের শিক্ষক হাজিরা খাতা থেকে জানা যায় তিনি প্রতিদিনই স্কুলে উপস্থিত থাকেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ওয়ালিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সভাপতির মায়ের নামে স্কুল। তিনি সারা দিনই স্কুলে থাকেন। তাঁর ইচ্ছেমতো স্কুল পরিচালনা করেন। তাঁরই আপন ভাই স্কুলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান। একদিকে স্কুলে শিক্ষক সংকট রয়েছে, অপর দিকে শিক্ষক মশিউর রহমান স্কুলে ঠিকমতো আসেন না। সভাপতির মায়ের নামের স্কুল ও তাঁদের জায়গায় স্কুল হওয়ায় তাঁদের একটা প্রভাব আছে এখানে। তাঁদের বাইরে কথা বলা যায় না। সভাপতি তাঁর ভাইয়ের স্বাক্ষর নিজে করে দেন। এই নিয়ে সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে একদিন সভাপতির সঙ্গে আমার তুমুল ঝগড়া হয়। তিনি আমাকে একপর্যায়ে বলেন, আমি স্বাক্ষর করব, আপনি যা পারেন তা-ই করেন।’
সভাপতির মেয়ের নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘২০১০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের স্কুলে এনটিআরসি ব্যতীত কোনো নিয়োগ হয়নি। সভাপতি তাঁর মেয়েকে স্কুলের লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছেন, বিষয়টি আমি জানি না। তবে শিক্ষক সংকট থাকায় সভাপতির অনুরোধক্রমে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সভাপতির মেয়ে ফেরদৌসী আরা বৃষ্টিকে মাঝে মাঝে স্কুলের ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি স্কুলের ক্লাস নেয়।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছবুরোন নেছা উচ্চবিদ্যালয় সম্পর্কে আমি যেটা জেনেছি, ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাঁর মেয়েকে পুরোনো ডেটে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি কৌশলে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনের আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে তিনি তাঁর মেয়ের এমপিওর আবেদন করেছেন। যেটা মনে হলো, প্রধান শিক্ষক খুব ভীত অবস্থায় থাকেন। সভাপতির দৌরাত্ম্যই সেখানে বেশি।’
সিদ্দিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমার কাছে সভাপতির মেয়ের এমপিওর আবেদন পাঠিয়ে বলেছেন—এটা রিজেক্ট দিতে হবে। আমি বাতিল দিলে এখানকার লোকজন চাপ সৃষ্টি করে। এ জন্য এই ফাইল বাতিল হবে জেনেও কারণগুলো লিখে পাঠিয়েছি অধিদপ্তরে। অধিদপ্তর থেকে বাতিল হয়ে ফাইল এখানে ফেরত আসলে, আমি তদন্ত করে বাস্তব চিত্র আবারও দেখার চেষ্টা করব। তবে এই নিয়োগের জন্য সভাপতিই দায়ী।’
শিক্ষকের স্কুলে অনুপস্থিতির বিষয়ে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘জানতে পেরেছি মশিউর রহমান নামে ওই স্কুলের একজন শিক্ষক বছরের পর বছর স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন, কিন্তু বেতন-ভাতা তুলে নেন। এর জন্য ওই স্কুলের সভাপতিই দায়ী। আমি স্কুলে সরেজমিন যাব, বাস্তব চিত্র দেখব। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখব।’
নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের সড়কে বড় জমায়েত করে গতকাল শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন তাবলিগ জামায়াতের সাদপন্থীরা। নামাজ শেষে যাওয়ার আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
৫ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যায় আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রুকু আক্তার নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়
৫ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত বুধবার উদ্ধার হওয়া খণ্ডবিখণ্ড লাশটি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২)। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রুমা আক্তার নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৬ ঘণ্টা আগেরাজশাহীতে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
৭ ঘণ্টা আগে