শহরের বর্জ্য অধিকাংশই সরানো হয়ে গেলেও বাতাসে এখনো তীব্র দুর্গন্ধ। রাস্তাঘাট, খোলা মাঠ থেকে ঘরের বেডরুম—সর্বত্রই নাকে আসছে উৎকট গন্ধ। এই থেকে বাঁচতে পরিবারসহ রাজধানীবাসী ভিড় করেছে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এ ছাড়া ঈদের পরদিন আজ সোমবার নভোথিয়েটার, হাতিরঝিল, রবীন্দ্রসরোবর, শিশুমেলা, চন্দ্রিমা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় দেখা গেছে। 

চিড়িয়াখানায় প্রথম ঘুরতে এসে শিশু নাহিয়ান খুব উচ্ছ্বসিত। নাহিয়ান বলে, ‘চিড়িয়াখানায় এসে বাঘ, হরিণ, সিংহ, বানর দেখেছি। এগুলো সব সময় ছবিতে দেখেছি। সামনাসামনি দেখে খুব ভালো লাগছে।’ 

মিরপুর থেকে সপরিবারে চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছেন পপি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে তো ঘুরতে যাওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই, তাই চিড়িয়াখানায় এসেছি। কিন্তু এখানে প্রাণীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। এদের দেখে মনে হচ্ছে খাঁচায় বন্দী না রেখে ছেড়ে দিলেই ভালো। টিকিটের দামও আজকে বেশি নিচ্ছে।’ 

উত্তরা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন রহমান পেয়ার। তিনি বলেন, ‘অন্য সময় তো অনেক জ্যাম থাকে, তাই পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়াটা একটু কঠিন। আজকে জ্যাম নেই, তাই চলে এসেছি, মাত্র আধা ঘণ্টা লেগেছে।’ 

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা হিয়া ইসলাম বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখনো দুর্গন্ধ। অনেক জায়গায় কোরবানির বর্জ্য এখনো সরানো হয়নি। তাই এখানে নির্মল পরিবেশে ঘুরতে আসা। আর যে পরিমাণ গরম পড়েছে। সব মিলিয়ে এখানে আসাটাই ভালো মনে হয়েছে। গাছপালা, পশু-পাখি দেখে সুন্দর দিন কেটেছে।’ 

চিড়িয়াখানার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আজ চিড়িয়াখানায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এসেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ রোজার ঈদের তুলনায় কম। সকালে কিছুটা ভিড় হয়েছিল। তবে ঈদের সময় এই ভিড়টা স্বাভাবিক।’ 

ঈদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা এবং প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টহল পুলিশ বৃদ্ধিসহ সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত খাবার, ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে।’ 

মজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের তেমন কোনো খাঁচা খালি নেই। প্রায় সব খাঁচায়ই প্রাণী আছে। দুপুরে অধিকাংশ প্রাণী বিশ্রাম নেয়। কিছু প্রাণী বেশি মানুষ দেখ আড়ালে গিয়ে থাকে। আর তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে।’ 

চিড়িয়াখানার পাশাপাশি ভিড় ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনেও। এ ছাড়া শিশুমেলায় পরিবার ও শিশুদের নিয়ে সময় কাটাতে এসেছেন অনেকেই। শিশুমেলায় ঘুরতে আসা সানোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই না। বাচ্চারাও তেমন কোথায় বের হতে পারে না। তাই তাদের এখানে নিয়ে এসেছি। ঈদের সময় একটু আনন্দ করল।’ 

বিকেলে হাতিরঝিলেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়। অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন এখানে। রামপুরার বাসিন্দা মরিয়ম হাফসা বলেন, ‘দূরে কোথায় যাওয়ার সময় নেই আর বন্ধুরাও সবাই আশপাশেই থাকে, তাই সবাই মিলে হাতিরঝিলে এসেছি। এখানে বিকেল-সন্ধ্যায় হাঁটতে, আড্ডা দিতে বেশ ভালো লাগে। আর এখন যেখানে যাই সেখানেই তো দুর্গন্ধ, এখানে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে।’