বন উজাড়ের পর এবার পাহাড় কেটে মাটি লুট

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ০৩

দেশের ১৯টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার শেখ জামাল ইনানী উদ্যান একটি। সরকার ২০১৯ সালে এই এলাকার ৭ হাজার ৮৫ হেক্টর সংরক্ষিত বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। সমুদ্রতীরঘেঁষা এই বনের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে উজাড় হয়ে গেছে। এখন গাছহীন পাহাড়গুলো কেটে মাটি ও বালু লুট করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। দিনরাত রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে পাহাড় কেটে ট্রাকে করে মাটি ও বালু পাচার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়ায় পাঁচ শতাধিক ডাম্পট্রাক রয়েছে। অনিবন্ধিত এসব ট্রাক পুলিশ ও প্রশাসনের কতিপয় সদস্যকে হাত করে সড়কে চলছে। এই গাড়িগুলোতে করেই প্রতিদিন সংরক্ষিত বনের পাহাড় এবং ঝিরি-ছড়ার বালু ও মাটি লুট করা হচ্ছে। বন বিভাগের তথ্যমতে, পাহাড় কেটে মাটি পাচারের সময় চলতি বছর ১৯টি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটিকে জরিমানা করা হয়েছে।

হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, উখিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদেরা ডাম্পট্রাকের মালিক। কম খরচে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে পাহাড়ের মাটি ও বালু লুট করে এসব অবৈধ গাড়িতে বহন করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে উপজেলা আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হলেও কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি।

গত ৩১ মার্চ ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় মাটি পাচারের খবর পেয়ে অভিযানে গিয়ে প্রাণ হারান বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০)। বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের দায়িত্বে থাকা সাজ্জাদকে পাহাড়খেকোরা ট্রাকচাপা দিয়ে খুন করে। তিনি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। এ ঘটনায় রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে পরদিন হত্যা মামলা করেন।

সহকর্মীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান গাজী শফিউল বলেন, সাজ্জাদ বন ও পাহাড় রক্ষায় রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করতেন। এতে পাহাড়খেকোদের কাছে তিনি শত্রু হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাহাড়খেকোরাই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল।

কক্সবাজারের বন ও পরিবেশের সংকট নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়, বন ও পাহাড়খেকোরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে যেভাবে পাহাড় কাটা ও দখল চলছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

বন কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সরোয়ার আলম। তিনি বলেন, অবৈধ ট্রাকের দৌরাত্ম্য ও পাহাড় কাটা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বন ও পাহাড় ধ্বংসে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা গেলেই এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, বন কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত