আশুলিয়ার সেই হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। কলেজে অনুমতি ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করায় সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁকে শোকজ করা হয় গত ৩০ জুন। তবে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান এখন পর্যন্ত নোটিশ হাতে পাননি।
এদিকে গত ২৫ জুন শিক্ষক হামলার ঘটনার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। মাঝখানে ১ জুলাই একদিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ২ জুলাই থেকে ঈদুল আজহার ছুটি ঘোষণা করা হয়। খুলবে আগামী ১৭ জুলাই।
প্রতিষ্ঠানটি বেশ আগে থেকেই অনুমোদন ছাড়া চললেও শিক্ষক হত্যার বিষয়টি সামনে আসার পরে কেন শোকজ করা হলো জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এরকম প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের বিষয়টি তো আমার পর্যায়ে পড়ে না। আমি তো কলেজ পরিদর্শক। কলেজগুলোর ট্রানজেকশন ইজিলি আমাদের সঙ্গে হয়। তাঁদের সঙ্গে আমাদের যে চিঠি চালাচালি বা বিনিময় যেটা হয় সেটা কলেজ অংশ নিয়ে। আমরা এর নিচেরটা সাধারণত দেখার সুযোগ কম পাই। ওই পর্যায়ের রেজিস্ট্রেশন, ভর্তি বা ফরম কোনোটাই আমার কাছে আসে না। যখন একটা ঘটনা ঘটে গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। তাঁর রিপোর্টে এগুলো উঠে আসছে যে, তাঁরা নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অনুমোদনবিহীনভাবে চালিয়েছেন। যখনই উঠে আসছে, তখনই আমি ধরেছি এবং শোকজ করেছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো ঈদের ছুটিতে বন্ধ আছে। ফলে ডাকযোগে নোটিশ অধ্যক্ষ যেদিন হাতে পাবেন, সেদিন থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। মিডিয়ার নিউজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো সেই চিঠি হাতে পাইনি বা আমাকে অন্য কোনোভাবেও বোর্ড থেকে জানানো হয়নি।’
কী বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখাটা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে চালানো, এটার বিষয়ে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা জানতে চেয়েছেন। সাত কর্মদিবেসর মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একটা তদন্ত টিম এসেছিলেন।’
অধ্যক্ষ দাবি করে বলেন, ‘সাভার উপজেলায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে চলে। আমরা উপজেলা থেকে বই পাই। শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায়। এতদিন তো শিক্ষা বোর্ড আমাদের এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।’
উপবৃত্তির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা আবু তালেব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘উপবৃত্তির বিষয়টি আমরা দেখি না। ওইটা দেখেন মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষবোর্ড) ডিজি সাহেব। উপবৃত্তির বিষয়টি তো কলেজ পায় না, পায় স্টুডেন্টরা। স্টুডেন্টরা ভালো করলে তাদের তো কোনো দোষ নেই। আমরা তো স্টুডেন্টকে জিম্মি করতে পারি না, তাদের আমরা ডিপ্রাইভ (বঞ্চিত) করতে পারি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনুমোদন নেই এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
গত ২৫ জুন কলেজ মাঠে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে কিক্রেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু (১৯)। ২৭ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। ঘটনার চার দিন পর ২৮ জুন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ২৯ জুন রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হন জিতু।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ৫ জুলাই উজ্জ্বল হাজি ও ৬ জুলাই জিতু আদালতে শিক্ষক উৎপল কুমারকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।