ঢাকায় বিএনপির ডাকা আগামীকালের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর প্রায় সকল প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের সেতু পেরিয়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে র‍্যাব। এতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চেক ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছে সাধারণ যাত্রীরা। 

বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশ ঠেকাতে ঢাকার উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদারগুলোতে ৫৯টি তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। তিনি সন্দেহভাজন লোকজন ও গণপরিবহন দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করছেন। 

তুরাগ নদের উত্তর অংশে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সেতু পেরিয়ে দক্ষিণ অংশে আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল কারনেশন মার্কেটের সামনে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে র‍্যাব।

এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা থেকে আবদুল্লাহপুর সড়কে একটি, আশুলিয়া সড়ক থেকে কামাড়পাড়া, বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা মহানগরীর তুরাগ ও উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে আরও ও বেশ কয়েকটি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেলে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী সড়কে অন্যান্য দিনের চেয়ে দূরপাল্লাসহ গণপরিবহন অনেকটাই কম। তল্লাশি চৌকিগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। দূরপাল্লার যানবাহনে মিনিট দশেকের তল্লাশি চালালেও সড়কে হেঁটে চলাচলকারীদের কাছে চাওয়া হচ্ছে পরিচয়পত্র।  

এ ছাড়া টঙ্গীর কলেজগেট থেকে উত্তরার সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষে আড়াই কিলোমিটার খুলে দেওয়া উড়াল সেতুর দুপাশে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। সেতুটির দক্ষিণ পাশে উত্তরার সাঈদ গ্র্যান্ড সেন্টার এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাসির উদ্দিন। 

তল্লাশিতে হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হয়রানির বন্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কে রয়েছে। ধৈর্য ধরে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের উচিত আমাদের সহযোগিতা করা।’ 

অপরদিকে টঙ্গী-কামারপাড়া শাখা সড়কের কামারপাড়া এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক পার্থ প্রতিম সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টঙ্গীর কামাড়পাড়া সড়কে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। গাজীপুর থেকে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম শাখা সড়ক এটি। আমরা এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করিনি। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও গণপরিবহনে তল্লাশি করছে পুলিশ সদস্যরা।’

টাঙ্গাইল জেলা থেকে যাত্রীবাহী একটি বাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় পৌঁছায় বিনিময় নামে একটি গণপরিবহন। কথা হয় নোমান নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত পুলিশের ছয়টি তল্লাশি চৌকি পার হতে হয়েছে। আমার সঙ্গে আমার মা, স্ত্রী ও শিশু বাচ্চা রয়েছে। পরিবার নিয়ে কেউ সমাবেশে যোগ দেয়? তবু আমাদের ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি করা হয়েছে। এটি রীতিমতো হয়রানি।’ 

ব্যক্তিগত গাড়িতে চেপে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মাসুম সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি টঙ্গীর বিসিক এলাকায় একটি ওয়াশিং কারখানার মালিক। আমার গাড়িতে কিছু মালামালও রয়েছে। পুলিশ আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মোবাইল ফোনের খুদেবার্তা দেখেছে। আমার দেহ ও গাড়ি তল্লাশি নিয়েছে।’ 

অন্যদিকে টঙ্গীর তুরাগ নদে অন্যান্য দিনের চেয়ে অতিরিক্ত নৌযান চলাচল করতে দেখা গেছে। 

বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে তল্লাশি চৌকির বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চেকপোস্ট পুলিশের নিয়মিত দায়িত্বের একটি অংশ। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার টঙ্গীতে গোপন বৈঠক থেকে বিএনপির কিছু নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধুমাত্র নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য কিংবা সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোনো ভালো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঢাকার সমাবেশ ঘিরে নাশকতা এড়াতে বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে পুলিশ।