আমলাতান্ত্রিক চর্চা ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তির প্রস্তাব ঢাবি শিক্ষক সমাজের

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ০২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, আমলাতান্ত্রিক চর্চা ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমাজ। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, আবাসন, পরিবেশ নিয়ে সংস্কারের নানা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান এ প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে রয়েছেন। সভায় বক্তব্য রাখেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও উমামা ফাতেমা।

সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী—প্রভাষক নিয়োগ হবে অস্থায়ী। প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের পর পিএইচডি এবং নিজ ডিসিপ্লিনের একটি টপ জার্নালে একক আর্টিকেল প্রকাশ করার পর সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ বা পদোন্নতি পাবেন।

এ ক্ষেত্রে দুইটি ধাপ অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া হবে। তা হলো—প্রথম ধাপে উচ্চতর ডিগ্রি বা অভিজ্ঞতা (এমফিল পিএইচডি পোস্টডক ফেলোশিপ), প্রকাশনা, শিক্ষকতা যোগ্যতা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রয়োজন বিবেচনায় বিভাগের একাডেমিক কমিটি আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করবেন।

দ্বিতীয় ধাপে বাছাইকৃতদের ক্যাম্পাস ভিজিটের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তারা তিনটি পর্বে অবতীর্ণ হবেন। প্রথমে তিনি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নিয়োগ কমিটির উপস্থিতিতে টিচিং ডেমোনেস্ট্রেশন দেবেন এবং শ্রোতারা একটি মূল্যায়নপত্রে রেটিং দেবেন; দ্বিতীয় পর্বে তিনি শিক্ষার্থীদের (প্রধানত মাস্টার্স) সঙ্গে সংলাপ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব করবেন (এতে শিক্ষার্থীরা বেনামে আবেদনকারীর ব্যাপারে মতামত জানাবেন) ; তৃতীয়ত নিয়োগ কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকার পর্বে অবতীর্ণ হবেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যের চেক লিস্টসহ এক সেট প্রশ্নমালা থাকবে, সেই সেট থেকে প্রশ্ন করতে হবে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে—ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা, একজন শিক্ষকদের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অনুপাত অন্তত ৪০ সংখ্যায় নিয়ে আসা, বাজার চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিভাগে ভর্তি ৪০ জনের মধ্যে রাখা, পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাসিক অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া, শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরি ও ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

অবকাঠামো বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো জমি পুনরুদ্ধার, উন্নয়নমূলক কাজের দরপত্রে স্বচ্ছতা এবং অনলাইনভিত্তিক করে ফেলতে হবে; শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তি, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা; সাউন্ডপ্রুফ এবং স্মার্ট করতে হবে; ক্যাম্পাসের সর্বত্র শক্তিশালী ওয়াইফাই ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে; অধিভুক্ত সাত কলেজকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান রিসোর্সকে নিজেদের উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়োজিত করতে হবে।

সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়, শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরির বয়স সীমা বিবেচনায় না রেখে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, অর্জন, পাবলিকেশনস ও পারফরম্যান্স; পিয়ার রিভিউড জার্নাল আর্টিকেল জমা দেওয়া; শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি বিবেচনায় নিতে হবে এবং পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে আমলাতান্ত্রিক চর্চা ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতাকাঠামোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিচালনা কমিটি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রভোস্ট ও প্রক্টর নির্বাচনের রূপরেখা দেয় শিক্ষকদের এ প্ল্যাটফর্ম।

 ‘শিক্ষা-ভাবনা-আমাদের প্রস্তাব’ এবং ‘প্রশাসন ও ক্ষমতা কাঠামোর পুনর্বিন্যাস’ নামে দুই পর্বে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ্-আল-মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান।

এ অনুষ্ঠানে উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত বিচারে সমাজের প্রতিষ্ঠান। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। ফলে তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। প্রতিষ্ঠানকে জ্ঞান নির্ভর ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ এ সময় প্রস্তাবের খসড়া জমা দেওয়ারও অনুরোধ করেন নিয়াজ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত