নিজেদের বানানো উপকমিটি দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে রাতের বেলা ফল ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট বারের ৭৫ বছরের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে বলেও অভিযোগ তাদের। তাই আগামী ৫ মের মধ্যে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া ভোট পূনর্গণনা ও ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে অনুসন্ধান করারও দাবি তোলেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বারে ল’রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি জানান বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।
 
লিখিত বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফলাফল ঘোষণার মূর্হুতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে অনভিপ্রেত আচরণ করা হয়েছিল তার-ই ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য লঙ্ঘন করে নজিরবিহীনভাবে সন্ত্রাসী এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর মাধ্যমে বারের ৭৫ বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে এবং হাজার হাজার আইনজীবীর মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে। অবিলম্বে সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে এই অচলাবস্থা নিরসনের দাবি জানান তিনি।
 
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবদিন বলেন, রাতের আঁধারে যেভাবে ভোট কেটে নেওয়া হয়েছিল, এবার সেভাবে পুলিশ পাহারায় ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। তালা ভেঙে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার মতো এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় উচ্চ আদালত থেকে সুয়োমোটো রুল জারি করা উচিত ছিল। আগামী ৫ মের মধ্যে প্রধান বিচারপতির কাছে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। 

বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বাইরের ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন কালো কোট পরে এসেছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক করে নিজেদের মতো ফলাফল ঘোষণা করেছে। বিষয়টি একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূইয়া, সদস্যসচিব গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরীসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
 
প্রায় দেড় মাস পর বুধবার রাত ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে নতুন উপ কমিটি। যাতে সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী আব্দুন নূর দুলালকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তারা সম্মেলন কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সম্পাদক পদের ভোট গণনা করেন।
 
ভোট পুনরায় গণনার সময় বিএনিপর আইনজীবীরা কেউ ভেতরে উপস্থিত ছিলেননা। তবে তারা আওয়ামী সমর্থকদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপি সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী ওই কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
 
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২৩ সেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ ও ১৬ মার্চ। ভোট গণনা শেষে ১৭ মার্চ রাতে ফল ঘোষণা করতে গেলে দেখা যায় সম্পাদক পদে বিএনপির ব্যারিস্টার কাজল এগিয়ে রয়েছেন। এ সময় ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অভিযোগ নাকচ করে ফলাফল ঘোষণা করতে চাইলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ওই সময় আওয়ামী প্যানেলের আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। যা দীর্ঘ সময়েও নিষ্পত্তি হয়নি। পরে মঙ্গলবার আওয়ামীপন্থীরা নতুন করে নির্বাচন উপকমিটি গঠন করেন।